লেখক নয় , লেখাই মূলধন

হাবিব টেঙ্গুরের কবিতা

ভাষান্তর : রূপক বর্ধন রায়

মৃতদেহের দেশে
[In the Country of the Dead]

ছায়া ১
[Shadows 1]

এইসব মৃত

আমাদের মধ্যে কে এদের প্রশ্ন করবে

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ রাস্তাটা খুঁজে পেতে
তবে কি আবারও
গণহত্যা আর কান্নার প্রয়োজন

যদি না ঢুকে আসা এই হাওয়া সেই বিন্দু অবধি
আমাদের যুক্তি-বুদ্ধিতে ফাটল ধরায়

যখন আমরা এই সাক্ষাতের পরোয়া করি না

ছায়া ২
[Shadows 2]

এইসব মৃত
এই বৃত্তে তবে কোন নামগুলোর ডাক পড়বে

বিচ্ছেদ তাড়নায় প্রার্থনারত প্রসৃত হাত
তবে অনিচ্ছাকৃত

আগের মতো আমরা আর বিলাপ করি না

রোজ এত মানুষ মরে বলে আমাদের হৃদয়
বিষাদ নথিভুক্ত করতে অস্বীকার করে

এটা কি একটা রূপান্তর

ছায়া ৩
[Shadows 3]

এইসব মৃত
যাদের আমরা কখনো দেখি না
মৃত্যু কি ওদের ভবিতব্যের অঙ্গ ছিল

নারী শিশু যুবক বৃদ্ধ আর সৈন্য
বেচারী এলপেনোরের মতো অনেকেই
নিজের ভারটুকুও সামলাতে পারে না

“সেন্সর” সত্ত্বেও খবরের কাগজগুলো ওদের জন্য
এক-আধটা “কলাম” বরাদ্দ করে

আমরা বলি ওরা অসংখ্য তাই আমরা ওদের ভুলে যাই

ছায়া ১০
[Shadows 10]

এইসব মৃত
যারা আমাদের জীবন থেকে ধীরে সুস্থে সরে পড়ে
এই এত সময়ে আমরা ওদের জন্য কী নির্দিষ্ট করেছি
কবিতাটার জন্ম দিতে “অতি-সুস্পষ্ট” কিছু শব্দ
অনুতাপে অথবা সেই ভয়ে প্রত্যাহত শব্দ
আমাদের চোখের সামনে নিলম্বিত
সময় সুচনার সেই প্রাচীন শ্রুতির কথা অনুযায়ী
যে-সব শব্দের ব্যাবহার আমাদের কাছে অস্পষ্ট হয়ে যায়
আমরা মাঝেমধ্যে উৎসব নিয়ে নিজেদের প্রশ্ন করি
তাদের জলুস স্মৃতির প্রতি আমাদের আশ্চর্য বাসনাকে আলোকিত করতে ব্যর্থ হয়

একটি অনুপস্থিতির উল্লাস
[Celebration of the Absent One]

আলজেরিয়া
যার বহমান পবিত্রতা
একটা কালো দশক/রক্তক্ষরণের বছরগুলোর
পথপ্রদর্শক আলজেরিয়া, সেই শুভ্র অট্টালিকা
কর্জ করা আটো-সাটো সুট গায়ে পিতৃতন্ত্রের উগ্র অভ্যর্থনা
যার অবগত ছিল উত্তরণের আচরণ নীতি
প্রতিষ্ঠানের প্রখর দমন
আগমন ও প্রস্থান দুই-ই দুর্দশার

অধৈর্য রক্তাভ অভিলাষ এই উজ্জ্বল সাক্ষাৎ
অতিক্রমী উট
অস্থির বাঁচতে চায়

ঝগড়া আর ফ্যান্টাসিয়া একটা স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে
একটা উগ্র বর্ণনায় তোমার লিপ্যন্তর ঘটে
গণহত্যার টুকরো কাপড় থেকেই
বুনে ফেলো গল্পের জলুস

আব্দেলকাদের প্লাসে-দে-আর্মসে গর্জনরত
রঙ্গমঞ্চটা মুক্ত খোলা
সেই সমস্ত মৃতদেহের ক্রমান্বয়ে আমাদের ডেকে চলায়
সাদা হয়ে যাওয়া ছায়া-রাজত্বের কোনো স্বাদ নেই

বিশ্রাম নাও তুমিও
শান্তিতে ফিরে যাও, হে মর্ম
পিতৃগৃহ একটা জলজ্যান্ত ভাষা
বহমান অতিথির জন্য উন্মোচিত

জলের ধারে
[At The Water’s Edge]

সমুদ্র, তুমি একটা শব্দের খোঁজে তার
দিকে তাকাও
ঢেউ প্রবাল প্রাচীরে ধাক্কা দেয়

তুমি ধার থেকে সরে এসো
জুতো ভিজিয়ে ফেলো না

সমূদ্রের জল চামড়া নষ্ট করে
তোমার নতুন জুতোর অবস্থা তোমাকে চিন্তিত করে
ফেনার সাথে পিছলে বয়ে যাওয়া প্রায়
সেই শব্দের মতোই

সমুদ্রের বিরাট ব্যাপ্তি গিলে খায় তোমার চোখ
আর তোমার তৃপ্তি হয়
হয়তো জলের ছাট বা ফাটলের জন্য
একটু অস্বস্তি
তুমি হাঁটতে যাওয়ার জন্য একেবারেই প্রস্তুত নও…

কবি পরিচিতি:

টেঙ্গুর সমসাময়িক মাগ্রেবীয় কবিদের অন্যতম। ওঁর লেখায় ধরা পড়ে ঔপনিবেশিকতা এবং আলজেরিয়ার মানুষদের যাযাবরস্থানীয় পরিস্থিতি। হাবিবের বাবা সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। পুলিশি অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে পাঁচ বছরের হাবিবকে নিয়ে তার পরিবার ফ্রান্সে পালিয়ে আসেন। পড়াশোনার শেষ করে টেঙ্গুর আলজেরিয়ায় ফিরে যান বাধ্যতামূলক জাতীয় সেবার কাজে। নৃতত্ত্ব এবং সমাজবিজ্ঞানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাবিব লিখেছেন পনেরোটিরও বেশি বই।

হাবিব টেঙ্গুরের লেখায় বারবার উঠে এসেছে “আইডেন্টিটি ইসুস” এবং “প্রথাগত ফরাসি লিরিকাল ফর্মের বাইয়ে বেরিয়ে উদ্ভাবনী আখ্যান রচনার প্রচেষ্টা”। ২০১৬ সালে পেয়েছেন “দান্তে ইউরোপিয়ান পোয়েট্রি প্রাইজ”।

সুপ্রসিদ্ধ কাজ:

Tapapaktaques, la poésie-île, 1976;

La Nacre à l’âme, 1981;

Schistes et Tahmad II, 1983;

Sultan Galiev, ou la rupture de stocks, 1985;

L’Épreuve de l’Arc, 1990.

 

ইংরেজি: Crossings (The Post-Apollo Press, 2013), অনুবাদ: Marilyn Hacker,

“Exile is My Trade”;

The Habib Tengour Reader (Black Widow, 2012), সম্পাদনা ও অনুবাদ: Pierre Joris;
এছাড়াও হাবিব আলজায়ার্সে “এপিক” প্রকাশিত “পোয়েমস অফ দা ওয়ার্ল্ড” সিরিজটির নির্দেশনা করেন।

 

Facebook Comments

পছন্দের বই