লেখক নয় , লেখাই মূলধন

গোরখ পাণ্ডের কবিতা

ভাষান্তর: রবিউল ইসলাম

১৯৪৫ সালে উত্তর প্রদেশের দেবারিয়াতে কবি গোরখ পাণ্ডের জন্ম হয়। কবি গোরখ পান্ডে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ জড়িত ছিলেন। গোরখ পান্ডে কবিতা ছাড়াও বেশ কিছু নাটক লিখেছেন। গোরখ পান্ডে তাঁর বেশিরভাগ কবিতা সমাজের শোষিত ও বঞ্চিতদের নিয়ে লিখেছেন। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল- ‘ভোজুপুরীকে ন গীত’ (১৯৭৮), ‘জাগতে রহো সোনে বালো’ (১৯৮৩), ‘স্বর্গ সে বিদায়’ (১৯৮৯) ইত্যাদি। ১৯৮৯ সালের ২৯ শে জানুয়ারী এই ক্রান্তিকারী কবির মৃত্যু হয়।

কুর্সিনামা


যতক্ষণ সে মাটিতে ছিল
চেয়ারটি খারাপ ছিল
এবার সে চেয়ারে গিয়ে বসল
এখন মাটিই খারাপ হয়ে গেল।


তার চোখ চেয়ারের দিকে টিকে ছিল
চেয়ারে তার লেগে গেছিল নজর
এখন সে চোখ বন্ধ করতেই
চেয়ার অন্যজনের চোখ
বন্ধ করে।


চেয়ার শুধুমাত্র
লোহা কিংবা কাঠের কাঠামো নয়
চেয়ার অনুসারে—
চেয়ারের উচ্চতা আছে
আয়তনে সে ছোটো বা বড়ো
স্বাধীন কিংবা পরাধীন
সে আনন্দিত কিংবা ভীত
আসলে চেয়ারে নিদারুণভাবে
একজন মানুষকে ভেজানো হয়।


ফাইল বন্ধ থাকে
ন্যায় পিছিয়ে যায়
ক্ষুধার্তের কাছে ত্রাণ পৌঁছায় না
রোগীর কাছে ওষুধ নেই
যে কোনো অন্যায় করেনি
তাকেও ফাঁসি দেওয়া হয়
এর মধ্যে চেয়ারই
শুধুমাত্র ঘুষ আর প্রজাতন্ত্রের হিসাব রাখে।


চেয়ার বিপদে অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র বিপদে
চেয়ার বিপদে অর্থাৎ দেশ বিপদে
চেয়ার বিপদে অর্থাৎ পুরো বিশ্ব বিপদে
চেয়ার যদি না বাঁচে
তো গোল্লায় যাক প্রজাতন্ত্র
দেশ আর দুনিয়া।


রক্তের সমুদ্রে পয়সা রাখা আছে
সেই পয়সার উপরে চেয়ার
চেয়ারের উপরে রাখা অরাজকতা
ফের একবার হত্যার আদেশ দেয়।


চেয়ার অবিচল থাকে,
চাওয়াপাওয়া আর অভিযোগের সংসারে
চোখের জলের সংসারে
চেয়ার অবিচল থাকে
যতক্ষণ না তার পায়ে
আগুন লাগে।


মাতাল সেই নালীতে গড়িয়ে পড়ে
যেখানে তার চোখ খুলে যায়
এবং নেশার মতোই
চেয়ার চলে যায়।


চেয়ারের মহিমা বয়ান
করার জন্য
এটি ছিল আমার ছোট্ট প্রয়াস,
আঠা লাগানোওয়ালাকে জিজ্ঞেস করুন—
আসলে
চেয়ারই ইতিহাস
চেয়ারই ভূগোল।

Facebook Comments

পছন্দের বই