লেখক নয় , লেখাই মূলধন

যশোধরা রায়চৌধুরীর গল্প

সেইসব বাড়িয়ে বলা গল্পগুলো

বাড়িয়ে বলা ছাড়া আমাদের হাতে আর কী-ই-বা ছিল, বলো। প্রতিদিন একশো হাজারটা আড়াল রচনা করা, প্রতিদিন ঊনসত্তরটা মিথ্যে বলা, প্রতিদিন আমাদের জীবনের গল্পকে একটু একটু করে ঘন করে দানাদার করে তোলা এবং জনসমক্ষে পেশ করা।
একটা নীল ফুল ছাপ ছাপ, বড়ো বড়ো ফুলের হালকা শাড়ি, ভয়েল না কী বলে যেন। সেই পরে গা ধুয়ে বিকেলে চুল আঁচড়ে আসত দিদিভাই। আর চোখ বড়ো করে করে গল্প বলত। গান গাইতে বসত তারপর। কিন্তু ওই বিকেলের ফেলা সময়টুকু ওর নিজের সঙ্গে কাটত, আমারও, আমরা বারান্দায় দাঁড়াতাম, আমরা হাসাহাসি করতাম, গল্প করতাম। “ছেলে দেখতাম।” ক্যাবলা ছেলে স্মার্ট ছেলে কালো ছেলে ফর্সা ছেলে সিগারেট খাওয়া ছেলে খেলোয়াড় ছেলে রোথো ছেলে সব দেখতাম।

দিদিভাই তখন এইভাবেই গল্প করত। কলেজের গল্প। যা ঘটেছে আর যা ঘটেনি সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে দিদিভাই বলত। আমি ইশকুলে তখন মাত্রই ক্লাস এইট। ভূগোল বইয়ের তলায় শরদিন্দুর প্রেমের গল্প লুকিয়ে পড়ছি। প্রতিভা বসু, আশুতোষ, বিভূতি মুখুজ্জে। প্রেমের শিহরণ আমার জানা নেই তখনও। দিদিভাই আমাকে ওর বন্ধুদের প্রেমের কথা বলত।

নিজে প্রেম করার সাহস ছিল না। ওর মা বাবা তাহলে পিঠের ছাল তুলে দেবে না? কলেজটা যে কো এড, তাতেই তো সবার কত আপত্তি। ঠিক বিকেল ছ-টার মধ্যে ঘাম মুছতে মুছতে গিয়ে কাকিমা দাঁড়ায় মোড়ের কাছে। দিদিভাই বাস থেকে নামলে গলির পথটা পাহারা দিয়ে দিয়ে নিয়ে আসবে। তখন কুলফিওয়ালার হাঁক শোনা যায়নি, কিন্তু রাস্তার বাতিগুলো জ্বেলে দিয়ে যাচ্ছে একটা আঁকশি হাতে লোক। ঝুপসি মতো সন্ধ্যে নামতে নামতে কলেজের সঙ্গে একটাই সংযোগ রক্ষাকারী বাস এসে দিদিভাইকে নামিয়ে দেয়। ঠিক কলেজ-টার শেষ ক্লাসের সঙ্গে বাস রাস্তাটুকুর সময় যোগ করলে যে-সময়টা হয় সেই সময়ে।

আমার হাসি পায়। দিদিভাই চাইলে তো ক্লাস ও কাটতে পারে। দিদিভাই দুষ্টুমি করে খাবার ফেলে, পাত থেকে ঝিঙে বা তেতো নিয়ে জানালার বাইরে ফেলতে পারে লুকিয়ে, এমনকী বাথরুমে দুধের গেলাস নিয়ে ফেলে দিতে পারে দুধ। সব কাকিমাকে লুকিয়ে। আর প্রেম করতে পারে না?

যার এত ইন্টারেস্ট অন্যদের প্রেমে?

