লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বইমেলার ডায়েরি: সেলিম মণ্ডল

০৮/০২/১৯

দিনটা শুরুই হল খুব খারাপভাবে। এক ফ্ল্যাক্স গরম চা পায়ে পড়ল। তীব্র জ্বালা করছে।  আজ কেউ আসবে না। শুরু দিকটা একেবারেই একা সামলাতে হবে। একার পক্ষে টেবিল সাজানো, ভিড় হলে বিল করা খুব চাপের। নাহ্‌, ভয় পাইনি। একটা সময় গেছে পত্রিকার সমস্ত কাজ একাই করেছি। প্রেসে পত্রিকা ছাপাতে দিয়ে আসা থেকে শুরু করে মাথায় করে নিয়ে আসা। যাইহোক, অনেকটা আগেই বেরিয়েছি, কিন্তু স্টেশনে গিয়ে দেখি ট্রেনের গণ্ডগোল। লাইনে কাজ চলছে। ট্রেন লাইন ছাড়া আর তেমন রুটও নেই। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ট্রেন পেলাম। উলটোডাঙায় দেখা হয়ে গেল আনসার কাকু আর অমৃতাভদার সঙ্গে।

টেবিল সাজাচ্ছি। এরমধ্যে দু-একজন ক্রেতাও চলে এসেছে। কাউকে বলছি আপনি একটু ঘুরেফিরে আসুন, কাউকে বা আধসাজানো বইপত্রের মাঝেই বিল করে দিচ্ছি। এরমধ্যে দুটি মেয়ে এসে হাজির। অনেকক্ষণ বইপত্র দেখছে। না নিয়ে চলে গেল। একটি মেয়ে আবার এল বইপত্র দেখল। নিল না। তারপর টেবিলের উলটোদিকে দাঁড়িয়ে। কী ব্যাপার কে জানে!। মেয়েটি কি কিছু বলবে? প্রপোজ ডে। তারপর এক সুন্দরী টেবিলের সামনে, কিছু যেন খুঁজছে! তারপর আবার টেবিলে এল। ‘ফারেনহাইট দিন?’ বলে একটা একশো টাকার নোট ধরিয়ে দিল। ‘কোন নির্দিষ্ট দাম নেই। কত কাটব বলুন?’। ‘আমি জানি। ফেসবুকে দেখেছি। পুরোটাই রাখুন’। মেয়েটিকে চিনি না। নামটাও অচেনা। লিস্টেও সম্ভবত নেই। ভালোবাসার দিনে আর কিছু কি চাওয়ার থাকে?

ট্রেনের ধকল নিমেষে উবে গেছে। আর একা নেই। শিবাশিসদা আর নীলাদ্রি এসে হাজির। কিছুটা হালকা। দেবু, শতানীক প্রেস থেকে ঢুকতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। নতুন তিনটে বই ঢুকবে। ফুকো, কথানদী ও কাড়া-আকাঁড়া গদ্যগুচ্ছ। পঙ্কজদা, উদয়ন ঘোষের বাকি আড়াইশো দিয়ে মিষ্টির ঘুষ দিয়ে গেল। বইটা যেভাবেই হোক আমাকে নিয়ে রাখতে হবে। রাণাদা, আনসারকাকু, সম্রাটদা, শাশ্বতীদি, উত্তমদা, সম্বিতদা, বুদ্ধদেবদা, ঈশিতাদি, সোহেলদা, ইচ্ছেদি, সংলাপ অনেকেই টেবিলে এসেছিল। আড্ডা হল। ভিড় খারাপ ছিল না। আজ ফিসফ্রাই খাওয়ার লোক কম ছিল। প্রকাশকের থেকে জানতে পারি ‘লবণ খেতের জোনাকি’র প্রথম সংস্করণ শেষের দিকে।

সব মিলিয়ে কখন যে টেবিল গোছানোর সময় হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। শিয়ালদাতে পৌঁছে দেখি চলছে লাইনের সমস্যা। দশটা পাঁচের লোকাল ছাড়ল এগারোটায়। প্রত্যেকদিন অরূপদা একবার করে খোঁজ নেবেই। আজ কি অরূপদা ভুলে গেল? ভিড় ট্রেন থেকে নেমে দেখি মিসড্‌ কল। হ্যাঁ, অরূপদা। ফোন করতে দেখি চিন্তাগ্রস্ত মানুষটা। লাইনের সমস্যা কাল লোকজন বেরোবে তো? তারপর বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে শুনছি। আমি বেশি কিছু বলিনি। হাসলাম। ভালোবাসার দিনে শুধুই হাসতে হয়। বিষন্নতা আমাদের অন্ধকারের জোনাকি। তাকে আলোতে আনতে হলে হাসতে হয়। হাসতে হাসতে অনেকটা দূর যাওয়া যায়। যেখানে দূরত্বের পথে অজস্র গোলাপ ফুল স্বাগত জানাই আমাদের।

Facebook Comments

পছন্দের বই