লেখক নয় , লেখাই মূলধন

গৌতম গুহ রায়ের প্রবন্ধ

জহর সেনমজুমদারের কবিতা, কবিতার অন্তর্ঘাত

“এই কবিতাগুলি যেন ডানা ভাঙা, বন্ধ্যা ফুসফুসের ভেতর সারারাত জেগে আছে চারদিকে ভাঙা রিক্সা, চারিদিকে ভাঙা চাঁদ, দুইজন অজ্ঞ নারী রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে একটি কুকুরের সঙ্গে কথা বলছে;
কুকুরের দুই পায়ে শেকল কুকুরের দুইপায়ের বাড়িঘর;
স্বদেশের দ্রাক্ষা ক্ষেতে দূর থেকে উড়ে আসে বহু শতাব্দীর মৃত কাটামুণ্ডু”

জহর সেনমজুমদার, বাংলা কবিতার একক ও অনতিক্রম্য এক যোদ্ধা, যাঁর যাকক্রকবিতা পড়ে আপনি নিজেকে বিপন্ন, আক্রান্ত বোধ করবেন, আপনার সহজ যাত্রার ফুরফুরে আয়েশি মেজাজ বিপন্ন বোধ করবে। নানা সত্তা মিলেমিশে, নানা ভূমির প্রব্রাজন অন্তে ব্যক্তির পরিচিতি গড়ে ওঠে। জহর সেন মজুমদার; প্রাবন্ধিক, শিক্ষক, দুর্দান্ত খোলামেলা এক বৃক্ষ ছায়ার মতো মানুষ, কিন্তু এই সবকিছুর উপরে তাঁর কবিসত্তা; নানা রঙে লেখা যুগীরগান। তাঁকে নিয়ে বলতে গিয়ে আর এক কবি অনন্য রায়ের কথা মনে হয়, “সত্তরের গর্জন” শোনা যায় এই স্বতন্ত্র কবিতার অভিযাত্রীদের একটি মুখ থেকেই, “শ্লেষ্মাজড়িত ছন্দবন্ধনে গ্রথিত ন্যাকামিকে কবিতা বলে মনে করি না আমরা, শব্দকে স্থানচ্যুত করে তাদের নতুন শক্তিতে এনে ফেলাই প্রতিবাদ— স্থিতাবস্থার এই হলো অন্তর্ঘাত। এই প্রতিবাদী, অন্তর্ঘাতীর সংখ্যা যতই বাড়বে ততই সাহিত্য ব্যবসায়ী মধ্যস্বত্বভোগীদের পরমায়ু সংক্ষিপ্ত হতে থাকবে।” এই প্রতিবাদী অন্তর্ঘাতী গেরিলা যোদ্ধাদের হাতে বাংলা কবিতার যুদ্ধক্ষেত্রের নির্মাণ পর্বের চালচিত্রের খোঁজ নিতে হলে যাঁদের সামনে দাঁড়াতে হয় তার সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন কবি জহর সেনমজুমদার। প্রাবন্ধিক জহরদা তাঁর ‘জীবনানন্দ ও অন্ধকারের চিত্রনাট্য’-তে লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথের কবিতাকে যদি আমরা বলি প্রশান্তিসঞ্চয়ের কবিতা, তা হলে জীবনানন্দের কবিতাকে আমরা অবশ্যই দংশনপ্রক্রিয়ার কবিতা বলে উঠতে পারি।” এই দংশনপ্রক্রিয়ায় সময়ের ও কালের চিহ্ন থাকে। এই ক্ষয়চিহ্নিত কালের চিহ্ন-সহ যে-দংশনপ্রক্রিয়ার কবিতা তার সন্ধান পাওয়া যায় জহর সেনমজুমদারের কবিতায়। কবিতা পাঠকের সঙ্গে মোলাকাত হয় ক্ষতবিক্ষত আত্মমোহনরত সময়ের।

“ঊষা, এসেছে ঊষা। তাকে শ্রমিক করো।
যেন তার পায়ে থাকে মাথা নত শ্রাবণ, আর
সেই বুদ্ধুদের তরঙ্গ।”

