লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বই, আমরা কেন পড়ি?

‘বই আমরা কেন পড়ি?’

[‘বই, আমরা কেন পড়ি’ — আমরা আমাদের ফেসবুক প্রোফাইলে এই প্রশ্নের মতামত চেয়েছিলাম। সেখান থেকেই ১০ জনের মতামত।]

মানুষ যেভাবে গল্পের পাকে পাকে জড়িয়ে পড়ে, আমিও সেভাবে বইয়ের পাকে পাকে।
বই আমার কাছে আয়না। পুকুরের হাঁস।জীবন।দাউদাউ এক আশ্রয়।
সুবীর সরকার

নিজেকে খুঁজতে। লেখার মধ্যে নিজের সন্ধান করি। বই একটা নিজস্ব, গোপন জায়গা দেয় এই খোঁজ করবার; ভরসা দেয় আত্মসমীক্ষার। এই খোঁজ কারো সাথেই ভাগ করবার নয়, একান্তই নিজস্ব। এই গোপনতা অন্য মাধ্যমগুলি দিতে পারে না। তাই বইই পড়ি।
প্রকল্প ভট্টাচার্য

আমার বিশ্বাস সৃষ্টিশীল ভূমাজল মানুষের বই একটা অন্যতম মাধ্যম মন ও মনন ধারণের। নিজেকে মুহূর্মুহু আবিষ্কারের, অন্তরের প্রদীপকে অম্লান রাখার জন্যে সর্বোপরি সমপার্শ্বিক পরিবেশ প্রতিবেশের অণু-পরমাণু ধাক্কা থেকে সুকোমল মনকে বোধিমূলে স্থির রাখতে বইয়ের বিকল্প নেই। আমার কাছে বই একটা অহংকারও বটে। রক্ষাকবজ। সব কথা লিখে, ছবি দিয়ে, গান গেয়ে প্রকাশের একক সাধনা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। কিন্তু সহৃদয় সামাজিক সকলেই কিছুটা অবশ্যই। আমরা যারা লিখতে জানি না, আমাদেরও মন আছে। আমাদের সজল করুণ আখিতলে কালশিটে দাগ পড়ে বেদনা আরক্তিম হয়ে ওঠে কখনও। বই তখন অঝোর বারিশের সুর তাল লয়। জ্ঞানের কথা বললে, বিশ্বকে ভ্রমণ না করেও কল্পপ্রদীপে ছুতে পারার চোখ দেয় বই। ভালো বই ভালো বই শুধু ভালো বই। ছোটোবেলায় ভাবতাম বইয়ে সব সত্যি লেখা থাকে, বইয়ের কথা মিথ্যা হয় না। ভগবানকে চোখে না দেখলেও বই ছুঁয়ে দিব্যি এখনও খাই।
দীপংকর দেবনাথ

সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রটি অবশ্য দুই ধারায় বহমান। আর পাঠরুচি মূলত ভোগবাদী ধারা অনুসরণ করলেও বাংলাদেশে আমাদের মতো গেঁয়ো ভূতের বই পড়াকে ঠাট্রার ছলে দেখা হয়। এতো বই পড়ে কী হয়! বাবার কথা-বই পড়ে কী না হয়। কেউ কী বই পড়ে ঠকেছে এমনতো দেখিনি। তবে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই শুদ্ধ গণতন্ত্র বা যুক্তিবাদী ধারার অনুসারী প্রগতিভাবনা অনুপস্থিত নয়। নয় প্রগতিবাদী গ্রন্থাদির পাঠ। আমাদের প্রজন্মরা সারাদিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে, কিন্তু মননশীল বুক। বই ছাড়া তাদের মধ্যে শুভবুদ্ধি ও মানবকল্যাণচিন্তা হয়তো নান্দনিকতার সঙ্গে এক ধরনের ইতিবাচক সমঝোতায় পৌঁছতে পারবে না। কারণ আত্মঘাতী চেতনা ব্যতিক্রমী, তা মানুষের স্বভাবসুলভ নয়। অস্তিত্ব রক্ষাই শেষ পর্যন্ত তার চেতনায় বড়ো কথা হয়ে ওঠে। এটাই মানবিক সত্য। তরুণরা বই না পড়লে ব্যাক্তি মনস্তত্ত্ব, সমাজ মনস্তত্ত্ব কী করে বুঝবে। কী করে মানুষের কাছাকাছি যাবে। প্রেম করার জন্য হলেও বইপড়া উচিত।
জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই। কষ্টের দিনগুলোতে- হাসির দিনগুলোতে- অবসরের দিনগুলোতে-উৎসবের দিনগুলোতে-ভ্রমণের দিনগুলোতে-একাকীত্বের দিনগুলোতে-একসাথে থাকার দিনগুলোতে-বন্ধুত্বের দিনগুলোতে বইপড়ুন, বই বড়ো বন্ধু।
হাসান ইকবাল

কোনো কিছু বা বিশেষ কিছু জানা ও তার সাথে পরিচিত হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হলো বই।
বই থেকে যেমন অনেক অজানার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়, তেমনি আবার যুগ যুগ ধরে শিল্পের রসাস্বাদনেরও একটি অন্যতম মাধ্যম বই। কখনও তা থেকে কিছু শিখি, কখনও তা বিনোদনের মাধ্যমও হয়ে ওঠে।
আমি বই পড়ি নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য। বই আমার ভাবনা, শিল্পবোধ ও জানার আকাঙ্ক্ষাকে পরিপূর্ণ করে জীবনকে প্রসারিত করতে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে।
আরও একটা কথা এখানে বলার যে, এখন তো চর্চা ও বিনোদনের অন্য অনেক মাধ্যম রয়েছে, তবে বই কেন?
এর উত্তর হয়তো বহুযুগ ধরে ধাবমান ইতিহাস- যা আমার রক্তে স্নায়ুতে অনুভুতির সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে মিশে আছে ভাব, ভাবনা, ভালোবাসা হয়ে।
যদিও বই পড়ার সময় কোনোদিনই এতকিছু মাথায় আসেনি, যেমন আসেনি মা কে মা ডাকার সময়। এটুকুই।
কৌস্তভ কুণ্ডু

