লেখক নয় , লেখাই মূলধন

মোহিত তন্ময়ের কবিতা

যেন পুড়তে পুড়তে শেষ হয়ে আসা একটা সিগারেটের ভিতর আত্মহত্যা করল তোমার স্নায়ুতন্ত্র। ভূগোলের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও তোমার ছেঁড়া শার্টের আধখানা বোতামই শুধু জানল একটা নদীর সম্পূর্ণ গতিপথ।

এবছরও মৌসুমী বায়ু দেরীতে এসেছে তাই দূরবর্তী তারার দিকে এখনো বেশ মজাতেই তাকিয়ে আছি।

মাংস অস্থি ও মজ্জার ভিতর ছড়িয়ে থাকা শব্দ ক্ষনিকের কবিতা হয়ে ওঠে। এইসব কবিতার ভিতর রোদ পড়ে আসে, বাড়ে এঁটো বাসনের আওয়াজ।

দিনের শেষে, এক শরীর নিঃশ্বাস টেনে দেখি…
ততক্ষণে কোথাও একটা
মর্মান্তিক আক্সিডেন্ট হয়ে গেছে…

অবশেষে প্রেম এল কামার্ত রাক্ষসের মতো
বন্ধু, এখন কীভাবে ঘরে ফেরা যায় বলো? বহুদিন হল একটা অন্তর্বাহিনী নদীর মধ্যে প্রেমিকার মুখ খুঁজেছি। তপ্ত বালির সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে দূর থেকে শুধু দেখেছি, মরুভূমির সাথে ক্যাকটাসের অবাধ যৌনতার কারণেই পৃথিবীতে মরুদ্যান সৃষ্টি হল।

পাশাপাশি দাঁড়ালে এতো সহজ দু-জন। শরীরের আঁশ খুলতে খুলতে চকচক করে ওঠে নদী আর নৌকো।

সেই কবেই সমুদ্রের যৌনতা ভেঙে দেখেছিলাম
যোনি-লিঙ্গ সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। খেলনার মতো। এই বিস্তীর্ণ জলাভূমি— যেখানে জ্যোৎস্নার ভিতর একটি কুকুর তার হারিয়ে যাওয়া দাঁত খুঁজছে… খুঁজেই চলেছে…

এই দৃশ্য দেখে ডাইনিং টেবিলে বসি

খেতে পারি না …

দেখি, প্রতিটা ঝোলে দেওয়া মৃত মাছের শরীরে লেগে আছে নিষ্ঠুর জেলের যৌনতা

স্তন থেকে ক্রমশ মাংস খসে পড়লে নদী ফাঁকা হয়ে যায়। নির্জন জেটিঘাট। ফাঁকা শ্মশান। পাহাড়ের নির্জনতায় নদী এখন শুধুই অন্ধকারের। কুটুম্ব জোনাকিদের সমস্ত যাতায়াতের পথ বন্ধ করা হল। শুধু একটি বাজেয়াপ্ত প্রেমিকের লাশই ভালো ছিল, হওয়ার থেকেও হালকা বলে তাকে কেউই আটক করেনি

বিচ্ছিরি পৃথিবী থেকে আবার একটা সকাল গড়িয়ে আসছে তোমার দিকে। দ্যাখো। ভোরের প্লাটফর্মে রাতের মাংস পড়েছে। চামড়া ও শীতকালের ইতিহাসে থেমে গেছে মৃত প্রেমিকের যুদ্ধ। পোয়াতি মেঘের দিকে তাকাও, তারপর আকাশ থেকে ঝেঁটিয়ে ফেলে দাও পাখিদের যৌনতা।

সঙ্গমের আগে নিজের চিতা নিজেই সাজিয়ে নাও
আজ আকাশে আর কোনো তারাই বেঁচে নেই…

আচমকা ভাতঘুম ভেঙে গেলে যতটা স্বপ্ন মনে থাকে ততটাই বিকেলের দৈর্ঘ্য। একদিন আমি জোর করেই ঢুকে পড়লাম এই বিকেলের শরীরে। দেখলাম, একটি বাচ্চা মেয়ে কানামাছি খেলতে খেলতে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে আধখাওয়া এক মফস্সলের ভিতর। বিকেল ও সন্ধ্যার বিভাজন রেখা বরাবর নিঃশ্বাস ফেলছে একদল কঙ্কালসার মানুষ। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। গা গোলাচ্ছে। আমি বেরিয়ে এলাম। ছুটতে ছুটতে দূর থেকে দেখলাম বিকেলটি কাঁদছে, কাঁদতে কাঁদতে বলছে— আবার আসবেন।

Facebook Comments

পছন্দের বই