লেখক নয় , লেখাই মূলধন

শাশ্বতী সান্যালের কবিতা

পারদ-হে প্রিয়


এখন জ্বরের দিন। তোমার দাঁতের স্বাদ ভালো নেই

ডাঁসা আপেলের মাংসে ভরে আছে ফ্রুটবাস্কেট
তাদের গোলাপি স্তনে পুরুষের দংশনের দাগ
খুঁজে পায়নি নারীরক্ষা সমিতির হুজুগে বাবুরা…

এখন জ্বরের দিন। ডুমোডুমো নীল মাছি
বসে আছে ফলের দোকানে।


সোরা ও গন্ধক মিলে তৈরী হয় কোনো কোনো পুরুষ শরীর
সামান্য জ্বরের আঁচে লোহাচুর দুমুঠো মিশিয়ে
বিক্রিয়াকঠিন তার মুখ দেখতে ভালোবাসে মেয়েমানুষেরা

ডোরাকাটা গামছা দিয়ে গা মুছেছ কতদিন পরে…
প্রথম ভাতের স্বাদ আর তন্দ্রা নিয়ে
ভেজা বারুদের টিন মেলে দিয়ে বসেছ রোদ্দুরে

গোলাপি মুখের আভা। সাঁঝের পোহাল শেষে
খুব মৃদু কুপি জ্বলে উঠেছে কোথাও

রক্তের ভিতরে যে লোহা পুষে রেখেছি, সে কথা
জ্বরের বিকেলে আজ, ভুলে গেছ?
ভুলে যেতে চাও?


দু-এক ঘর পারদ উঠে গেলে আবার তো জড়িয়ে ধরবে
আবার বিষের মতো ঘুলিয়ে উঠবে নীল জল
আদিবাসী মেয়েটির গোড়ালির ক্ষত থেকে, পুঁজ থেকে,
হাঁড়িয়া অমনিবাস থেকে
তোমাকে শক্ত করে তুলে আনব বিছানায়, সফেন চাদরে

ভয় নিয়ে, আশঙ্কা নিয়ে,
ওষুধের স্ট্রিপে সেই পুরোনো সোঁদর গন্ধ নিয়ে
পাহাড়ে নদীতে বনে পেতে দেব শতরঞ্চিগুলো
দু-ঘর একঘর ক’রে
পুরোনো জলের নীচে দেখা দেবে কবেকার বিষ

সময় ভীষণ কম,
আবার তো জল খসে গেলে

খাদের উপর থেকে নীচে পড়ে যাবে কোলবালিশ…

ঊষা

এই সেই বিতর্কিত সূর্যোদয়

সহজ ধুলোর দেশে
মেয়েদের পায়ে পায়ে
ফুটে ওঠা সৌরকুসুম

তরল সোনালি রোদ? হেমলক?

আকন্ঠ পানের পর
জল আর পাথরে লুকোনো
অচেতন পুরুষের পাশে, এ ব্রাহ্মসময়ে
জেগে উঠছে একে একে
দৃশ্যপট, পাখিদের ঘুম…

দাহঘাট

যেকোনো মৃত্যুর গায়ে আপনার মুখ লেগে আছে।

ভাবি, কোনোদিন যদি ভোরে টেলিফোন বেজে ওঠে
প্রতিবেশীদের ঘরে
টেলিফোন বেজে ওঠে, আর… জেনে ফেলি যদি
ছাপাখানা থেকে দূরে, নিঝুম শ্মশানে
একে একে পুড়ে যাচ্ছে আপনার ধবল কবিতা

আমার প্রণাম নেই। পাপ নেই। দাবি নেই। ভাবি,

এত এত রং নিয়ে, সেই ভোরে, কার কাছে যাব?

বিশ্বাস

একমাত্র লেখা পারে উড়ে যাওয়া চাল বেঁধে নিতে

গেরস্থ ঘরের জল-থইথই মেঝে থেকে
খুদকুঁড়ো- খিদে শুদ্ধ, এনামেল থালা শুদ্ধ
তুলে এনে, শীতে
একমাত্র লেখা পারে গরম ভাতের হাঁড়ি
ফ্যান গেলে দিতে

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু
বিশ্বাসে নদীর চরে ফুটে ওঠে কাশ

আজ না ফুটলে, কাল

একমাত্র লেখা পারে এতসব কুসুম বিন্যাস

লেখা পারে? পারে বুঝি? কবে পেরেছিল?

Facebook Comments

পছন্দের বই