লেখক নয় , লেখাই মূলধন

পার্থজিৎ চন্দের ধারাবাহিক গদ্য: সোনালি, হরিণ-শস্য

একাদশ পর্ব

হেমন্তের দিনে নস্টালজিয়া

হেমন্তের বিষাদের দিকে তাকিয়ে আমার বারবার একটি ট্র্যাজেডির কথা মনে হয়, আমাদের চেনা চারপাশ থেকে অনেক দূরে আধো-আলো আধো-অন্ধকারে হিমে-ভেজা এরিনায় অভিনীত হয়ে চলেছে সেই নাটক। ক্যাথারসিসের নীলাভ আলো মেখে একা বাড়ি ফিরে আসছে দর্শক।

আমি সে-নাটক কোনোদিন দেখিনি, কিন্তু তার প্রতিটি সংলাপ প্রত্যেক কুশীলব, তাদের পোশাক ও কণ্ঠস্বর আমার চেনা।

মাঝে মাঝে সেই ট্র্যাজেডির শূন্য এরিনায় ঘুরে ঘুরে ঝরে পড়ে শুকনো হলুদপাতা। হেমন্তের দিনে হলুদপাতার ঝরে পড়া, তার মাটির উপর লুটিয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পাই আমি।

আজ সেই এরিনা আলো করে বসেছিলেন কাহলিল জিব্রান, তাঁর একপাশে খোলা পড়ে রয়েছে সেই মহাগ্রন্থ ‘দ্য প্রফেট’। এই গ্রন্থের যে কোনো একটি পৃষ্ঠা খুলেই বসে পড়া যায়, নির্জনতার মধ্যে ডুবে যেতে যেতে আবিষ্কার করা যায় এই জীবন ঘিরে রয়েছে এক অনন্ত সম্ভার। এমনকি হেমন্তের একটি হলুদপাতাও এ জীবনের সামনে তুলে ধরতে পারে এক শাশ্বতকে। জিব্রানের অনেক পঙতিই স্নায়ুর ভেতর প্রবেশ করে খোদিত হয়ে গেছে। তবু যতবার এই গ্রন্থ খুলে বসি আবিষ্কারের আনন্দ আর বিস্ময় পাই, যেমন আজও পেলাম। জিব্রান লিখছেন, ‘And a single leaf turns not yellow but with the silent knowledge of the whole tree…’

ক্রমশ হলুদ হয়ে একের পর এক পাতা ঝরে পড়ছে, মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে মৃত্যুর সঙ্গে। কিন্তু সব পাতাই বহন করছে বৃক্ষের যাবতীয় অভিজ্ঞতা… গাছ তার প্রতিটি পাতায় ছড়িয়ে দিয়েছে নিজেকে। প্রতিটি পাতাও বহন করছে সেই গাছকেই। মাইক্রো ও ম্যাক্রোর এই নীরব অথচ অনিবার্য যাতায়াতের মধ্যে ফুটে ওঠে হেমন্তের দিন।

হেমন্ত এলে আমার বারবার মনে হয়, আমি কি এক অভিশপ্ত জাতক-স্মৃতিকে বহন করে চলেছি?

স্মৃতির ভেতর উঁকি মারে ঢেউয়ের মতো টিলা, কেঁদ মহুয়া শাল আর আমলকিবনের ঘন ছায়া পড়ে আছে টিলার বুকে। শেষ-বিকেলের রোদ গড়িয়ে পড়ছে টিলার গা-বেয়ে। দূরে বনের ওপারে যেন, মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে পঞ্চাশ বা ষাট-দশকের রেলের হুইসেল। ভুসভুস করে ধোঁয়া ছেড়ে সেদিনের মতো চলে যাচ্ছে মিটারগেজ লাইনের শেষ ট্রেন। আমলকিবনের কাঁপন আর তার তার বুকে ঘনিয়ে ওঠা ‘দুরুদুরু’ শোনা যাবে হয়তো কান পাতলেই।

হেমন্তের বিকেলে আমার সারা-জীবনের ঘুরে-বেড়িয়ে ফেরা জায়গাগুলির দিকে চোখ ফেরাই। এমন কোনো জায়গায় জীবনে কখনো যাইনি আমি, কিন্তু এই ছবিটি আমার কাছে অতি-বাস্তব। আমার ছোট্ট মফসসলের ছোট্ট স্টেশনের মতোই অতিচেনা ও অতিবাস্তব।

এই স্মৃতিটিকে আমি বহুবার চারাগাছের মতো উপড়ে ফেলতে চেয়েছি, পারিনি। চারাগাছটিতে টান দিয়েই বুঝেছি, আসলে যতটা কল্পিত গভীরতা, তার থেকেও বেশি গভীরে ছড়িয়ে গেছে এ-স্মৃতির শিকড়।

