লেখক নয় , লেখাই মূলধন

ফ্র্যাঙ্ক ও’হারা-র গুচ্ছকবিতা

অনুবাদ: তিমিরকান্তি ঘোষ

কেন আমি একজন চিত্রশিল্পী নই

কেন আমি একজন চিত্রশিল্পী নই?
কেন আমি একজন কবি?
আমার মনে হয়
আমার চিত্রশিল্পী হওয়া উচিত ছিল
কিন্তু সে আর হল না!

একদিন
মাইক গোল্ডবার্গ একটা ছবি শুরু করল
আমি গেলাম
সে বলল— এসো এসো, বসো
তারপর দু-জনে মদ খেলাম একটু
ছবিটা দেখে আমি বললাম—
এটা সার্ডিন?
মাইক বলল— ছবিতে এটা খুব দরকার।
আমি মাঝে মাঝে যাই
দিনও চলে যায়
মাইকের ছবি আঁকা চলছে ক্রমশ
ছবিটি শেষ হল
আমি জিজ্ঞেস করলাম— সার্ডিন কোথায় গেল?
সে বলল— ওটার কোনো দরকার ছিল না!

কিন্তু আমার ক্ষেত্রে,
একদিন আমি একটি রং-এর কথা ভাবলাম
কমলা রং
এই কমলা রং নিয়ে শুরু করলাম একটা লাইন
আস্তে আস্তে সমস্ত সাদা পাতা ভরে উঠল অসংখ্য শব্দে
আরও আরও লিখে চলেছি
শুধু কমলা রং নয়,
কমলা রং আর ভয়ংকর জীবন নিয়ে।
যদিও গদ্যে লিখেছিলাম
তাও আমি একজন সত্যিকারের কবি
একদিন কবিতাটি শেষ হল
কবিতাটির মধ্যে কোথাও কমলা রং-এর উল্লেখও নেই
কবিতাটির নাম দিলাম কমলা।

একদিন একটি আর্টগ্যালারিতে গেলাম
দেখলাম সেই মাইকের ছবিটি
দেখলাম ছবিটির নাম সার্ডিন।

আত্মজীবনীমূলক সাহিত্য

আমি একা একা খেলতাম
আমার ইস্কুলের মাঠে

আমি ঘৃণা করতাম পুতুল
আমি অপচ্ছন্দ করতাম খেলাধুলো
পশুরা আমার বন্ধু ছিল না
পাখিরা উড়ে যেত আমাকে দেখেই

যদি কেউ আমাকে খুঁজত
আমি গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতাম
আর চিৎকার করে বলতাম—
আমি একজন অনাথ শিশু

এখন আমি
সমস্ত সৌন্দর্যের ভেতর থেকে
কবিতা লিখছি

ভাবা যায়!