“চাঁদ আর চন্দন নিয়ে ঈশ্বরের অভিসার শেষ হয়ে এলে একদিন
ঈশ্বরীর অন্ধকারে প্রবেশ করে শকুন। পৃথিবীর সর্বত্র তখন
উপভাষাভেদে শুধু অগ্রজ অন্ধকার মেয়েলি পাঠের ভিতর
মগ্ন হয়, স্তরীভূত প্রস্তরীভূত হয়। অন্ধকার, অন্ধকার, প্রতিটি
ইন্দ্রিয়ের ভাসমান বিষাদসিন্ধুতে কারা যেন মোমের মতন পোড়ে।”

“ভিখারি উইপোকা প্রতিদিন ঢুকে পড়ে আমাদের রক্ত ক্ষত পুঁজে
স্বপ্নগুলি প্রহেলিকা; স্বপ্নগুলি সারারাত থাকে চক্ষু বুজে
হাঁড়ি ভর্তি পোড়া নারী একদিন উড়ে যায় দূরদেশে আলুথালু চাঁদে
জলপথে স্থলপথে হৃৎপিণ্ড মুখে নিয়ে চোখ কানা হরিণেরা কাঁদে”

সামাজিক অবক্ষয়ের ক্ষত যখন কবিকে বা সৃজন কর্মীকে কষ্ট দেয় তখন সে তার থেকে পরিত্রাণের জন্য পালোনো নয় সেই যন্ত্রণার ভেতরের উপশমের পথ খুঁজে নেবার চেষ্টা করেন। কবির ভেতরে জেগে ওঠা প্রতিবাদস্পৃহা, অক্ষরের আয়ূধে প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষা জাগে। সময় লালিত সন্ত্রাসে পীড়িত লেখক এই চক্রান্তের স্বরূপ বুঝতে পারে, শক্তিশেল প্রস্তুত করে। পাঠকের কাছে সে পৌঁছে দিতে চায় স্বাধীন পাঠকৃতি নির্মাণের স্বাদ। যে পাঠককে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল অবজ্ঞার ও আত্মচেতনাহীন ভূমিহীনতায়। বাংলার সাহিত্যে বেনিয়ারাজ কায়েম হয়েছে ‘মিডিয়া সন্ত্রাসী’-দের বাজার বানানো ও বারানোর লিপ্সা থেকে। এই নিয়ন্ত্রণরেখার বাইরে, গড়ে তোলা রৌপ কেল্লা কেন্দ্রের বাইরে লিট্‌ল ম্যাগাজিনের উন্মুক্ত পরিসরে যে-সমান্তরাল যুদ্ধযাত্রা চলছে, জহর সেনমজুমদারেরা সেই পক্ষের অধিনায়ক, ক্যাপ্টেন। এটা ঠিক, সামাজিক ইতিহাসের অলঙ্ঘ্য বাস্তবতায় পড়ুয়াদের জগৎও স্ববিরোধিতায় দীর্ণ, নেতির গোপন ও প্রকাশ্য দাপটে ছিন্নভিন্ন। তবুও ‘সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদের নির্লজ্জ্ব প্রকাশ্য হিংস্রতা অতি সম্প্রতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে উপরি-কাঠামোর স্তরে অনিবার্য ভাবেই শুরু হয়েছে প্রতিস্রোত রচনার প্রয়াস। এই প্রয়াসের প্রথম শর্ত অবক্ষয়বাদের প্রতারক মুখোসগুলোর প্রতি তর্জনি সংকেত করা, যাতে নতুন নন্দন-প্রস্থান গড়ার আয়োজন ত্বরান্বিত হয় আরো। কবি ও পড়ুয়ার সৃজনধর্মী বিনিময় নতুন উদ্যমে শুরু হয় আর একবার।’ (তপোধীর ভট্টাচার্য) এই নতুম উদ্যমের বার্তা নিয়েই পাঠকের কাছে আসেন জহর সেন মজুমদারেরা, যেমন আসেন মণীন্দ্র গুপ্ত, রমেন্দ্রসুন্দর, বিজয় দে, সমর রায়চৌধুরীরা। শুরু হয়ে যায় ‘মহানগরিক বৈদগ্ধ্য, চাতুর্য ও যান্ত্রিকতার প্রতিস্পর্ধী নতুন নির্মিতির সন্ধানও; মূল্যবোধের উৎস হিসাবে পুনর্নিমাণের আকুতি নিয়ে জেগে ওঠে আদিকল্প, প্রত্নকথা, লোকপুরাণের ঐতিহ্যবাহী অনুপুঙ্খগুলি।