সব মহৎ লেখারই এক বিশেষ গুণ থাকে, সে-লেখার ভিতর জন্ম নেওয়া আলো তার টেক্সটের সীমানা ছাড়িয়ে অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জিব্রান লিখেছিলেন, ‘you are the way and the wayfarers…’, তুমিই পথ, তুমিই পথিক।

অপরাধ ও তার শাস্তি প্রসঙ্গে এ-কথা লিখেছিলেন জিব্রান, কিন্তু সে-কথা তার সীমানা ছাড়িয়ে হয়ে উঠল এক জীবন সত্য। পথই যখন পথিক, বা পথিকই যখন ধীরে ধীরে পথ হয়ে ওঠে তখনই দু-জনের সার্থকতা।

আমার স্মৃতির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবি, আমিই কি আমার স্মৃতির জন্মদাতা? নাকি, আমার স্মৃতিই আমাকে প্রতিনিয়ত প্রসব করে চলেছে?


হেমন্তের যে-টিলা আর অরণ্যকে আমি দেখতে পাই তা আমার lived experience-এর বাইরে, এক নির্মিত নস্টালজিয়া। আমার ছোটোবেলা কেটেছিল বাবার মুখে দিনের পর দিন হাজারিবাগের গল্প শুনে। সেই গল্পই ধীরে ধীরে স্নায়ুর মধ্যে প্রবেশ করেছে, গড়ে তুলেছে তার নিজস্ব সৌধ।

নস্টালজিয়া স্মৃতি কী যে আশ্চর্যভাবে কাজ করে যায় সে নিয়ে শ্বেতলানা বয়েমের একটি মহাগ্রন্থ আছে, ‘দ্য ফিউচার অফ নস্টালজিয়া’। শুধু ব্যক্তিমানুষের ক্ষেত্রেই নয়, নস্টালজিয়া পপুলার কালচারের নির্মানেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্বেতলানা উদাহরণের পর উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সেটি।

শ্বেতলানার একটি পর্যবেক্ষণ দেখে স্তম্ভিত হয়ে চুপ করে থেকেছিলাম বেশ কিছুটা সময়, শ্বেতলানা লিখছেন, ‘We are approaching to New Middle Ages (or Pre-historic age) with upto date technologies.’

আমরা আমাদের সব উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে দিনের পর দিন এক প্রাগৈতিহাসিক যুগের মধ্যে প্রবেশ করছি।

শ্বেতলানা দেখিয়েছেন, এই প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রবেশ করবার পথ ধরেই আমেরিকার পপুলার কালচার আমাদের উপহার দিয়েছে ‘জুরাসিক পার্ক।’ শ্বেতলানা এটিকে জুরাসিক পার্ক সিনড্রোম হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। আমেরিকান পপুলার কালচার যে জুরাসিক পার্ক প্রসব করেছিল তার পিছনে বহুস্তরীয় কারণ রয়ে গেছে। শ্বেতলানার অনুপম গদ্যে এই গল্প বলার ভঙ্গিটি চিহ্নিত হয়েছে টেকনো-প্যাসটোরাল বা টেকনো-ফেয়ারি হিসাবে। অর্থাৎ, প্রযুক্তিকে আশ্রয় করে গড়ে উঠছে এক ‘রূপকথা’-র জগৎ। ‘আবহমান’ রূপকথার ধরণ ও প্রকরণ থেকে এই রূপকথা বহুলাংশে পৃথক; পৃথক শুধু তার চলনে বা গল্পে নয়, পৃথক তার ‘হয়ে ওঠার’ পদ্ধতিতেও।

ইউরোপের সমৃদ্ধ মিথ ও ‘ঐতিহ্য’-র সামনে দাঁড়িয়ে পিগমি-সদৃশ আমেরিকান কালচারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল এক বিশাল ও বিপুল বিস্তারের মিথ ও ‘টেলস’। এমন একটা মিথের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল আমেরিকার যার দ্বারা তার বিপুল বৈভব ও সমৃদ্ধি সূচিত হবে। ডায়নোসর সেই স্থানটিকে ভরাট করতে সহায়তা করেছিল।

এখানে শ্বেতলানার একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ‘অবজারভেশন’ রয়ে গেছে, শ্বেতলানার মতে, ডায়ানোসর ‘নস্টালজিয়া ইন্ডাস্ট্রি’-তে চমৎকার ভাবে খাপ খেয়ে যায় কারণ ডায়ানোসরের অস্তিত্ব মানুষের স্মরণ-পৃথিবীর পরিধির বাইরে অবস্থিত। একটি বিপুল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে এমন একটি ‘বস্তু’-র উপর ভর করে যার অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষ বিন্দুমাত্র ভাবিত নয়। ডায়ানোসর আসলে আমেরিকার হাতে উঠে আসা এমন একটি রূপকথা যার যথাযথ চিত্রায়ণ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ‘গ্রেটনেস’, যা কি না আমেরিকার সঙ্গে মিলে যেতে পারে।

