লেখক নয় , লেখাই মূলধন

পার্থজিৎ চন্দের ধারাবাহিক গদ্য: সোনালি, হরিণ-শস্য

চতুর্থ পর্ব

নোয়ার নৌকার নৈতিকতা  ও রোমান ফ্রিস্টারের পৃথিবী

কেন সমস্ত ‘মহাপ্লাবন’-এর কাহিনির প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে… কেন উথালপাথাল ঢেউয়ের মাথায় দুলতে দুলতে ভেসে যাওয়া মানুষ আমার প্রায় অবসেসনে পরিণত হয়েছে তার পিছনে সুস্পষ্ট যুক্তি আছে। সে-প্রসঙ্গ থেকে কিছুটা সরে গিয়ে বলা যায় নোয়া ও তাঁর নৌকার থেকে অতিকথনের নীলাভ শ্যাওলাকে বিযুক্ত করলে যা পড়ে থাকে— অর্থাৎ, প্রকৃতির রোষের মুখে এক অসহায় প্রাণীর অবিরাম ছুটে চলা— আমার কাছে চূড়ান্ত বাস্তব। ঠিক যতটা বাস্তব এক মেঘের দুপুরে নির্জনতায় ডুবে থাকা আমার ছোট্ট রং-চটা বাড়ি ও তার শ্যাওলা-মাখা পাঁচিলের উপর দিয়ে তীব্র গতিতে চলে যাওয়া বেঁজির তাড়া খাওয়া ঢোঁড়াসাপ।

বেঁজি ও সাপের মধ্যে এই যে নিহিত সম্পর্ক তার সঙ্গে একটি নির্জন দুপুরের বিষণ্নতা অ্যডলফ হিটলারের মাইন ক্যাম্ফ জর্জ বার্নাড শ-এর নিরামিষ ভোজন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান ও কবি নির্মল হালদারের কবিতাকে যোগ করলে ফুটে ওঠে আরারাত পর্বত ও তাতে এসে থমকে যাওয়া নোয়ার নৌকা, ‘আর জল ক্রমশঃ ভূমির উপর হইতে সরিয়া গিয়া এক শত পঞ্চাশ দিনের শেষে হ্রাস পাইল। তাহাতে সপ্তম মাসে, সপ্তদশ দিনে অরারটের পর্ব্বতের উপরে জাহাজ লাগিয়া রহিল। পরে দশম মাস পর্য্যন্ত জল ক্রমশঃ সরিয়া হ্রাস পাইল, ঐ দশম মাসের প্রথম দিনে পর্ব্বতগনের শৃঙ্গ দেখা গেল।’

‘মাংসময় সমস্ত প্রাণীর সঙ্গে’ ঈশ্বরের যে-নিয়ম তার খুব কাছেই ফুটে উঠেছিল ফসল ও ফসল থেকে তৈরি মদ।

ওল্ড টেস্টামেন্ট খুলে এক শ্রাবণের দুপুরে বাংলার গ্রামে ডাহুকের ডাক শুনতে শুনতে মনে হয়, নোয়ার তিন পুত্রের মধ্যে অন্তত একজন কি মদ্যপায়ী ছিল?

আঙুর ও সমৃদ্ধির মধ্যে এক সরলরেখা টানতে মানুষ সেই কবে থেকেই উদগ্রীব। উটের গ্রীবার মতো লম্বা ও অমোঘ সেই সরলরেখা, আঙুর ও সমৃদ্ধি ওল্ড টেস্টামেন্টের সময় থেকেই সমার্থক। আসলে এই দু-টি আরও আরও আগে থেকেই নিশ্চিতভাবে সমার্থক। কিন্তু যেহেতু নোয়ার বংশই ক্রমশ পৃথিবী অধিকার করে নেবে, এমনই বিশ্বাসমতে আদিপুস্তক পাঠ করবার রেওয়াজ রয়েছে তাই ধরে নেওয়া হল এই দু-টি নোয়ার সময় থেকেই সমার্থক।

কিন্তু নোয়ার তিন পুত্রের মধ্যে সত্যি সত্যিই কি অন্তত একজন মদ্যপায়ী ছিল?