বাংলা কবিতার ‘আধুনিক নবপর্যায়’ প্রসঙ্গে জহর সেন মজুমদার লিখেছেন, ‘বাংলা কবিতা যখন ছকবাঁধা যান্ত্রিক ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণের অতীত হয়ে পড়ল এবং যেন তেন প্রকারে অর্থ বুঝাবার হাস্যকর পাঠ-প্রবণতার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসতে শুরু করল এবং সর্বোপরি দেখা দিল সেন্স অফ ফর্মের ভাঙন— তখন থেকেই বাংলা কবিতার আধুনিক নবপর্যায়। তাঁর কবিতাও এই ‘আধুনিক পর্যায়ের’ চূড়ান্ত উত্তরণ।


“…
কেমব্রিয়ান যুগ থেকে বহু কোষের মধ্য দিয়ে যে আলো
এসেছে, সেই আলোর ছাপাখানায় আমরাও ছিলাম
নিয়ন-অরগান-ক্রিপটন, নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহ।
খুলিভর্তি, কখনো ঊর্ধ্বগামী। কখনো নিম্নগামী।
ভেসে ভেসে
কেবল কেঁদেছি। আর আলোভ্রূণ স্তরে পৌঁছে মনে হলো
আমরাও পারি। ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে উঠে গ্রহলোক।
মড়ার মাথার মধ্যে নব রসায়ন। আমরা কি তাহলে
আবার জন্ম নিতে চলেছি? এ যেন নেগেটিভ ওয়াশ হচ্ছে
ডার্করূমে। তাহলে আবার আগুন আবার রান্নাঘর আবার মজা-পা। …”

(গ্রহকথা। বৃষ্টি ও আগুনের মিউজিক রুম)


“জীবাশ্ম ও টেরাকোটার মধ্যদিয়ে ওই এগিয়ে চলে আমাদের দেহদহননৌকা
ক্ষুধার্ত হই, বারবার ক্ষুধার্ত হই, মনখারাপ একধরনের মোম, আমরা
তাকে গলে গলে পড়তে দিই নীচে, নীচে, আর ক্রমশ গলাকাটা কিছু পায়রা
আমাদের চোখের সামনে সন্তানের জন্ম দিতে দিতে অভিশপ্ত সূর্যাস্তে মিশে যায়…”


“ক্রমশ এক গরম চাটুর মতো হয়ে উঠছে
মাটি। গ্রহপিঠ। এই ঘুমন্ত নরলোক।”

এই আত্মদহনের অস্তিত্বগ্রাসী দহন, দিশাহীন আগামী, মন খারাপের বিস্তৃত সাগরের সামনে দাঁড়িয়ে আমরাও, কবির মতোই। তবু খুঁজি “কোথায় কবিতার অনশ্বর মেঘ যার উপকরণ বৃষ্টিতে দগ্ধ অস্তিত্বে ফুটে ঊঠবে, চিরকালীন অগ্নিশিখার মতো।”