দিদিভাই, নিজে প্রেম করত কিনা আমি আজ আর জানি না। জানি, একেবারে কিচ্ছু নেই যে-সম্পর্কে সে-সম্পর্ককেও বাড়িয়ে, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলতে পারত ও। মুখচোরা, কালো, কোঁকড়ানো চুলের দিদিভাই বাড়িতে হম্বিতম্বি করে ভাইবোনেদের ওপরে। কলেজে চুপটি করে যেত আর নোট নিয়ে চলে আসত। বড়োজোর শেষ দিকের এক-দু-খানা ক্লাস কেটে ক্যান্টিনে গিয়ে চপ আর চা সাঁটাত, অনেক ছেলেমেয়ের মধ্যে চোরা চোখে চাইত নিজের পছন্দের পলাশদার দিকে। এই ছিল দিদিভাইয়ের দৌড়।

দিদিদের ক্লাসের তাপসীদি তখন হোস্টেলে থাকে। সে হোস্টেলের গল্প শুনে ততদিনে পুরো পেকে গেছি আমি। তাপসীদিদের দুষ্টুমি। সিগারেট খাওয়া। অবিবাহিতা মোটা আর কালো (এই মোটা আর কালো শব্দদুটো বলার সময়ে ছেলে আর মেয়ে সবার মধ্যে কী পৈশাচিক উল্লাস যে কাজ করে!) সুপার ম্যাডামের গোঁফ আছে কি নেই সে-গল্প… একদিন হুট করে দিদিমণির ঘরে ঢুকে পড়ে সুপার ম্যাডামকে ব্লাউজ খোলা অবস্থায় দেখে ফেলার উল্লাস আর নিষিদ্ধতা… সে-সব বলার মধ্যে কত যে পেজোমি আর গুল্লি গুল্লি চোখের মজা ঢেলে ফেলত দিদিভাই।

তবু ছাপোষা আমরা। আমাদের জীবন ছাপোষাই হয়ে গেল তাই, তাপ্পর।

দিদিভাইকে বিয়ে দেওয়া হল। কথায় বলে, হলুদ জব্দ শিলে, বউ জব্দ কিলে, দুষ্টু মেয়ে জব্দ হয় বিয়ে দিয়ে দিলে। দিদিভাই ঠিক সময়ে খেত না, সকালে দাঁত মাজতে ভুলে যেত। খবরের কাগজের হেডলাইন আর প্রথমপাতাটা উলটে দ্বিতীয় পাতার কোণায় রিপ কার্বি আর অরণ্যদেব পড়ে সকালে ওর কাজ সারা। হরলিক্স কোনোদিন তলানি খেত না। তা নিয়ে কাকিমা খিটখিট করত। দিদিভাই বিকেলে বারান্দা থেকে আমার সঙ্গে গল্প আর ছেলেদেখা শেষ করে গান নিয়ে বসত কিন্তু তাতেও ফাঁকি। পড়াশুনো তো চিরদিন অন্যমনস্কভাবেই করে গেল। ক্লাস্ত ওয়ান থেকে টেন অঙ্ককে ভয় পেয়ে পেয়ে ইলেভেনে হোম সায়েন্স…। এই আমার দিদিভাই।
তবু তার কী ভীষণ জাঁদরেল আর সুপণ্ডিত এক পাত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল। কে জানে কী কপালে। আসলে কাকা আর কাকিমার প্রচেষ্টায়।

যে-প্রচেষ্টায় কাকিমা দুপুরে ঘুমোত না, উদয়াস্ত পরিশ্রম করার পর, দুপুরে খেয়ে উঠে গল্পবই না পড়ে রাশি রাশি জ্যাম জেলি আর আচার বানাত, ছাতে দিত তারপর ছাত থেকে পাড়ার সমস্ত দুষ্টু ছেলে আর মেয়েদের খর চোখে নজরদারি করত, চশমার পাওয়ার বাড়িয়ে দুপুরের আধো অন্ধকার ঘরটিতে বসে সেলাই ফোঁড়াই করত, দূর থেকে ও বাড়ির টুম্পা ছেলেদের সঙ্গে চিরকুট চালাচালি করছে দেখে ভুরু কুঁচকে বলত হুঁ! সেই একই অধ্যবসায়ে ঘাম মুছতে মুছতে কাকিমা চলে যেতে ঠিক ছটায় আমাদের সরু গলি পেরিয়ে বাসরাস্তায়, দিদিভাইকে বাস থেকে নামিয়ে সঙ্গে করে আনতে। সেই অধ্যবসায়েই চেনা পরিচিত থেকে শুরু করে কাগজের বিজ্ঞাপন সর্বত্র নজরদারি করে দিদিভাইকে এক অসামান্য পরিবারের রূপহীন, অর্ধটাকওয়ালা, কোলকুঁজো, ভারী চশমার পড়ুয়া পাত্রে পাত্রস্থ করল। পাত্রের বাবা মা দু-জনেই অধ্যাপক এবং প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বের। বাবা অবিশ্যি মারা গেছেন সম্প্রতি। মা একাই ছেলেকে ব্যবস্থা করে বিয়ে দিচ্ছেন।

