লেখক নয় , লেখাই মূলধন

রঞ্জন ভট্টাচার্যের কবিতা

একা

সীমা ছাড়িয়ে যাব একদিন। বুকে পেটে অদৃশ্য লাথি নিয়ে শুরু হলো ভোরের সমাবেশ। তোমার জীবনের সমস্ত দুর্বিপাক দুর্বিষহ আমাকে ঘিরে। অপেক্ষাক্লান্ত দিনের ঝুমঝুম শব্দে সন্ধ্যে নামে। জমি দখলের ধুন্ধুমার ইতিহাস বুকে পুতুলের বিয়ে। কালো সুঠাম দেহি অসুরের কাছে ক্ষমা চাইতে পারবে ওগো ছলনার দেবী! মানুষের পেটের কাছে, দলিত গর্ভবতী বোনের কাছে, বিকৃত ইতিহাসের কাছে, দুই বন্ধুর দেখা স্বপ্নের কাছে একবার ক্ষমা চাইতে পারবে! আমি জাগ্রত দেবতা দেখেছি। দেখেছি তার প্রাণপণ জীবনের ঢেউ। পুরোহিতের দেখেছি কাদামাখা থ্যাবড়ানো পা। সামান্য দক্ষিনার অভাবে আত্মঘাতী সে। সে মৃত্যুতে উঠোন জুড়ে কান্না নেই। দু-তরফে আকাশ চমকানো অট্টহাসির উদ্রেক আছে। এসব তুমি দেখোনি কখনো। তুমি ষাট কেজি সোনা দিয়ে বানানো প্রতিমা। বিশ্বাস করো কেউ তোমাকে দেখেনি। কিছু সোনার মণ্ড চেয়েছে। বাড়ি ফিরে লটারি কিনেছে পুকুর বুজিয়ে। এসব খবর তুমি কোথাও পাবে না। ফিরে এসো প্রাণ দাও প্রাণ নাও শুরু করি প্রাণের খেলা।

আমি ছাড়া তুমি আর কাউকে পাবে না।

কুকুরের নেকলেস

এই সঙ্কটে আশ্চর্য সমতল পথ চাই না। সাময়িক একলা সুখের অংশীদার হতে চাই না। ক্রমবর্ধমান উত্তাপে হাঁসফাঁস করছে ভেজা জামা। নেতিয়ে পড়েছে জামার কলার। আমি ল্যংটো হয়ে দাপাচ্ছি। লজ্জা তোমার সোনার দোকানের শানানো হাওয়ার কাছে বন্ধক রেখেছি। তোমার শোয়েটার আমার পোঁদে লাথি মারছে রোজ। তুমি পাণ্ডিত্যের দাম পাচ্ছ। আমার হাভাতে সন্তান জীবনের দাম কুড়োচ্ছে। তোমার সোনার বাংলা আমার মায়ের বানানো কাঠগড়া থেকে আজও নামতেই পারল না। এই জীবন জ্বালানো গরমে তোমার শীত করছে জেনে ভালো লাগল। তোমার শিশু পুত্র ধুলো ঘাটতে জানে না জেনে আশ্চর্য হইনি। সে তোমার জীবন থেকে আর ধুলো পাবে না কোনদিন। দয়া করে আমাকে তোমার বোটকা পোঁদ থেকে খানিক গরম হাওয়া দাও। সে তো তুমি দেবেই! এমনি তো আর দিচ্ছ না! পাণ্ডিত্য দিয়ে কেনা ঠান্ডা হাওয়ার বদলে দিচ্ছ। আশ্চর্য চিত্রনাট্য। বড্ড কমেডি করলে একটা জীবন জুড়ে। অথচ এই জীবন জ্বালানো গরমে আমার সন্তান হাসতে ভুলে গেছে। লোকে বলে যেমনি বাপ তেমনিই তো হবে, শালা আকাট মুর্খ বটে।

তিড়িংবিড়ং

এই টাকার রাজ্যে আবার একটা শিশু দেখা গেল। খালি গায়ে তিরিংবিরিং করছে। ও একটা পথ দেখাল দুম করে। আর কিছু দিন অপেক্ষা করতে বলল। ও খেলতে খেলতে একদিন আমার দাবি আদায় করে দিল, তারপর খেলতে খেলতে হাওয়া হয়ে গেল। আমার ধন্যবাদ সে প্রত্যাশা করে না। আমাকে সময় দেয় না, মুখোমুখি ধন্যবাদ বিনিময়ের। বাকিটা জীবন আমি তার অপেক্ষায়। আমার ধন্যবাদ পুষ্টিকর ভাতের থালা ভিজিয়ে দেয়। ততক্ষণে সে অন্য পাড়ায় অন্য কিছু কাজে। বছরের পর বছর সে তিরিংবিরিং করবে এই তার পণ। গান গায় ছড়া কাটে হাসাহাসি করে। বয়স সম্পর্কে তার ধারণা থাকে না। নিজের খাবার জোগাড় করতে পারে না। তবু সে তিড়িংবিড়ং
করে যায়। আমারও ইচ্ছে করে তার মতো হতে। তিড়িংবিড়ং করতে। নিশ্চিন্তে ভাত খেতে খেতে রোজ ভাবি কাল থেকে কাল থেকে! সেও পাগল আজও আমার অপেক্ষায় বসে আছে। আমাকে নিয়ে অন্য কারো কাছে যাবে অন্য কিছু ভাববে।

কিন্তু আজও সে একা একা তিড়িংবিড়ং করছে আর আমার পথ চেয়ে আছে তবুও তিড়িংবিড়ং থামাচ্ছে না।

অন্ধকার থেকে বলছি

বাংলায় আজ উৎসব হোক সরাসরি
ভর সন্ধাবেলায় কোর্ট প্যান্ট পরে
কুকুরের মতো গুটিয়ে পড়ে থাকতে চাই
পাতা পড়ার শব্দে হৃদয় কাঁপুক না কাঁপুক

আলো জ্বলবে আকাশ অন্ধকার কোরে
বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে শব্দ বাজিতে জেগে উঠবে চরাচর
যারা সহ্য করতে পারবে না
আমার ঘরে এসো

আমার একটা ঘর আছে— আলো নেই


দাস ব্যবস্থার দূরবর্তী লোকালয়ে যে বাস করে
যার মগজে প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণ ঘটে
তাকে আমি সেলাম জানাই

সংক্রমণের প্রতিষেধক যে আবিষ্কার করেছে
সংক্রমণকে রুখে দেওয়ার জন্য
যে ঘুম থেকে উঠে
হাঁপানির টান নিয়ে পথে নামে
সে আমার পিতা

তার জন্য এ জীবনে একটা ব্যারিকেড আছে
যা জীবন দিয়ে তৈরী

Facebook Comments

পছন্দের বই