বিষণ্ণ প্রাতরাশ

বিষণ্ন প্রাতরাশ
মাথার উপর নীল আকাশ
নীচে নীল সমুদ্র

নীরব ডিম ভাবছে
এবং বৈদ্যুতিক টোস্টারের
কান অপেক্ষায়

নক্ষত্ররা আকাশে লুকিয়ে

অবিশ্বাস করার মতো
অনেক কিছুই বেশ শক্তিশালী
এই সকালে।

বন্দর মাস্টারের প্রতি

আমি তোমার কাছে পৌঁছাতে চেয়েছিলাম; যদিও আমার জাহাজ আটকে পড়েছিল নোঙরে। আমি সবসময় বেঁধে রাখছি নিজেকে, এবং বিদায় নিতে চাইছি। ঝড়ে এবং সূর্যাস্তে, আমার অতল বাহুবন্ধে ঢেউয়ের ধাতব কয়েল, আমি আমার অহংকার বুঝতে পারি না অথবা আমি শক্ত হাতে ধরে আছি মসৃণ জাহাজের হাল এবং সূর্য ডুবে যাচ্ছে। আমি তোমাকে উপহার দেব আমার জাহাজের খোল আর আমার ইচ্ছার ছিন্নভিন্ন দড়ি। ভয়ংকর স্রোতের ভেতর বাতাস আমাকে বাদামি ঘাসের ঠোঁটের প্রতিকূলে নিয়ে যায়, যদিও তারা আমাকে অনুসরণ করে না। তবুও আমি আমার জাহাজের পবিত্রতা বজায় রাখি; এবং যদি জাহাজ ডুবে যায় তবে চিরন্তন আহ্বানের উত্তর দেওয়া ভালো, যে-ঢেউ আমাকে তোমার কাছে পৌঁছাতে বাধা দেয়।

আজ

আহা! ক্যাঙ্গারু, চুমকি, চকোলেট সোডা!
তোমরা সত্যিই সুন্দর! মুক্তো হারমোনিকা, কুলফল, অ্যাসপিরিন!
এ-সব জিনিস নিয়েই তারা কথা বলেছিল সবসময়।

এরপরও একটি কবিতা অবাক করে তোলে!
এই সমস্ত জিনিসগুলি আমাদের সঙ্গে প্রতিদিন থাকে বেলাভূমি ও শবদেহ বহনের গাড়িতে।
তাদেরও যুক্তি আছে, তারা পাথরের মতো কঠিন।

কবিতা

একটা চটজলদি কফি,
হালকা টক ক্রিম দেওয়া
এবং একটা অনেক দূরের ফোনকল
যা আর কাছে আসবে না মনে হয়।
ও! বাবা আমি অনেকদিন মাতাল হয়ে থাকতে চাই
একজন বন্ধুর নতুন কবিতায়
আমার জীবনে আমি দেখেছি অন্যের হাত
দেখেছি তাদের এবং আমার অসম্ভবতা
এটা কি ভালোবাসা, এখন যদিও প্রথম প্রেম মরে গেছে, সেখানে কি কোনো কিছু অসম্ভব নয়?

কবি পরিচিতি:
ফ্রান্সিস রাসেল ফ্র্যাঙ্ক ও’হারা জন্ম ২৭ মার্চ ১৯২৬ বাল্টিমোরে এবং ম্যাসাচুসেটসের গ্রাফটনে বড়ো হয়েছেন। ও’হারা একজন আমেরিকান লেখক, কবি এবং শিল্প সমালোচক। আধুনিক শিল্প যাদুঘরের কিউরেটর হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির শিল্প জগতে বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন। ও’হারা জাজ, পরাবাস্তববাদ, বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদ, অ্যাকশন পেইন্টিং এবং সমসাময়িক আভাঁ-গার্দ শিল্প আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হলেও তাঁর কবিতা ছিল অনেকটাই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাজাত। তাঁর কবিতা অতীতকে অনুসন্ধান করার চেয়ে নিউইয়র্ক কাটানো জীবন পর্যবেক্ষণ ভিত্তিতে লেখা। ফ্র্যাঙ্ক ও’হরার ‘নির্বাচিত কবিতা’ বই -এ পরিচিতিতে ডোনাল্ড অ্যালেন বলেছিলেন যে, “ফ্র্যাঙ্ক ও’হারা তাঁর কবিতাগুলিকে তাঁর জীবনের রেকর্ড হিসাবে ভাবার প্রবণতা দেখিয়েছিলেন, তাঁর বেশিরভাগ কাজের মধ্যেই এটি প্রতীয়মান।”
কার্লোস উইলিয়াম এবং সমকালীন কবিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। গান চিত্রকলা আর কবিতা মিশে যেত তাঁর কবিতায়। জন্মকাল থেকেই আমেরিকা যুদ্ধবিধ্বস্ত , এবং তিনি মারা গিয়েছিলেন এক সাবমেরিনে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ২৫ জুলাই ১৯৬৬।

Facebook Comments

পছন্দের বই