বিয়ের সন্ধ্যেতে দিদিভাই যখন সাজছিল তখন বান্ধবী আর বোনেরা, পাড়ার মেয়েরা হই হই করে বর দেখতে গিয়েছিল। ফিরে এসেছিল মুখ চুন করে। এরকম গল্প করে তিলকে তাল করতে পারা দিদিভাইটা, ওর বর রাজেশ খান্না বা নিদেনপক্ষে আমাদের শমিত ভঞ্জ বা স্বরূপ দত্তের মতো দেখতে হতেই হবে। দিদিভাইয়ের চোখ খঞ্জনার মতো ছিল, নাক সরু আর মোটের ওপর মুখশ্রী তো ভালোই। সেই মিষ্টি দিদিভাই বরের ছবি দেখে কতটা কষ্ট পেয়েছিল এখন বুঝি। তখনও বুঝেছিলাম।

ভয় ও পেয়েছিল। এতদিনের সিনেমা দেখা, এতদিনের দারুণ সব গল্পবই, এতদিনের কলেজের প্রেম প্রেম ভাব, পলাশদার প্রতি চোরা চাউনি, সবের পর, এই পণ্ডিত, বয়সে আট বছরের বড়ো রাগি রাগি দেখতে বরের চেয়েও, তাদের ওই সুবিশাল নামডাকের পরিবারে গিয়ে ভর্তি হতে হবে ভেবেই দিদিভাই কুঁকড়ে গেসল।

দিদিভাইয়ের শাশুড়ি ছিলেন এম এ পাশ। সদ্য বিধবা, তবে একাই একশো। ভীষণ ব্যক্তিত্ব। চোখা চেহারা। অধ্যাপক হিসেবে দারুণ নামডাক।

অথচ দিদিভাইকে বি এ থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা দেবার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হল। বিদ্বান ছেলের বিয়ে দিতে ওঁরা সুশিক্ষিতা মেয়ে খোঁজেননি কেন? রূপসীও খোঁজেননি?

দিদির পাকাদেখার দিন আমি চারটে কমলাভোগ আর দুটো সিঙাড়া সাঁটাতে সাঁটাতে শুনেছিলাম দিদির হবু শাশুড়ি বলছেন, রূপ বিদ্যে দিয়ে কী করব আমি বলো তো? সে-সবের তো অভাব নেই আমাদের বাড়িতে? আমার শুধু একটা ঘরোয়া মেয়ে চাই, বাড়ির সব দায়িত্ব নিতে পারবে… নিজের মেয়ের মতো রাখব।

দিদিদের বাড়ির সদর দরজার চাবির দুটো ডুপ্লিকেট ছিল। একটা বাড়িতে থাকত। অন্যটা নিয়ে বেরুত জামাইবাবু। আর তৃতীয়টা দিদির ননদের কাছে থাকত। বেল টিপে মাকে বিরক্ত করবে না সে, সুন্দরী শিক্ষিতা উচ্চ পদে কর্মরতা ননদ দিনের যে-কোনো সময় “নিজের বাড়িতে” আসবে বলে ওর কাছে থাকত। ইয়েল লকের চাবি ঘোরালেই সে-বাড়ি ঢুকতে পারত।