নোয়া যে মদ্যপায়ী ছিল সে-কথা ভিজে মেঘের দুপুরে একটি ডাহুকের ডাকের মধ্য দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আদিপুস্তক নিশ্চিত ভাবে জানিয়ে দেয়, ‘পরে নোহা কৃষিকর্ম্মে প্রবৃত্ত হইয়া দ্রাক্ষাক্ষেত্র করিলেন। আর তিনি দ্রাক্ষা-রস পান করিয়া মত্ত হইলেন, এবং তাম্বুর মধ্যে বিবস্ত্র হইয়া পড়িলেন।’

এই আঙুর ও মদের মাঝখানে ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে লাগল নোয়ার তিন ছেলে— শেম হাম ও যেফৎ।

আদিপুস্তকের এই অংশটুকু পড়তে পড়তে মনে হয়, হতে পারে পৃথিবীর একটি গূঢ় অনৈতিক কাজ ও তার হাত ধরে নৈতিকতার মৃত্যু ঘটেছিল পিতা ও পুত্রের মধ্যে মদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে, ‘তখন কনানের পিতা হাম আপন পিতার উলঙ্গতা দেখিয়া বাহিরে আপন দুই ভ্রাতাকে সমাচার দিল। তাহাতে শেম ও যেফৎ বস্ত্র লইয়া আপনাদের স্কন্ধে রাখিয়া পশ্চাৎ হাঁটিয়া পিতার উলঙ্গতা আচ্ছাদ্দন করিলেন, পশ্চাদ্দিকে মুখ থাকাতে তাঁহারা পিতার উলঙ্গতা দেখিলেন না। পরে নোহ দ্রাক্ষারসের নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইয়া আপনার প্রতি কনিষ্ঠ পুত্রের আচরণ অবগত হইলেন। আর তিনি কহিলেন, কনান অভিশপ্ত হউক, সে আপন ভ্রাতাদের দাসানুদাস হইবে। তিনি আরও কহিলেন, শেমের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য; কনান তাহার দাস হউক। ঈশ্বর যেফৎকে বিস্তীর্ণ করুন; সে শেমের তাম্বুতে বাস করুক; আর কনান তাহার দাস হউক।’

মদঘোরে মত্ত উলঙ্গ পিতাকে দেখে তার নগ্নতা আড়াল না-করা পুত্রের পক্ষে ‘পাপ’; কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি পাপ একজন পিতার মদমত্ত হয়ে উলঙ্গ হয়ে পড়া। অবশ্য মানুষের উলঙ্গ হয়ে থাকা অনৈতিক কিনা সে নিয়ে অনন্ত বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু যে-মাপকাঠিতে নোয়া তাঁর পুত্রের অপরাধকে গণ্য করেছেন সে-মাপকাঠিতে তাঁর নিজের উলঙ্গ হয়ে পড়া ‘অনৈতিক’ ও ‘পাপ’ কাজ তো বটেই।

শুধু তাই নয়, নোয়ার অভিশাপ বর্ষিত হয়েছিল হামের পুত্রের উপর এবং আশ্চর্যের কথা নোয়া-পুত্র হাম পিতার নগ্নতাকে উপেক্ষা করেনি। সম্ভবত সে পিতার নগ্নতা আড়াল করার অবস্থায় ছিল না এবং তাঁবুর ভিতর নিছক নগ্নতা-জনিত কারণ ছাড়া আরও কিছু ঘটে যায়। অনুমেয় সে কারণ হতে পারে মদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে পিতা-পুত্রের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিবাদ।

