লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বেবী সাউয়ের গুচ্ছকবিতা

শিকার

দেখছি, ছিপ হাতে বসে আছে মৃত্যু…
জলের অপর নাম জীবন হলেও, মৃত্যু -ছায়া
সাঁতার কাটছে জলজ শহর জুড়ে…

বশ মানানোর জন্য দৃঢ় হচ্ছে ছল ও কপটতা
একটা নিপুণ কৌশল কার্যকরী করার উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পেতে
ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কয়েকশো উট এবং চাতকের চোখ
কেবল বঁড়শি হাতে যে পথিক একেকটি জীবন তুলে ধরার জন্য
আকুলতার সহিত কাটিয়ে দিল কয়েকটি মুহূর্ত
এবং অবশেষে উঠে এলো বিরাট শূন্যতা…

শূন্যতা আসলে তাই যে তোমাকে শেখাবে
ভাঙা পেনসিলে একটি গোলাকৃতি যথোপযুক্ত বাসগৃহের ছবি
অথচ ঠিকঠাক হবে না কিছুতেই…

***

স্বপ্ন

নির্জন এক দৃশ্যের দিকে হেঁটে যাচ্ছ তুমি

তোমার কুসুমপেলব ধ্বনি, ঘন ছায়াবন
সমস্ত উপকূলের দিকে মুখ করে বসে আছে…

শান্ত বনবীথিকার নীচে বসে আছে জন্ম জন্মান্তরের রহস্য ও তার আসবাব…
মাঝেমধ্যে তাতে ঘুণ লাগে,
মসের শরীরে তৈরি হয় সরু হাঁটাপথ…

যাওয়া-আসার এই পথে কান পেতে কে যে শব্দ ধরে! গন্ধ শোঁকে!
কে যেন উকুন বাছতে বাছতে ফেঁদে দেয় আস্ত এক রূপকথা…
এসব রূপের রাজ্যে দীর্ঘ হচ্ছে তোমার ছায়া, মায়া…

এখানে ততটা হত্যা নেই, যাতে ভীতিকর এই নির্জনতা এনে দিতে পারে হত্যাসফলতা…

***

মরুদ্যান

স্বপ্নের সরু পথ পেরিয়ে, কাঁটাময় শহর পেরিয়ে তোমার ঘুমের দিকে, অভিমানী, হেঁটে যাই…

ঝিঁঝিঁ ডাকে
তঞ্চক সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে প্রহর গুণি
লোমকূপে বাসা বাঁধে কালপেঁচা, সাপের খোলস…

এরকম স্বপ্নদৃশ্যে সন্তর্পণে ঢোকে বৈশাখের রাত
এপাশ ওপাশ করে, দুঃস্বপ্ন শোনাতে শোনাতে
তীব্র জলকষ্ট নিয়ে উঠে আসে রাজকুমারীর স্তন ও নাভি…

আমার লোলুপ দৃশ্যে
ধীরে ধীরে জমে ওঠে বাষ্প এবং হাওয়ার নিঃশ্বাস

***

অনন্ত

অথচ এরপরও দ্যাখো আশ্চর্যজনকভাবে তোমায় চেয়ে যাচ্ছি
নিজেকে নিঃশেষ করে যে অপাপবিদ্ধ খেলা
মৃত্যু সংলাপ নিয়ত কানে বাজে

এই চেতনাহীন কিম্বা নিরুত্তাপ হত্যা বলো
অথবা,
কোন চরণামৃতের রাসলীলা
যৌন নামক পাখি অনশ্বর প্রহরের হিসেব দিয়ে যায়
দিয়ে যায় ক্ষুধিত পাষাণের
অলিখিত কামসূত্রের যুগোপযোগী খেলা
আর এখানেই আশ্চর্য এক শীত

নিঃস্ব কান্নায় ঘাম ঝরে পড়ে
ছায়াপাতের অস্থির চুঁইয়ে পড়া লালার টুকরো

তোমার
জন্ম তৈরি হয়

***

মিথ

এই মাকড়সা তোমাকে শেখাবে
কোথায়, কখন, কীভাবে জেগে উঠতে পারে একটা নির্লিপ্ত জীবন

প্রবল আত্মহত্যাপ্রবণ এই অনুসন্ধানকারী এবং তার অনুসরণকারীর দল একে একে হেঁটে যাচ্ছে মরুভূমির দিকে

দীর্ঘ বেদুইন ও রমণীগণ এগিয়ে দিচ্ছে সুরা এবং পানপাত্র, কিছু সরীসৃপ ভাজা…
রাতের শীতল এই মরুভূমি জন্ম-মৃত্যুর ডাঙা-কুমীর খেলছে

পায়ে পায়ে ছুটে যাওয়া সেই মৃত্যুর দিকে প্রেমবশত চেয়ে থাকি
চেয়ে থাকি নীল চাঁদ, ভেঙে যাওয়া নিধুবনটির দিকে…

যেখানে অজ্ঞানতাবশত পড়ে রয়েছে কয়েকটি চুড়ি এবং সিঁদুরের ছেড়ে যাওয়া কৌটো…

Facebook Comments

পছন্দের বই