ঠিক এ-পথ ধরেই জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার গড়জিলা’-কে নির্মাণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণ ও হিরোসিমা-নাগাসাকির পর জাপানের এমন একটি চরিত্রের প্রয়োজন ছিল যা তাকে তার হতাশা ও ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে। গডজিলা জাপানের হাতে উঠে আসা সেই আমলকি।

শ্বেতলানা নস্টালজিয়াকে দুই-ভাবে ভাগ করেছেন, একটিকে তিনি চিহ্নিত করেছেন রেস্টোরেটিভ নস্টালজিয়া হিসাবে। অন্যটিকে তিনি চিহ্নিত করেছেন রিফ্লেকটিভ নস্টালজিয়া হিসাবে।

শ্বেতলানার মতে রেস্টোরেটিভ নস্টালজিয়া— puts emphasis on to rebuild the lost home and patch up the memory gaps.

মানুষের থেকে বেশি পরিযায়ী প্রাণী হয়তো আর কিছুই নেই। বারবার তার ঘর ভেঙে যায়, বারবার তাকে দেশান্তরিত হতে হয়। ভুবণজোড়া ডায়াস্পোরার মধ্যে দাঁড়িয়ে এই নস্টলজিয়া অতীব শক্তিশালী হয়ে উঠতে চায় মানুষের কাছে।

অন্য ধরনের নস্টালজিয়া সম্পর্কে শ্বেতলানা লিখছেন, ‘(Reflective nostalgia) dwells in algia, in longing or loss, the imperfect process of remembrance’.

ত্রুটিপূর্ণ স্মরণরেখায় পূর্ণ রিফ্লেকটিভ নস্টালজিয়ার থেকেও এই ডায়াস্পোরার মধ্যে দাঁড়িয়ে রেস্টোরেটিভ নস্টালজিয়া অনেকে বেশি জলবিভাজিকা তৈরি করে। নস্টালজিয়ার মতো একটি আপাত-নরম, হরিণ-চোখের মতো সুন্দর ও রহস্যময় বিষয় রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে চলেছে। লস্ট-হোম সম্পর্কে রেস্টোরেটিভ নস্টালজিয়া এতটাই সংবেদনশীল যে, সে বারবার এই হারানো ভূমির সন্ধান করে চলে। জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবাদী সব রকমের পুনরুস্থানের পিছনে এই নস্টালজিয়ার খেলা চলে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিশ্বজুড়ে দক্ষিণপন্থী রাজনীতির ফুলেফেঁপে ওঠার পিছনে এই নস্টালজিয়াকে সুকৌশলে কাজে লাগানো হচ্ছে।

নস্টালজিয়া আসলে এক শতজল ঝরনার ধ্বনি, প্রকৃত অর্থেই তার হাজারো অভিমুখ।

সেদিন সকালে জিব্রান ও শ্বেতলানা বয়েমের মহাগ্রন্থদুটির পাশে আরও একটি মহাগ্রন্থই খুলে রাখা ছিল, শিশু কিশোর আকাদেমির ‘সারা পৃথিবীর রূপকথা’। এই বইটিকেও সঙ্গে সঙ্গে রাখি আমি। বারবার পড়ি রূপকথার আশ্চর্য জগৎকে।

সেদিন সিঙ্গাপুরের একটি রূপকথা পড়ছিলাম, ‘লালপাহাড়’।

সমুদ্র সৈকতে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসা তলোয়ারমাছ রাজার কাছে বেশি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশী শত্রু নয়, প্রজাবিদ্রোহ নয়— শুধুমাত্র ঝাঁকে ঝাঁকে তলোয়ারমাছ রাজার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

সেই তলোয়ারমাছের ঝাঁক শুধু যে জেলেদের জাল কেটে দিচ্ছে ধারালো দাঁত দিয়ে তাই নয়, তাদের ধারালো দাঁতের ভয়ে মানুষ সমুদ্র-সৈকতে হাঁটতে পর্যন্ত পারছে না। রাজা সৈন্যদের হুকুম দিলেন, সমুদ্রের তীর বরাবর বর্শা নিয়ে দাঁড়াতে।

সৈন্যদের ধারালো বর্শার আঘাতে তলোয়ারমাছ কিছু মরল বটে, কিন্তু তলোয়ারমাছের ধারালো দাঁত ক্ষতবিক্ষত করে দিল অনেক সৈন্যকেও।

রূপকথায় বারবার একটি শিশু ফিরে আসে, সে তার স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি দিয়ে সমস্যার সমাধানও করে দেয়।