এই ‘অস্তিত্বগ্রাসী’ দহনে দগ্ধ সত্তরের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক ঝঞ্ঝায় দাঁড়িয়ে কবিতা তার স্বতন্ত্র চিহ্ন খুঁজতে চাইল। এই সময়ের দ্বিবাচনিক কল্পনার স্বতোৎসারিত প্রকাশ আমরা দেখি জহর ও সমসাময়িক কবিদের মধ্যে। বীতশোক ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, “এই পদাবলী আমি অশ্রুতে ধরি/জলে ভেসে যায় ছিন্ন পাতার ভেলা”। অথবা শম্ভু রক্ষিত, “তাদের সবল স্পর্ধার শক্তি ও গুটিয়ে থাকা ফুসফুস/তাদের ছোট ধাইমার দূরবীণ দিয়ে দেখা সৌজন্য/যা বলা যায় তাই করে” বা গৌতম বসু, “যম যামিনী, অম্বা, নিজেকে বোঝালাম—/পুত্র, বাশো-র ন্যায় সংক্ষিপ্ত হতে শেখো, কারণ, প্রাণ ওষ্ঠাগত, সময় অল্প”। জহর সেনমজুমদার লিখলেন, “আদি পৃথিবীর কৃতজ্ঞ ঘোড়াদের দেখে মন বলে, আজ সারা আকাশে/তাঁরা উঠুক। ঘুমন্ত জীবনভরে তারা উঠুক। আমি দেবো/পায়ের দাগ, গ্রন্থচাঁদ, জবাসিঁড়ি, চামড়াপুকুর। আমি দেবো/কলাপাতার ওপর ফুটে ওঠা আশ্চর্য নিথর এক জীবনদেবতা।”

এই তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণের যুগে কবিতার সামাজিক ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই, আবার কবিতাই তো এই সময়ের মানবিক শুশ্রূষার, নিরাময়ের উপায়, এই মতও অনেকেই রাখছেন। কবিতা নিয়ে সম্প্রতি ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর ওয়েবসাইটে সিস্টেম মসের আলোচনা একটু তুলে আনছি। “কবিতার প্রয়োজনটা কী?” এই জিজ্ঞাসার উত্তরে পিটারসন বলেন, “উত্তর দেওয়া খুব গুরুত্বের না হলেও বলা যায় যে, যদি তুমি এই বিশ্বে প্রতিটি কবিতা পুড়িয়ে ফেল এবং প্রত্যেক মানুষের মন থেকে কবিতা মুছেও ফেল, তবুও আগামীকালের দুপুরের মধ্যেই কবিতা ফিরে আসবে তোমার কাছে। কারণ, কবিতা ভাষার প্রতি ততটা সক্রিয় নয় যতটা স্বল্পতা ও আবেগগতভাবে জরুরি ও প্রাসঙ্গিক, এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভাষা যেমন নিজেই সক্রিয় হয়ে উঠবে কবিতার জন্য। যে-কোনো সময়ে কবিতা আসে, এর বীজ ও কাঠামো সহসা প্রতিভাত হয়ে ওঠে এর সুর, তাল, ছন্দ আর আবিষ্কারের ক্ষমতায়”। এই প্রসঙ্গে কমলকুমার মজুমদারের কথা স্মরণ করা যেতে পারে, “ভাষাকে যে আক্রমণ করে সেই ভাষাকে বাঁচায়”। ‘ভাষাকে বাঁচানোর’ এই কাজটি সবাই করতে পারেন না, সেই দম নেই সবার কলমের, এখানেই তাই শক্তি জহর সেনমজুমদারের মতো কবিদের, যাঁদের আক্রমণের দম আছে। আমরা তাই তাঁদের কাছে প্রণত হই, আমাদের ভাষাকে রক্ষার জন্য।

“এই কবিতাগুলি যেন ডানা ভাঙা, বন্ধ্যা ফুসফুসের ভেতর সারারাত জেগে আছে চারদিকে ভাঙা রিক্সা, চারিদিকে ভাঙা চাঁদ, দুইজন অজ্ঞ নারী রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে একটি কুকুরের সঙ্গে কথা বলছে;
কুকুরের দুই পায়ে শেকল কুকুরের দুইপায়ের বাড়িঘর;
স্বদেশের দ্রাক্ষা ক্ষেতে দূর থেকে উড়ে আসে বহু শতাব্দীর মৃত কাটামুণ্ডু”