চিন্তার লঘুপথ পরিহার করে কিছুটা গম্ভীর হয়ে দৃশ্যটির দিকে তাকালে সেটিকে অসম্ভব প্রতীকী মনে হয়। একটি নির্জন প্রান্তরে নোয়া ফসল ফলাচ্ছেন, নিশ্চয় একা একা কৃষিকাজ করছেন না। তিনি সাহায্য নিচ্ছেন তাঁর পরিবারের, ক্রমশ শ্রম একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে চালিত হচ্ছে। পুঞ্জীভূত হচ্ছে ঘাম ও রক্ত ঝরিয়ে গড়ে তোলা সম্পদ। কিন্তু সেখানে নোয়াই ‘ডেমি গড’, তাঁর হাতেই পুঁঞ্জিভূত হচ্ছে ক্ষমতা। তিনিই নৈতিকতার সৃষ্টিকর্তা, তাঁর হাতেই নৈতিকতার শুরু ও নৈতিকতার শেষ।

ঈশ্বর ক্ষমতা শক্তির তিনি একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ এবং সমস্ত ক্ষমতা ঠিক এই কাঠামো ধরেই নৈতিকতার নির্মাণ করে। নিজেদের নগ্নতাকে ঢেকে রাখবার জন্যই করে, হয়তো। বর্ণবিদ্বেষ থেকে শুরু করে জেনোসাইড… সব কিছুর নেপথ্যে চিনের প্রাচীরের মতো নির্মাণ করে দেওয়া যায় এই নৈতিকতাকে। শ্বেতাঙ্গপ্রভুরা তাসমানিয়ায় কলোনি স্থাপন করার পর কীভাবে হুহু করে সেখানের আদিবাসীদের সংখ্যা কমতে শুরু করে তা অনেকেই জানেন। John Gray তাঁর Straw Dogs— Thoughts on Humans and Other Animals নামে এক গ্রন্থে তাসমানিয়ার শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের নৃসংসতার বেশ কিছু প্রামাণ্য তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রথম হত্যা শুরু হয় আদিবাসী পুরুষদের, হত্যার পর অনেক সময়েই নারীদের গলায় তাদের পুরুষদের কাটা-মুণ্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হত। অর্থাৎ, শুধুমাত্র হত্যার মধ্য দিয়েই আক্রোশ বা হননেচ্ছার পরিসমাপ্তি ঘটত না; সঙ্গে নারীদের গলায় পুরুষের মুণ্ড ঝুলিয়ে দেওয়ার উদ্বৃত্তটুকু অনিবার্য প্রাপ্তি হয়ে উঠেছিল। শুধু তাই নয়, তাসমানিয়ার শেষ আদিবাসী পুরুষের নাম উইলিয়াম ল্যানার, তিনি মারা যান ১৮৬৯ সালে। সারা জীবন শ্বেতাঙ্গ-প্রভুদের তাড়া খেতে খেতে বেঁচে থাকা উইলিয়াম নিশ্চয় কবরে একটু শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁকে কবর থেকে খুঁড়ে তুলেছিলেন রয়্যাল সোসাইটি অফ তাসমানিয়ার জর্জ স্টোকেল। পেশায় ডাক্তার এই কাজটি করেছিলেন শুধুমাত্র উইলিয়ামের চামড়া থেকে টোবাকো-পাউচ বানাবার জন্য। কাজটি সে মুহূর্তে নিশ্চয় যথেষ্ট নৈতিক মনে হয়েছিল স্টোকেলের। গ্রে তাঁর গ্রন্থে দেখিয়েছেন কী ভাবে ১৮৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল জর্জিয়ার নিউম্যান শহরে উন্মত্ত শ্বেতাঙ্গ জনতা দলে দলে ভিড় করেছিল। মা-বাবারা বাচ্চাদের স্কুলে স্কুলে আবেদন করেছিল সেই বিশেষ দিনে ছুটি মঞ্জুর করার জন্য, যাতে তাদের শিশুরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারে। একটি হনন আয়োজনের ও গোটা প্রক্রিয়াটির ফোটো তুলে রাখা হয়েছিল স্মৃতির সাক্ষ্য হিসাবে। শ্বেতাঙ্গ জনতা পিটিয়ে মেরেছিল স্যাম হোস নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে। এই ধরণের হত্যা ইতিহাসে আলাদা কোনো ‘গুরুত্ব’ বহন করে না। কিন্তু স্যাম হোসের হত্যা সম্ভবত তার পরের ঘটনাটির জন্য উল্লেখ্য হয়ে আছে।