সিঙ্গাপুরের রূপকথাটিতেও তার অন্যথা হয়নি। একটি অল্প-বয়সি ছেলে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল রাজার কাজ, রাজার কাছে গিয়ে সে একটি সহজ-সরল উপায় উপস্থাপন করল। রাজাকে বুদ্ধি দিল সমুদ্রের তীর বরাবর কলাগাছের সার পুঁতে দিতে।

তার পরমর্শ মতো সমুদ্রের তীর বরাবর কলাগাছ লাগিয়ে আশ্চর্য সুফল পেল রাজা, জোয়ার-ভাটায় ঢেউয়ের মাথায় চড়ে তীরের দিকে ছুটে আসা তলোয়ারমাছের ছুঁচালো ও ধারালো দাঁত আটকে গেল কলাগাছের নরম কাণ্ডে।

কিন্তু সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে রাজাকে আক্রমণ করল আরেক দুশ্চিন্তা, এই বাচ্চা-ছেলের যদি এত বুদ্ধি হয় তা হলে ভবিষ্যতে এই বালক রাজক্ষমতার কাছে বিপদজনক হয়ে উঠবেই।

সেনাপতির সঙ্গে শলাপরামর্শ করে তিনি অনিবার্য উপায়টি খুঁজে পেলেন। একটি ছোটো-পাহাড়ের উপরে সেই ছেলেটির ঘরে প্রবেশ করল চারজন সৈন্য। ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে হত্যা করল সৈন্যরা।

কিন্তু রূপকথা তো এভাবে শেষ হয় না, সমকালকে অতিক্রম করে যাবার একটি উপকরণ তার থাকবেই। এখানেও আছে, পাহাড়ের গা-বেয়ে গড়িয়ে নেমেছিল সেই বালকের রক্ত। যেখান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে নেমেছিল সেখানেই চিরস্থায়ী হয়ে গেল বালকের রক্তের ছোপ। দূর থেকে সে-পাহাড়ের লালমাটি দেখা যায়। লালমাটি আসলে আর কিছুই নয়, সেই কবে গুপ্তঘাতকের হাতে খুন হয়ে যাওয়া এক বালকের রক্তের চিহ্ন।

রূপকথার অমর-জগতের সামনে বসে বারবার একটা কথা মনে হয়, শিশুদের জগতে এত রক্ত আর হত্যার বিবরণ কেন ছেয়ে আছে হাজার হাজার বছর ধরে! রক্তপাতহীন রূপকথা আছে কিছু, কিন্তু পৃথিবীজোড়া বেশিরভার রূপকথায় হত্যা গুমখুন আর গূঢ়-কৌশল ছড়ানো। কৌটোবন্দি রাক্ষুসির প্রাণ ছিনিয়ে নেবার যে-কৌশল তা আধুনিকতম ক্রাইম-থ্রিলারকেও হার মানিয়ে দিতে পারে।

কয়েক-শো মামুষকে নিয়ে গঠিত জনজাতি থেকে শুরু করে সুবৃহৎ জনগোষ্ঠী— সবাই একই রকমভাবে লালন-পালন করেছে এইসব গল্পকে। হাজার হাজার বছর ধরে তারা সে ঐতিহ্যের ভার সমর্পণ করে গেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে। রক্ত আর হত্যার বিবরণে ভেজা এই সমর্পণ কি শুধুই কাহিনিমালা? শুধুই দুষ্ট আর শিষ্টের মধ্যে পার্থক্য দেখানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যার তাদের ভূমিকা?

স্মৃতি নস্টালজিয়া জাতীয়তাবাদ নিয়ে শ্বেতলানা বয়েমের গ্রন্থটির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়, মানুষ আসলে রক্তে স্নান করা এক প্রাণী। রক্তপাতের উত্তরাধিকারও সে তুলে দিতে চায় তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে।

এই লেখার শুরুতে ছোট্ট টিলার গা-বেয়ে, আমলকিবনের ভিতর দিয়ে হেমন্তের যে-রোদকে গড়িয়ে পড়তে দেখেছিলাম সেই রোদই যেন গুপ্তঘাতকের হাতে খুন হয়ে যাওয়া বালকের রক্তের মতো গড়িয়ে পড়ছে সিঙ্গাপুরের এক পাহাড়ের গা-বেয়ে। এক চিরহেমন্তের ভিতর স্মৃতি নস্টালজিয়া আর মিথের অবিরাম নির্মান, ফিনিক্সের মতো তার জেগে ওঠা আসলে অত্যন্ত জটিল এক প্রক্রিয়া। কে কাকে প্রসব করে চলেছে তাও অনেক সময়েই অনির্ধারিত, দুর্জ্ঞেয়।

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

চতুর্থ পর্ব

ষষ্ঠ পর্ব

দশম পর্ব

Facebook Comments

পছন্দের বই