আমি, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কবিতা হল আমাদের অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের সেতুবন্ধনের হাসি কান্না। কবির কাছে কবিতা কী? এই জিজ্ঞাসায় জহর সেনমজুমদারের নিজের কথাই উল্লেখ করতে হয়। শ্রেষ্ঠ কবিতার সূচনা গদ্যে তিনি লিখেছেন, “একজন আত্মমগ্ন কবিও সারাজীবন প্রাণপণে তার লুকিয়ে লিখবার পর, বহুদিন পর, আমিও আজ খুঁজতে বার হয়েছি আমারই লুকিয়ে পড়া ছলপুট শ্রেষ্ঠতাকে; হাস্যকর শ্রেষ্ঠতাকে; গহনগভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন বনভূমির ভেতর হ্যারিকেন জ্বালিয়ে সরু সর্পিল পথ ধরে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছি আর একটার পর একটা সাপ সুরুৎ করে ঢুকে যাচ্ছে ঘাসের তলায় জঙ্গলের ফাঁকফোকরে; অনেকটা যেন ওই শ্রেষ্ঠ কবিতারই মতো; সারাক্ষণ চলছে লুকোচুরির খেলা”। এই লুকোচুরির খেলায় মগ্ন কবি লিখে ফেলেন,

“… তুমি চিরকাল মূলাধারে ক্রমাগত
কাঁকড়া ও কবীরের জন্ম দাও, আমরাও জলপাই লন্ঠন জ্বালাই, মনে হয়
পৃথিবীর শস্যক্ষেত থেকে ময়ূরের কুটির শিল্প নিয়ে তোমার বংশীবাদক এখনই আসবে
(তোমার পদছাপ)

অথবা,

“গতকাল বলে কিছু নেই, আগামীকাল বলেও কিছু নেই।
আছে শুধু সমকাল, মাথা নত কম্পমান সাঁকো।
মাতৃচক্র ছাপাখানায় বিষ থেকে ওঠে যেই
বলি শুধু মাথা আঁকো, চোখহীন চোখ ধরে রাখো।”

এই চোখহীন চোখ ধরে রাখাই জহরের কবিতার রহস্যশক্তি, এই জন্যই তিনি ভিন্ন, স্বতন্ত্র। বাংলা কবিতার দিকে তাকালে প্রকৃত পাঠক অন্য রূপের সঙ্গে পরিচিত হন, যা কবিতায় আগে বা পরে আর নেই।

সম্ভবত সমর রায়চৌধুরীর ‘ক্রুশেড’-এই জহর সেনমজুমদারের কবিতা পড়ি, প্রথম, একটি কবিতার সিরিজ ছেপেছিলেন সমরদা। এক রহস্যের জগতে নিয়ে যাওয়া কবিতা, তখন ও এখন একটা বিষয় লক্ষ করেছি: জহরদার কবিতা মূলত প্রতিষ্ঠানের সমান্তরালে বুক চিতিয়ে চলা লিট্‌ল ম্যাগাজিনগুলোতেই ছাপা হয় বেশি, এবং সিরিজ কবিতা। পাঠককে সেই রহস্যের দ্বীপে পৌঁছে দিতে দুটো শর্ত কাজ করে, অন্তত আমার তাই মনে হয়, একটি কবিতা নয় একটির পর একটি কবিতার আঘাত দরকার, যে-কবিতার ধরন পাঠকের পাঠ অভিজ্ঞতায় আগে ছিল না। যেমন জহর, যেমন বিজয় দে, যেমন অগ্রজ রমেন্দ্রকুমার বা বিনয় মজুমদার, এর পরের বারীন ঘোষাল, স্বদেশ সেন। কবিতা কাছে নিয়ে আসে, ব্যক্তি কবিকেও। জহরদাকেও অনুভব করলাম সেই নৈকট্যে। ১৯৯৪-এর এক শীতের আড্ডায় হাতে দিলেন তাঁর ‘শ্রদ্ধেয় প্যাঁচা’, লিখে দিলেন “পরাবাস্তবতার অর্থ নিজের জগতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা…”। সুস্থতাকে তাঁর কবিতার ভাষ্যে খুঁজতে থাকার সেই যাত্রা ক্রমশ অন্তহীন হয়ে উঠল।

শেষ পাতা

Facebook Comments

পছন্দের বই