লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বিপ্লব চক্রবর্তীর কবিতা

চিত্র: জর্জিয়ো দি চিরিকো

ঠাপ দিয়ে যাচ্ছি
যাচ্ছি
খুব দ্রুত
জোরসে
দিতে দিতে বুকে হাত দিতে যাব
দেখি
শরীর খুঁজে পাচ্ছি না
শরীর নেই
যোনি জাতীয় কিছু একটা
আর
দুটো পা কেবল

এ অবস্থায়
আমি ভাবতে থাকি

যে কারো মুখ বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে
যাদের বহু ব্যর্থযাবৎ আমি কামনা ক’রে এসেছি

কিন্তু পারছি না

তারপর দেখি
এক বিলাসবহুল বাড়িতে আমি
সেখানে সেজেগুজে থাকা সব মহিলারা
আমি কি দরজায় তালা দিয়ে এসেছি
যেহেতু দিইনি
শুনেই
ধপ্‌ ক’রে মাটিতে পড়ে গেল একজন
আর খেলনা পুতুল হয়ে গেল
সহজে পোশাক খুলে
তার
হাত পা মাথা আলাদা আলাদা ক’রে রাখা হচ্ছে
আর সেই ফাঁকে
ঘর থেকে বেরিয়ে পরি আমি

একটা বয়স্ক বুড়ো রাত
উড়ন্ত সব গলি
সেখানে কোনো উৎসব চলছে
সেজেগুজে ছোটো ছোটো মেয়েরা উড়ে যাচ্ছে
একটা বারোতেরো বছরের মেয়েকে
নিচ থেকে দেখে
আমি হাত নাড়াই
সিনেমার মতো হেসে উঠি
মেয়েটা সিরিয়ালের মতো হেসে উড়ে চলে যায়
আরও একটি মেয়ে ভেসে এলো
সে একটু বড়
তারপর আমার পাশ দিয়ে
বুক
বুক
কেবল বুকদের মিছিল
যোনিদের মিছিল
শরীর নেই
আমি ছুঁতে চাইছি
খুব সহজেই ছোঁয়া যায়
ঠাপ দেওয়া যায়
এ অবস্থায় আমি যে কারও শরীর কল্পনা ক’রে নিতে পারি
যাদের আমি কামনা ক’রে এসেছি

কিন্তু পারছি না

এরপর হঠাৎ-ই
আমি
দশ বছর আগের অন্ধকার ক্লাস রুমে ঢুকে যাই
আমার বয়স দশ বছর কমে যায় না
আমাদের সেই অধ্যাপক
এখনও
ক্লাসে বই বিক্রি করছে
পনের পারসেন্ট ছাড়ে
প্রত্যেকে সেই বই কেনে
আর
একই ঘরের উলটোদিকে
আমার ছোটোবেলার সেই দিদিমণি এসেছেন
আমাদের কলেজে ক্লাস নিতে
আমি ছাত্রদের সঙ্গে ওনার পরিচয় করিয়ে দিই
ক্লাস শুরু হবে
আমি বেরিয়ে যাব
হঠাৎ ক্লাসে এত গোলমাল কীসের
ব্যাপারটা যে ঘটছে আমি লক্ষ করি নি
আর একটা ক্লাস চলছে
আমাদের ঠিক উলটোদিকে মুখ করে
আমার সহপাঠীরা বসে আছে
সেখানে আমিও বসে আছি

এক-ই ঘরের দু-দিকে দুটো ক্লাস

অথচ ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক ছন্দেই ঘটছে
এতে কারও কোনোরকম মাথাব্যথা নেই
কেও আশ্চর্য হচ্ছে না
আমার ছাত্ররা না
আমার সহপাঠীরা না
এমনকী আমার দিদিমণিও না

যেন এভাবেই ক্লাস হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে

উলটো দিকের
আমাদের সেই অধ্যাপক বই বিক্রি ক’রে যাচ্ছেন

এ অবস্থায়
আমি এক প্রতিবাদী বন্ধুর মুখ কল্পনা করি

কল্পনা করি

কিন্তু খুঁজে পাই না

শরীর খুঁজে পাই না

দেখি
বেঞ্চের নীচে
বন্ধু একটা খেলনা পুতুল হয়ে
পড়ে আছে
সহজে পোশাক খোলা যায় না
সহজে
হাত পা মাথা
আলাদা আলাদা করা যায়

তারপর
আবার
সেই বিলাসবহুল বাড়িতে আমি
যেখানে
খেলনা পুতুল মেয়েটির
হাত পা মাথা পড়ে আছে মাটিতে

সেগুলো কুড়োই

আলাদা আলাদা ক’রে রাখা
বন্ধুর শরীরের সাথে
মিশিয়ে সব এক ক’রে দিই

ছেলেপুতুলের কখনো পুরুষাঙ্গ থাকে না

এ অবস্থায়
আমি
এক অদ্ভুত শরীরের স্বপ্ন দেখি
স্বপ্ন দেখি

Facebook Comments

পছন্দের বই