লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সৌরভ বর্ধনের কবিতা

পরিক্রমণ

বীরুৎ বনের গ্রন্থি খুলে সারারাত
পুঞ্জ পুঞ্জ হাড় গিঁথে যায় উর্ধ্বশ্বাসে।
রোঁয়া ওঠা ফুলের কেশরে ডিঙা বাঁধে সাপ
ও মধুকর বনিক সকল, কিলবিল—

মুখোমুখি চেয়েছ যারে— ধু ধু শান্ত এখন
আবক্ষ কামিনীর গায়ে গনগনে স্বস্তি।
উথোলি-পাথালি দহন ফুরিয়ে
গৃহিণীর ফোসকার জল— বীজপ্রাণ।

হুঁশ নেই একগলা গানের সমান রতি
অঞ্জলি দিয়ে শুয়ে আছি উন্মাদ;
মন্ত্রপূত বীর্যে কোল ভিজে যায় যার
যার চাপচাপ অন্ধকার রোমাঞ্চ তোলে পদ্মে।
ডিভাইডারে ধাক্কা খাওয়া যতটুকু প্রবোধ
ধরা যায় আলেখ্যে, ততটুকু চিকচিক
বিছানায়, লতায়পাতায়, ব্রহ্মকুঞ্জে।
কালজ্ঞানঋদ্ধ ভোজের মতো মনে ওড়ে ফানুস।

ফূর্তির স্ফটিক কাঁপে
আঁধির কবল থেকে মুক্ত হয় ব্যারিকেড।
বোবাফুল। দাবনা লাগানো এই মূর্তি —
ভাঙো ভাঙো— এ ঘুমঘোর
ভেঙে ফেল ছারখার, জাল কাটো।

জাপটে ধরেছে সর্বাঙ্গ, ঝিলমিল অঙ্গরাগে।
আর্দ্র তাপে আদিম চুলের লোভ, দগদগে লালা—
ঘেরাটোপ চেপে বেরিয়ে আসে পর্যটক।

তাম্রকাণ্ডের জ্যালজেলে সফেন নয়
পোড়খাওয়া নাগরের পুচ্ছ;
একেকবার ভাপ ওঠে, ছায়াধরা রাজনীতি
নিরামিষ মাসিকের অবয়ব যেন!
আরও হর্ষ বর্ধন করে রোম
পায় অন্তিম কোনো পটের টান। তার হাতে
গাছ জন্মায়— মৃন্ময়ী না চিন্ময়ী এ ঝাপট্!
এ হেন রক্তের কামেচ্ছা কার ধাপে
ধাপ কেটে চলে আবাদ ও ওড়াউড়ির কৃষিকাজ।

সোনার চুড়ো দুই বুকে
হিমকুচি পেটের তলদেশ। মুঠোমাপা দুধ।
আগাছা সরিয়ে শনশন হাত বয়
পায়ে পায়ে দলে যায় খুন!

বৃক্ষ— প্রথম আদি তব শক্তি।
মনোলোভা ছায়ার ভেতর যুগ সার্ফিং চলে…
স্বর্গীয় দমকা ও আভরন চেয়েছে ধূম,
শিককাবাবের ফোয়ারা যেমন চায়
মুহূর্ত আস্বাদে ধরা দেয় মীন
ও ট্রাইপোফোবিয়ার ভক্ত। শ্যাওলা পাতায় ঢেউ।
উচ্ছেচাতালের নীচে ঠাঁই ভিজে গেছে
ডানাওয়ালা কুবোর ভ্রান্ত খয়েরি রঙের শীৎকার।

কায়ারূপ ভেঙে ফেল। মুকুরের কাজল
ফুটোর কোটরে জিভকাটা রক্তের স্রোতা
সামলাও ভাষাহারা যুগল-প্রাণ।
কোন কলরোলে ভেসে গেলো গো—
কামরূপ সরষের ভেতর দেখে ভূত।

দ্বীপমুখে যে বনের আবাস দ্যাখা যায়
তার রাঢ় মুখমণ্ডলে স্থলোচ্ছ্বাস!
জীবন-প্যাঁটরা ভারী করে নুন
এখন লোহিত স্নান। নির্যাস সুখ— নেশা।
মেরুত্বকের দোচালা ঘাস
কড়া নাড়ে ভোর ও হালে পানি পাওয়া জল:

সে খুলে দেয় কুমারী দরজা
খুব সাবলীল মনে হলে— লাক্ষা কাজল তার।
আপনার বুকের ঢিপঢিপ তরঙ্গ
তোলে পাল। পাল তোলে ঘোর কাপালিক সাধ।

প্রবাল পিস্তল থেকে ছুটে যাবে গোরাগাঙনি
সম্বৎসর দাঁতে দাঁত রেখে গাঁথা মাছের ঘাম।
এই পাটাতন পুতুল মোহর জহরত
শোকের হরফ দেখে পূরণ— হবে দলমাদল।
সারাগাঁয়ে শিরশির করে উঠবে আগুন
লাভামুখ কার ঠোঁটে গোঁজা?

প্রতিশোক অহংকারের দোসর; বিন্দুর বিস্ময়!

ভিজে পাথরের চলটা তোলা হচ্ছে
অভ্রের অতিকায় আকরিক
ধ্রুব দিকরেখা। যন্ত্রপূত পাল তুলে
নদ— এক সীমাহীন হাহুতাশ!

লাল ডাঁশের বদলে ঝিনুক
বুকভাঙা কামনায় ফেনিল সাগরে।

পায়ের নুপূর খুলে এসো মদ
হাতের মরাপাখিটিকে আপাতত বালিয়াড়ি।
ছলছল নিতম্ব-তালে দোলা দেয় জ্যোতিষ্ক
তার রূপ আকিঞ্চনে ঝরে যায় দুঃস্মৃতি।
বঁড়শি হাতে পেলে সে
জলাঞ্জলি সংসার
সমুদ্রঝাপ নদীর চঞ্চল হাড়ে হাড়ে। আলিঙ্গন।
ঝাউয়ের বালিশ টেনে জানুবাঁধে রাখি যোনি।
টলটলে দ্বীপের আলোয়
আর যেটুকু দম, এই বঙ্গাব্দে তা শুভ হোক।

Facebook Comments

পছন্দের বই