লেখক নয় , লেখাই মূলধন

শুভ্র সরকারের কবিতা

ওয়াসিফা জাফর অদ্রি

কেটে রাখা ধানের পাশে চুপ
রোদে পোড়া দুপুর একা একা
অকপট তোমার ধোয়ামুখ
গামছার মনের পাশে রাখা
চমকানো বুকের তিল শোনে
আয়াতুল কুরসি দিনমান
পাঁচিলের ফসকে যাওয়া পা
পরানে জেগে ওঠে শমশান

শোনা কথা ব্যথার সাবলীল
পরিণত ভুলের যতো ঋণ
কোমরের সুতোয় ফুটে আছি
আমি যেন ফুলের শ্রীহীন
প্রশ্নের অদূরে পুড়ে যাই
মচকানো ফুলের বিব্রত
অবহেলা ভাষার অনায়াস
ভেজাচোখ শুকিয়ে আছে ক্ষত

উলটানো তেলের কৌটো দেখো
তোমাকেও শোনায় দুকথা
কাটাদাগ আমিও তো হাতের
যেন কেউ রেখে গেছে অযথা
অন্ধ দরজার পাশে তুমি
ফাঁস দেয়া দড়ির বেদনায়
সমস্ত ব্যথার থেকে কাছে
বৃষ্টিও সহজ ঝরে যায়

মাঝনদী অবাক তিস্তার
প্রেম এমন জলের করুণা
বিড়ালের পায়ের চেনরম
বিঁধে থাকা কাঁটার যন্ত্রণা
বঁড়শিতে আহত নির্জন
মাছেদের আয়ুটুকু নদীর!
ভাঙা মন অধীর ডাকে নাম
ওয়াসিফা জাফর অদ্রির

আমার ধর্ম দেয়নি, তোমারে পাবার কশিস


হাওয়ার মনে ভেসে ওঠা সন্ধ্যার নত মুখে
মেঘ যেন কৃষাণীর ব্লাউজের মতো ঢিলেঢালা
কাটা ধান কাঁখে সে কি তোমার মনের কথা জানে!
নিজেকে যেভাবে গাঁথো তুমি বাঁধুলি ফুলের মালা
পাখির নিয়ত ভেঙে ভোরের আযান অনায়াসে
ঝাড়ু দিয়ে পরানের কোণে জড়ো করে রাখে রোদ
প্রেমিকের দোষ মেনে তারে দাও বুকের শরম
চিঠির গরিমা জানি, তুমি পিয়নের প্রতিশোধ
কলিজার আড়পার তবে কেন আমার বিরহে?
ধানের কপাল পুড়ে কেন লাল বধূয়ার শাড়ি?
কেন শিশুটিও কাঁদে দাঁত চেপে মায়ের স্তনে?
অন্ধ ভিখারিটিও একা চিনে ফিরে যায় বাড়ি!
বিষণ্ণ তুমি কি বাচ্চা মেয়েটির ভাঙা দাঁত?
মহীরুহ কানে কানে চলে যাওয়া পাখির শিস
আসমান খুঁড়ে খুঁজে পাইনি খোদার তকদির
আমার ধর্ম দেয়নি তোমারে পাবার কশিস
তবু কবরে নামানো লাশের মুখটি শেষবার
দেখার মতন করে তোমারেই দেখি প্রতিবার


অদূরে হাঁসের বাচ্চাটি ভিজছে মায়ের পাশে
মানতের সুরে তারে বুকে রাখো শান্ত সূরার
ঝিঁঝিঁর ডাকের মতো বর্ষায় কোনকালে যদি
শাড়ির কায়দা থেকে উড়ে যায় পরান আমার
বুকের তিলটি নিও তুমি ঠোঁটের আরশে তুলে
কোমরের বাঁকে বেঁধে রাখো নুহু নবীর নৌকাটি
মহিষের কুঁজে পাখি নাকে জিরিয়ে নেওয়া ঘাম
বুকের মাজারে সেজদা করি প্রিয় সোনার বাটি
তোমাকে খুঁজি কুরআন তেলায়তে, খুঁজি গীতায়
চন্দন কাঠ হয়ে তুমি ওঠো আমার চিতায়
কলতলার ব্যথায় শুকিয়ে আছে জলের মুখ
হাতের বালায় বাজে দরদ ভরা মন তিস্তার
বঁড়শিতে ধরা পড়া মাছের শেষ ইচ্ছা মতো
পোষা বিড়ালের মোনাজাত পাতে তুলে দিও তার
মূর্খের যুক্তির পাশে দাঁড়ানো এদিনগুলো
দেখিনি তোমার মুখ, বুকে পুষি অজস্র ক্ষত
বৃষ্টির ছাঁটে দেখো ভেজে মিরজাফরের মন
পূরবী রাগে আমি অস্ত যাই সিরাজের মতো

তোমার দিকে মেঘ ঠেলে দিই

দাবার বোর্ডে, ঘোড়ার সামনে ঘাসের জীবন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমি— অশেষ এক বোড়ে। যতোটা উপেক্ষার শেষে, মেঘও কোন ট্রেনের হুইসেল, আমি ঠিক অতোটা দূর। নিচু চাঁদ ধরতে— কুয়োয় ছিপ ফেলে আকাশ এক ব্যর্থ ছাদ মাত্র।

সামান্য জল সে আটকাতে পারেনি। আমি তোমাকে কী আটকাবো, বলো!

আলপিনে গেঁথে রাখা কাগজের ওড়ার সমস্ত স্পর্ধা নিয়ে, আমি তবু তোমার কাছে কাছে রয়ে যাই।

অথচ ছায়াদেরও তো ফোঁড়ার মতো টনটনে রোদে, জলতেষ্টা পেলে মানুষকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে ছেড়ে যাওয়া পাতার বিরহে, অনাথের মুখের সমস্ত মায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের বুকে, কুঠার হয়ে নেমে আসতে। এই যেমন নেমে আসা ছুরির নীচে, ফলের দুরুদুরু বুকে দোয়া পড়ে, তুমি ফুঁ দাও।

তবু আমি তোমাকে, কথা বলি; আর কিছু বলি না—
(কবিতাটির নাম ওয়াসিফা জাফর অদ্রির একটি কবিতা থেকে নে’য়া)

Facebook Comments

পছন্দের বই