লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বিপ্লব চক্রবর্তীর কবিতা

স্বপ্ন

কাল রাতে মাইক্রোওভেনের ভেতর আমি… দেখি শতানীক জলটুঙ্গির প্রুফ দেখছে… অয়ন যুগপৎ থিসিস লিখছে আর এসএমএস করে যাচ্ছে… বলল, ‘ভাগো বাঁড়া’। আমি খিস্তি মারতে যাব, দেখি একটা হাই ক্যাচ উঠেছে… সেই দশ বছরের আমি… বিল্টু বলছে, ‘ক্যাচ সন্তু ক্যাচ… না পারলে পরের ম্যাচে বাদ’… বলটা আর নীচে নামছে না… মাটি দিয়ে একটা এরোপ্লেন যাচ্ছে… জানলা দিয়ে মুখ বার করে নন্দ বলছে, ‘এত পড়াশোনা করে ছেঁড়ো… আমি ব্যাঙ্কক চললাম…’ হঠাৎ দেখি, একটা বড়ো টিকটিকি তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে! বলে, ‘আমাকে চিনতে পারলে না হে… কবিতা লেখার সময় আমি টিকটিকি হয়ে যাই হে’… ট্রেনের শব্দ… দেখি ছেড়ে দিয়েছে… দৌড়চ্ছি… হিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের গোলামকে দেখলাম দেবুকে বাইকের পেছনে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে… বাইকটা প্ল্যাটফর্মের মধ্যে দিয়েই ছুটছে! আমি প্রাণপণে চেষ্টা করেও ধরতে পারলাম না…

ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে ফুটবল হয়ে গেছি… ধান হওয়া যেত, হইনি। স্বপ্নের ভিতরই ভাবছি, এ তো স্বপ্ন… সত্যি নয়! কিন্তু ঘুম আর ভাঙছে না। ক্রমশ ড্রপ খেয়ে খেয়ে যাচ্ছি… যারা খেলছে তাদের আবার পাও নেই… তবু খেলা চলছে… বেশ জমে উঠেছে… ঘুম আর ভাঙছেই না আমার। ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে ফুটবল হয়ে গেছি… ধান হওয়া যেত, হইনি।

দিদিমণি নাকি আমার স্বপ্ন দেখে! আমিও মাঝে মাঝে দেখি… রাস্তায় দেখা হলে কেও কারো সাথে কথা বলি না। আমার অতীতের সেই দিদিমণি… বাবার পেনশন চালু হয়নি… আমাকে পড়িয়ে একশ টাকা পেতো… তাই দিয়ে সংসার চালাতো… স্বপ্নে আসে আমার সেই দিদিমণি… দিদিমণিকে ইলিশ মাছের চেয়েও আশ্চর্য সুন্দরী দেখায়! আমরা একসাথে বসে ক্রিকেট দেখি। সেলিম মালিক-ঈজাজ আহমেদ ব্যাট করছে… প্রসাদকে টিম থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে দিদিমণি… তারপর আবার আমাকে পড়াচ্ছে… আমি একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছি… ঘাস কি গাছ? ভারত কি কোনোবার ফুটবল বিশ্বকাপ খেলেছে? আমি কি তোমার সাথে সিপিএমের মিছিলে হাঁটতে পারি? শচীন ক্যাপ্টেন হলে কি কাম্বলি চান্স পাবে? ইলিশ মাছের চেয়েও সুন্দরী দিদিমণি এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে হঠাৎ অন্ধকাক হয়ে উড়ে চলে যায়… দিদিমণি আজও আমার স্বপ্ন দেখে? আমিও দেখি! গল্প করি… খেলা দেখি… রাস্তায় দেখা হলে কেউ কারো সাথে কথা বলি না… ইলিশ মাছের চেয়েও সুন্দর আমার দিদিমণি অন্ধকাক হয়ে গেছে!

গাছেদের যৌনাঙ্গ থাকে না… গাছ হয়ে যাই… পিঁপিড়ার পিঠে চড়ে উড়ে বেড়াই… নদী কেঁচো হয়ে যায়… এখন সারা রাত সারা দুপুরজুড়ে টিকিটিকিদের স্বপ্ন কেবল! ডিম শুধু টিকটিকির ডিম… যদি টিকটিকি হয়ে যাই! গাছেদের যৌনাঙ্গ থাকে না… গাছ হই… বৃদ্ধকাক হয়ে বাসা বাঁধি তোমার শরীরে মগডালে!

আর স্বাভাবিকভাবেই তখন নারকোল হয়ে যাই… চারপাশে কেবল নারকোলের গন্ধ! নাড়ুর শরীর আমি! পাটিসাপটার মজ্জা! ছাঁচে ফেলো, দেখো, অদ্ভুত নারকোল সন্দেশ কেমন পাখি হয়ে উড়ে চলে যায়! সন্দেশের শরীর আমি… চারপাশে নারকোলের দারুণ গন্ধ… নারকোলের মালার ভিতর অন্ধকারে শুয়ে পরিপূর্ণ এক নারকোলের স্বপ্ন দেখি…

Facebook Comments

পছন্দের বই