লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বহতা অংশুমালীর গুচ্ছকবিতা


ভালোবাসা একখানি সাফল্যের গল্প
নেশাড়ুর সঙ্গে এক
গঞ্জিকাজীবির লেনদেন
মাত্র তিনদিনে তার নেশা হয়েছিল
মাত্র তিনদিনে সে ব্যক্তিগত একান্ত আফিম
খুঁজে পেয়েছিল


দু’রকম কাজের ক্রাচ নিয়ে
মনখারাপ থেকে উঠে আসি
একটি সন্তান, আর একটি অমর হতে চাওয়া
অথচ মেঘের ওইপাশ থেকে যদি
হঠাৎ রোদের মতো টুক করে পিং করে দিতে
আমার নির্ঘাত পা বেরোত আবার
পা, না পাখনা, নাকি ডানা
নির্ভর করে তুমি এয়ারপোর্ট থেকে
না সুইমিংপুলের পাশে ভিজে হাতে মোবাইল আলগা ধরে আছ


মাছ খাই, মুরগি খাই, পাঁঠা খাই, ভেড়া ও শুয়োর
যদিও গরুর কালো সচেতন অসহায় চোখ
ভালোবাসি, মাংসাকারে পেলে
তাকেও ছাড়ি না
কেবল মৌমাছির মৃতদেহ আজো সহ্য হয় না আমার
আমাদের আপিসে সেদিন, ধোঁয়া দিয়েছিল
পালে পালে সানবাঁধা রাস্তা জুড়ে মৌমাছিগুলো
ছেড়েছুড়ে শুয়ে আছে
উপরে মধুর চাক
ভাঙা হচ্ছে সবিস্তারে
আমার ধাঁ ক’রে
নিজের সিন্দুক ঘর ভাণ্ডার…
আমার ধাঁ করে
কবিতা সমগ্র আর উঠোন পেয়ারা গাছ দরজা আগল
আমার ধাঁ করে
কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টো মনে পড়ে গেল!


আমি একটি খাবার যে ইচ্ছের আঁচেই তপ্ত হয়
লিখেছ সুন্দর চোখ, মারাত্মক হাসি
ম্যারিনেট হয়েছি তখনই
কথা বলতে বলতে কি যে সুগন্ধি ফোড়ন পড়েছে
তার একটা ঘন সবুজ জাপানি লংকার মতো
আর একটা দক্ষিণের পাথর ফুলের মশলা যে
তারপরে অস্ফুটে কি যেন বলেছ
নিজের সঙ্গে কথা
খিন্ন নীচু স্বরে বিছানায়
বলেছ কেমন জানি,
বলেছ মুশকিল এই—
রিনরিনে গলা শুনে মুখখানি দেখতে ইচ্ছে হয়!
ততক্ষণে সিজলিং গরম ব্রাউনির চুড়োটিতে, গলদোন্মুখ আইসক্রিম
ভীষণ তাপের লেনদেন
আর কি বিপুল স্রোত এদিকে সেদিকে!


নৈঃশব্দ্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন অনুবাদ
সময়ে সময়ে তার মানে বদলায়
ভোরের নরম আলো তাকে যদি মৃদুমন্দ করে
অস্তসূর্য মহুয়ার রং,
রক্তে যেন মাদকের নেশার মতন
তাকে চেপে ধরে।

নৈঃশব্দ্য এমন সুদোকু যাহার
বহুমাত্রা ছিল ।
অথচ আলস্য ভরে ভরোনি অনেকগুলি ঘর
যা চাই বসিয়ে নিতে নিতে দেখি মিলছে না
তোমার আমার সংখ্যা সরে গেছে কিছুক্ষণ পর

অলিন্দ নিলয়ে যদি রক্তোচ্ছ্বাস হয়
তোমার কথার জেরে, তোমার অস্ফুট ধ্বনি শুনে
যদি সিক্ত হই
তারপরে বড়ো রিক্ত হই
তারও পরে করে খুব ভয়
ঢেউহীন শব্দহীন সমুদ্রের মতো
স্বপ্নে চারদিক থেকে নৈঃশব্দ্য কেমন চেপে ধরে
যার কোনো শেষ নেই, কম্পাস নেই
কোন দিক দিশা নেই
অন্ধ নাবিক আমি
পাল তুলে বসে থাকি
নৈঃশব্দ্য বিথারে

Facebook Comments

পছন্দের বই