প্রথমত ছোটবেলার অভ্যেস। অন্তত দু’পাতা বই না পড়লে ঘুমই আসত না। এমনও হয়েছে পরদিন ফেরত দিতে হবে বলে সারারাত পড়ে বই শেষ করে ভোরবেলা ঘুমিয়েছি৷
বইয়ের মধ্যে খুঁজে বেড়াই নিজেকে, নিজের চাওয়া-পাওয়াগুলো, নিজের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো।
যখন পাহাড়ে যেতে চেয়েও সংসারিকার নোঙরে আটকে থেকে মন চুঁইয়ে রক্ত পড়ে, উপশম খুঁজি অবধূত আর শঙ্কু মহারাজের অভিজ্ঞতার ধুলোয়।
বইয়ের পাতায় ছড়িয়ে থাকা মণিমানিক্যের দ্যুতিতে নিজেকে দেখতে চাই। তাই, বই পড়ি।
জয়তী ভট্টাচার্য অধিকারী

যেমন আমরা ক্ষুধা লাগলে খাবার খায়। তেমনি জ্ঞানের পরিধিকে বৃদ্ধির জন্য বই আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচন করে। নানা বিষয়ে পটভূমিতে আমাদের চোখ খুলে দেয়। যার আমরা লেখনীর সাথে জড়িত তাদের পকেটে টাকা না থাকলে একটি কবিতা একটি গান একটি নাটকের পান্ডুলিপি আমরা যখন তখন বের করে দিতে পারি। এক্ষেত্রে একজন শিল্প-সাহিত্যের মানুষ অনেক বেশি ধনী। বই পড়লে আমাদের লেখনীর ফল্গুধারা আরো শানিত হয়।
আবুল হাসান তুহিন

১) যা কিছু অজানা, তার খামতি পূরণ করতে বইয়ের মতো অব্যর্থ অস্ত্র আর নেই।
২) নিখাদ মনোরঞ্জন।
৩) একাকীত্বের সঙ্গী।
৪) মননের রসদ।
৫) নিজের লেখার প্রয়োজনে সঠিক তথ্য সংগ্রহ।
৬) ছোটোবেলার নেশা।
৭) অস্থির মনকে শান্ত করতে।
৮) মানবিক অনুভূতিগুলোকে চাঙ্গা করতে, অনুভবে ডুবে যেতে।
৯) সাহিত্য রস আস্বাদন করতে।
১০) বিভিন্ন ভাষা, শৈলী, বানান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে।
১১) এক জীবনে বহু জীবন যাপন, এক স্থানে থেকে বহু স্থানে গমন আর এক সময়ে থেকে অগণন কালে ভ্রমণের আনন্দ নিতে।
১২) বিভিন্ন ছবি ও অলঙ্করণ দেখে তাদের মাধ্যমে আনন্দলাভ ও নতুন কিছু জানার আগ্রহ পূরণ করতে।
১৩) অবসর যাপন।
১৪) কোনো বিষয়ে মনে খটকা জাগলে তার নিরসন ঘটাতে।
১৫) আত্মিক উত্তরণ ঘটাতে।
১৬) বিভিন্ন দেশ কালের মানুষ ও তাদের আচার ব্যবহারের সম্বন্ধে সহজে পরিচিত হতে।
১৭) প্রিয় লেখকের সৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত হতে।
১৮) আমার আশেপাশের মানুষদের মধ্যে বইপড়ার সুঅভ্যাস সংক্রমিত করতে।
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

বই হলো অতীত আর বর্তমানের মধ্যে থাকা সাঁকো।
অতীত ও বর্তমান জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিতের মনের ভাব আয়ত্ত করার মাধ্যম। তাদের সাথে সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরী করে বই। এবং নিজের জ্ঞানের পরিধি বিকাশিত করে থাকে। ভাষা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, পারদর্শীতা ইত্যাদি জানার মাধ্যম।
আত্মত্যাগী হতে সাহায্য করে বই। মানুষের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম হলো বই পড়া।
বই পড়ে কারোর জীবনে ক্ষতির সাধন হয়নি বরং জ্ঞানের আলো বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধ করেছে।
বই মানুষের হৃদয়কে কোমল করে এবং বাস্তব জীবনে প্রভাব ফেলে জীবনকে পরিচালনা করার জন্য।
তাই জীবনকে সঠিক এবং সুন্দরতম ভাবে পরিচালনা করার জন্য ভালো বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
মোহাম্মদ রাজু আহম্মেদ

গাঁজার নেশার মত এটাও একটা নেশা। তবে এর কোন সাইড এফেক্ট নেই বললেই চলে। শুয়ে শুয়ে উপন্যাস পরার মজা নতুন বউয়ের মজাকে হার মানায়। মোদ্দা কথা ভালো লাগে তাই পড়ি। জ্ঞানটা পেছন পেছন আসে। পেছনে তাকিয়ে যদি দেখি জ্ঞান পালিয়ে গেছে তবুও বই পড়ব। ওই যে বললাম গাঁজার নেশা।
সুরঞ্জন মণ্ডল

Facebook Comments

পছন্দের বই