দিদি বাজারে গেলে, শপিং, ছেলেকে স্কুলে দেওয়া… বা নিজের বাপের বাড়িতে কাকু কাকিমার সঙ্গে দেখা করতে এলেও… নাহ্, ফিরে গিয়ে বেল টিপে বসে থাকত সিঁড়িতে। ভেতরে, অনেক দূর থেকে হাওয়াই চটি, ঘরে পরার, ফটর ফটর আওয়াজ করে শাশুড়ি আসতেন। লেখাপড়ার টেবিল থেকে উঠে আসতে হয়েছে বলে রীতিমত বিরক্ত। তবু, দিদির হাতে কখনো আরেকটা ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে দেওয়ার কথা কেউ ভাবতে পারেনি।

এই মুহূর্তে দিদিভাই শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে। একা, সম্পূর্ণ একা। দিদিভাই মরণাপন্ন। একটু আগেই ফোন করেছিল ওদের কাজের লোক। দিদির মোবাইল ঘেঁটেই আমার নম্বর পেয়েছে।

ডাক্তার আমাকেই জিগ্যেস করলেন, ওঁর আধার কার্ড কোথায়? আইডেন্টিটি কার্ড কিচ্ছু আনেনি তো।

কে আনত? কাজের লোক ? জামাইবাবু? জামাইবাবু নিজের কার্ড ও খুঁজে পান কিনা সন্দেহ।

দিদি একা শুয়ে আছে। আমি এসেছি। আমার নিজের গল্প, নিজের সমস্যা, নিজের শ্বশুরবাড়ি, সব সামলে, পেছনে রেখে। দিদি টার্মিনাল। কত বোতল রক্ত যেন লাগবে। কতগুলো টেস্ট যেন করতে হবে। কে করায়, কে দায় নেয়?

এই শেষ সময়টা ওর বর পাশে নেই। ছেলেও বিদেশে। জামাইবাবুকে ফোন করি একটা। ওদিক থেকে বিস্রস্ত, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত গলা শোনা যায়। বয়স যেন এক লাফে অনেক বছর বেড়ে গেছে জামাইবাবুর।

কে?

আমি, টুনি। জামাইবাবু দিদির ত রক্ত লাগবে/
অ্যাঁ, রক্ত?
দিদির আই কার্ডটা কি কেউ এসে দিয়ে যেতে পারে নার্সিং হোমে?
কেউ- কেউ ত-তো নেই টুনি। আমার, আমার না, নার্ভ ফেইল করছে টুনি।
তাহলে-তাহলে-দু-মুহূর্ত ভেবে নিই আমি। আচ্ছা জামাইবাবু আমিই যাচ্ছি আপনাদের ওখানে।

যাই। দ্রুত ট্যাক্সি ডেকে নিই। মুখে হু হু করে হাওয়া লাগছে আর আমার কান্না আসছে। ছোটবেলার সব কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। দিদিভাইয়ের বানিয়ে বলা গল্পগুলো। বড় বড় চোখ করে। তেঁতুলের আচার চুরি করে এনে কাকির ভাঁড়ার থেকে।

ওদের বাড়িতে ছটা আলমারি। তার তিনটে লোহার। জামাইবাবু জানেন না দিদির আধারকার্ড কোথায় আছে। দিদিভাইই ত সব গুছিয়ে রাখে ।

ও-ও জানত।
পাস্ট টেন্স কেন বলছে জামাইবাবু? মাথাটা কি একেবারে গেছে?

চাবি কোথায় থাকে? চাবিগুলো? লকারে থাকা সম্ভব। দিদির বেডরুমে ঢুকে ড্রয়ার হাঁটকাই আমি।

সারাবাড়িতে, দিদির ঘরে, দেওয়ালে কত ফোটো। দিদির একটাও নেই। জামাইবাবুর অল্পবয়সের ডিগ্রি সেরিমোনির ছবি। ওদের ছেলের অসংখ্য নানা বয়সের। আর বাইরের ঘরে দেখে এসেছি মাসিমা মেসোমশাইয়ের ছবি। স্টুডিওতে তোলা মেধাবী মহিলাটি… শিক্ষিতা, সে যুগের এম এস সি। দিদির ননদের ও আছে। দিদি শুধু নেই। না ওই তো ভুটুকে জড়িয়ে ধরে একটা অস্পষ্ট।

ওহ, ওর বোধ হয় আধার হয়নি জানো টুনি। সেই সময়ে তো আসলে ভুটুর মাধ্যমিক, ও পড়াচ্ছিল। বলেছিল পরে কখনো করিয়ে নেবে। আর হয়নি।

দিদিভাইয়ের আধার নেই। আইডেন্টিটি কার্ড নেই। প্যান, ইলেকশন আই কার্ড? সেসব নেই? সেসব কোথায়?