স্যামের স্ত্রী মেরি টার্নার, সম্ভবত ‘ঝোঁকের মাথায়’ প্রকাশ্যে স্বামীর হত্যার বদলা নেবার প্রতিজ্ঞা করেন। আবার সেই শ্বেতাঙ্গ জনতা— তাদের কাছে নিশ্চয় মেরি টার্নারকে এক ‘উচিত’ শিক্ষা দেওয়া সঙ্গত মনে হয়েছিল। ফলে মেরিকে একটি গাছ থেকে হেঁটমুণ্ড করে ঝোলানো হয়, কিন্তু আটমাসের গর্ভবতী কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা মরতে মরতেও মরে না। সম্ভবত মেরি তখন প্রাণপণে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছিলেন তাঁর গর্ভস্থ শিশুটিকে। ধারালো ছুরি দিয়ে মেরির তলপেট কেটে ফেলা হয়, গর্ভস্থ শিশু— যে জন্মের খুব কাছে— মৃত অবস্থায় গড়াগড়ি খায় মাটিতে। কয়েকশো বুলেট মেরির শরীর ফুঁড়ে চলে যায়, মেরির মৃত্যুর সম্পন্ন হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সময়ে নিশ্চয় সমবেত সকলের গোটা ঘটনাটিকে যথেষ্ট ‘নৈতিক’ বলেই মনে হয়েছিল।

জনতার নৈতিক ও অনৈতিক বোধকে চিহ্নিত করা তুলনায় সহজ, কিন্তু ব্যক্তির প্রতিটি দেহকোষে লুকিয়ে থাকা ছদ্মনৈতিকতার আবরণটিকে খুলে ভিতরের লোলুপ চতুর সত্তাটিকে চিনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যক্তিকে এই নৈতিকতার প্রশ্নে এবং সমষ্টির সাপেক্ষে যতটা অসহায় (ফলে পবিত্র) বলে মনে করা হয় ব্যক্তি ততটাও নয় হয়তো। ‘পরিস্থিতি’ নামক এক বিচিত্র যুক্তির অবতারণা করে ব্যক্তি তার ‘অনৈতিক’ কাজটিকে নৈতিক বলে প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়।

যেমন রোমান ফ্রিস্টার সচেষ্ট হয়েছিলেন এক নাৎসি কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। নাৎসি ক্যাম্পের এক গার্ডের দ্বারা ধর্ষিত হন রোমান্ ফ্রিস্টার। নাৎসিদের হত্যা-কাঠামোর মধ্যে কঠোর অনুশাসন ছিল এবং এই ধর্ষণের সংবাদ যে গোপন করা উচিত সেটাও জানত ধর্ষক। সকালের প্যারেডে টুপি-ছাড়া লাইনে দাঁড়ালে বুলেট নিশ্চিত, ধর্ষিতর টুপিটি কেড়ে নিলেই ধর্ষণের আর কোনও প্রমাণ থাকবে না। ফলে সেই গার্ড ফ্রিস্টারের টুপি কেড়ে নেয়।

কিন্তু ‘জীবন’ এমনই, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ধর্ষিত হবার পরেও সে বাঁচার ইচ্ছা আঁকড়ে ধরে থাকে। সমস্ত নীতি-নৈতিকতা তখন তুচ্ছ হয়ে আসে তার কাছে, ফ্রিস্টারের কাছেও হয়েছিল। ঘুমন্ত এক মৃত্যুপথযাত্রী, তার মতোই একজন ইহুদি… হয়তো তার মতোই একজন ধর্ষিতও… টুপিটি পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল।

