লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অনিন্দ্য রায়ের ধারাবাহিক: ফর্মায়েসি

 পঞ্চম পর্ব

আমেরিকান পঞ্চক
(American Cinquain)

পাঁচ লাইনের কবিতাকে বলে সিনকেইন বা পঞ্চক। বিভিন্ন নিয়ম মেনে নানা ধরণের পঞ্চক লেখা হয়। আমেরিকান কবি অ্যাডিলেইড ক্র্যাপসে (১৮৭৮ – ১৯১৪) আমেরিকান সিনকেইন ফর্মটির স্রষ্টা। একে ক্র্যাপসে সিনকেইনও বলে।
এটি—

৫ লাইনের সম্পূর্ণ কবিতা।
লাইনগুলির দলসংখ্যা যথাক্রমে ২, ৪, ৬, ৮, ২ এবং স্বরসংঘাত (stress) যথাক্রমে ১, ২, ৩, ৪, ১।
অন্ত্যমিলহীন
শিরোনামযুক্ত। শিরোনামটিকে অনেক সময় ষষ্ঠ লাইন হিসেবে ধরা হয়।
ভাবনা বা অনুভূতির সুত্রে সংঘবদ্ধ চিত্রকল্পে লিখিত হয় ক্র্যাপসে সিনকেইন।

ক্র্যাপসের লেখা:

NOVEMBER NIGHT

Listen…
With faint dry sound,
Like steps of passing ghosts,
The leaves, frost-crisp’d, break from the trees
And fall.

এই দলকাঠামো ব্যবহার করে বাংলায় পঞ্চক লেখা যেতে পারে।

হেমন্তসন্ধ্যার গান

ধানখেত—
ছোকরা বাতাস
ঘাড়ে জোয়াল বাঁধা
কৃষকের মহিষের মতো
শান্ত

এই ফর্মটি ইংরেজিতে খুবই জনপ্রিয় আর নানান ভ্যারিয়েসন তৈরি হয়েছে এর।

বিপ্রতীপ পঞ্চক (Reverse cinquain): দলসংখ্যা ২, ৮, ৬, ৪, ২।
মুকুর পঞ্চক (Mirror cinquain): দুটি পঞ্চক, একটি আমেরিকান সিনকেইনের পরে একটি রিভার্স সিনকেইন।
প্রজাপতি পঞ্চক (Butterfly cinquain): ৯ লাইনের কবিতা। দলসংখ্যা ২, ৪, ৬, ৮, ২, ৮, ৬, ৪, ২। একটি আমেরিকান সিনকেইনের পরে একটি রিভার্স সিনকেইন। প্রথমটির পঞ্চম লাইন দ্বিতীয়টির প্রথম লাইন।
পঞ্চ পঞ্চক (Cinq Cinquain): পৃথক পৃথক স্তবকে পাঁচটি পঞ্চক। একে মুকুট পঞ্চকও (Crown cinquain) বলে।
পঞ্চকমাল্য (Garland cinquain): ৬টি পঞ্চক। ষষ্ঠ পঞ্চকটি আগের পাঁচটি পঞ্চকের লাইন নিয়ে গঠিত। যষ্ঠটির প্রথনলাইন প্রথমটির প্রথম লাইন, দ্বিতীয় লাইন দ্বিতীয়টির দ্বিতীয় লাইন— এইভাবে।

দ্বিতী
(The Doublet)

এই ফর্মটিও অ্যাডিলেইড ক্র্যাপসে-র উদ্ভাবিত।
শিরোনামযুক্ত ২ লাইনের কবিতা। শিরোনামের ও মূল কবিতার সম্পর্ক এমন যে তাদের যোগ করে ৩ লাইনের কবিতা হিসেবেও পড়া যায়।
দলসংখ্যা প্রতি লাইনে ১০ বা তার কম।
অন্ত্যমিলবিন্যাস: ক ক

ক্র্যাপসে-র লেখা একটি ডবলেট:

On Seeing Weather-Beaten Trees

Is it as plainly in our living shown,
By slant and twist, which way the wind hath blown?

বাংলায় এই ফর্মটিকে বলতে পারি দ্বিতী।

ভালোবাসার বিপরীত শব্দটি

বইতে না কি লেখা আছে ঘৃণা
প্রেম ছাড়া তা পড়তে যে পারি না

অণুচিত্র
(Vignette)

Vignette (প্রাচীন ফরাসিতে অর্থ ছোট্ট লতা) মানে হল সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বা চিত্র।
এই হ্রস্ব বর্ণনামূলক কবিতায় একটি মুহূর্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ ও পরিষ্কার চিত্র ফুটে ওঠে।
এই জাতীয় কবিতার আমরা সন্ধান পাই কবিতার আদিকাল থেকেই।
যদিও ফোজারি রুকউড একটি নির্দিষ্ট সিলেবল ভিত্তিক ফর্মকেই ‘ভিনিয়েট’ হিসেবে প্রস্তাবিত করেছেন।
এটি ৬ লাইনের কবিতা।
লাইনগুলির দলসংখ্যা যথাক্রমে ২, ৪, ৪, ৬, ৭, ৩।
অন্ত্যমিলহীন।

জুডিথ ভন গোদারের লেখা:

breaking free

balanced
on the earth’s rim,
spring board to the
universe and beyond,
possibilities abound,
dare to soar

বাংলায় এই ষষ্টক ফর্মটিকে বলতে পারি অণুচিত্র।

মধ্যদিনের দহন

টিয়া
সবুজ গাছের
পাতার ফাঁকে
বার করে রেখেছে
মানুষের লোভের মতো
তার লাল ঠোঁট

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

চতুর্থ পর্ব

Facebook Comments

পছন্দের বই