হাত কাঁপছে জামাইবাবুর । করুণা হয় আমার ওঁর দিকে তাকিয়ে। জামাইবাবু বিদ্বান মানুষ। কোনোদিন জীবনের কোনো প্রাক্‌টিক্যাল সিদ্ধান্ত নিতে শেখেননি। ত্রিশ বছর বয়স অব্দি মায়ের শাসনে, মায়ের সিদ্ধান্তে চলেছেন। বিয়ের পরও, মা যতদিন বেঁচে ছিলেন, মাতৃমুখাপেক্ষিতা ঘোচেনি।

দিদিভাই ধীরে ধীরে নিজের কালো হবার, বিদ্যাহীন হবার অপরাধ বোধ নিয়ে শ্বশুর শাশুড়ির সেবাতে সার্বিকভাবে আত্মনিয়োগ করেছিল। আর দক্ষতায়, যত্নে, প্রাণপণ চেষ্টায় পুতুলের মতো কর্মপটু আর অনিবার্যভাবে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল ওদের সংসারে।

ফলত জামাইবাবু কখনো কুটো নাড়েননি। বছর দশেক আগে দিদিভাইয়ের শাশুড়ি মারা যাবার দিন ওঁকে হাউ হাউ করে শিশুর মতো কাঁদতে দেখেছিলাম। দিদিভাই সেদিন সমাগত আত্মীয়দের বড়ো বড়ো ট্রে ভর্তি করে চা আর সরবত এনে দিচ্ছিল। সে ব্যস্ততায় আমি শুধু লক্ষ করেছিলাম দিদিভাইয়ের মুখটা শুকনো। সাদা শাড়ির ভেতরে রুগ্ন একটা শরীর। কপালে দু-তিনটি চুল রুপোলি হয়ে এসেছে।

তুমি কিছু খাবে না?

দিদিভাই জামাইবাবুর সামনেও চা ধরেছিল। জামাইবাবুর চোখ দুটো ফুলে লাল, জবাফুলের মতো। মাথা নেড়ে না বলেছিল। সবাই ঘিরে ধরেছিল তাকে। আহা উহুর বন্যা। দিদিভাইয়ের পিসিশাশুড়ি বলেছিলেন, বউমা ওকে ডাবের জল টল কিছু দাও। এত বড়ো আঘাত…

ঐদিন মনে হয়েছিল দিদিও আর বেশিদিন বাঁচবে না। কিন্তু ঐ যে আমাদের বাড়িয়ে বলা স্বভাব। আমরা সবকিছু নাটকীয় করে ফেলি। সবকিছুকে বানিয়ে তুলি গল্পের মতো…

সেইদিনের পর দিদির শাশুড়ির শ্রাদ্ধের দিন, তার পরদিন, খুব খাওয়া দাওয়া হয়েছিল। জামাইবাবু নিজের মায়ের সম্বন্ধে বই বার করেছিল একটা। আত্মীয়রা, নিজে , লিখেছিল স্মৃতিকথা। কত পন্ডিত, শিক্ষিত মানুষ ওই পরিবারে। ওঁর ছাত্রছাত্রীরাও লিখেছিল বইকি। দেশে দেশে ছড়িয়ে আছে মাসিমার ফ্যান ক্লাব।

দিদির ছেলে ভুটু ঠাকুমার ডিজিটাল ছবির কোলাজ বানিয়ে ল্যাপটপে লাগিয়ে লুপে চালিয়ে রেখেছিল।

দিদিভাই মারা গেলে ওর ছবির কোলাজ বানাবে, ভুটু?

Facebook Comments

পছন্দের বই