ফ্রিস্টার অবলীলায় চুরি করে নিয়েছিল টুপিটি এবং পরের দিন অনিবার্যভাবে সেই টুপি-হীন মানুষটির বুক ফুঁড়ে চলে গিয়েছিল বুলেট। ফ্রিস্টারের নিজের বয়ানে সেই মানুষটির পাশে দাঁড়িয়ে দেখা মৃত্যু-দৃশ্য লিপিবদ্ধ আছে। আশ্চর্য, ফ্রিস্টারের কথার সুরে বিন্দুমাত্র ‘অনৈতিক’ কাজের অনুশোচনা নেই।

হলোকাস্ট থেকে প্রায় আশি বছরের দূরত্বে বসে নীতি-নৈতিকতা নিয়ে এই ধরনের মতামত দেওয়া হয়তো সম্ভব। কিন্তু ফ্রিস্টারেরও বেঁচে থাকবার স্বাধীনতা ছিল। অন্যের আয়ু চুরি করে বেঁচে থাকবার মধ্যে এক ধরণের ‘ঘৃণ্য ধূর্তামি’ আছে, কিন্তু মৃত্যুর হাড়িকাঠে গলা দেওয়া প্রাণীর কাছে নৈতিকতারও মূল্য নেই। বিশেষ করে তারই প্রজাতির কেউ যখন তারও আয়ু হনন করবার প্রস্তুতি চালায়।

জীবন নীতি-নৈতিকতা আসলে এমনই; শিল্পও তাই। নৈতিকতা ও অনৈতিকতা অনেক সময়ে দু-টি বিপ্রতীপ অবস্থা নয়, এই দু-টির আপাত-পরস্পরবিরোধী অবস্থা জন্ম দেয় এক তৃতীয় অবস্থার। সে-জগৎ সত্য নয়, মিথ্যা নয়… নৈতিক নয়, অনৈতিকও নয়। সে-অবস্থা হাঙরের হাঁ কুকুরের মাথার ঘা পতঙ্গশিকারী ফুল ঘাসের মধ্যে মিশে থাকা সবুজ সাপের মতোই বাস্তব… অনিবার্য। বেঁজির তাড়া ও ঢোঁড়াসাপের ছুট সমান সত্য।

জীবন শিল্প এই দগদগে ক্ষতকে ঠিকই চিনতে পারে… দিগন্তের কাছে শেষ-বিকেলের ঢলে পড়া সূর্যকে দেখে চমকে ওঠে। এই তো সেই ক্ষত; এক মহাজাগতিক ক্ষতের নীচে দাঁড়িয়ে সে নৈতিকতার যুক্তি দিয়ে শিল্পের কাঠামো নির্মাণ করে আড়াল করতে চায় তার গোপন ক্ষতগুলিকে। নীতি নৈতিকতা অনৈতিকতার বাইরে সে এক তৃতীয় অবস্থা।

হয়তো এ-কারণেই মহাপ্লাবন নোয়ার নৌকা পিতামহের অভিশাপ কনসেট্রেশন ক্যাম্প জর্জ স্টোকেলের পৃথিবীকে অতিক্রম করে একজন কবিই লিখে ফেলতে পারেন:

“তুমি চিনতে চাও পুরনো খড়ে লেগে থাকা জল
আমি খুঁজি পুরনো খড়ের মধ্যে একটি ধান

মহাপ্রলয়ের পরেও, ধান ও জলের ধ্বনি আমাদের আশ্রয়।’ (ধান ও জলের ধ্বনি/ নির্মল হালদার)

মহাপ্রলয় না-থাকলে তো এই আশ্রয়টুকুও অলীক হয়ে পড়ে। সমস্ত মহাপ্রলয়ের প্রতি পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করবার পিছনে এই পবিত্র লোভটুকুর ভূমিকাও যে বড়ো অমোঘ।

ঋণ: Straw Dogs— Thoughts on Humans and Other Animals/John Gray

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

Facebook Comments

পছন্দের বই