লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সম্পিতা সাহার কবিতা

পারদসূত্র ও স্বীকারোক্তি


উঠে চলে যাও ধারাবাহিক উত্তাপ ঠেলে…

এ-সমস্ত সতর্কের জিজ্ঞাসা, দুর্বল কান্না।
যারা ঝরতে ভয় পায়, তবু অপরাহ্নের বৃষ্টি মেখে ঘনীভূত হয়
প্রত্যাশী রোগা আগুনের মতো,
আমি কোনোদিনই সেই দলের প্রেমিকা ছিলাম না।

হতে পারে সমস্ত প্রতিবিম্ব জুড়ে গেলে আয়না পড়ে থাকে
বলিরেখার মতো,
তবে মুঠোভর্তি অধিকারের চেয়ে
বিনেপয়সার মৃত্যু ততধিক নিজের…


এখানে পুরোনো ক্ষতের মতো
শর্করা থেমে আছে শরীরের কাছে,
আর কাঁঠচাপার গন্ধ চিনে চিনে
আমি পৌঁছে গেছি তোমার বাড়ি অবধি।

খয়ে যাওয়া প্রজন্ম শাদা সংলাপে,
তবে দাউদাউ থেমেছে হরিণীর চিৎকারে।
আগেকার সেসমস্ত ঝিনুক আচমকা উঠে আসবে আমায় চিনতে পারলে…
আহার্য অপেক্ষা থেকে খুলে পড়ছে আন্তরিক ঠান্ডা…
ব্লার হয়ে যাওয়া গল্পগুলো না ফিরলে
আমি মেনে নেবো, বিষাদের মাসমাইনে হয় না।
সীমান্ত সমস্যায় বরাবরই
দু’পাশের দাম বাড়ে সমানুপাতে…


নিরন্তর ভাগ হয়ে যাওয়া দুটো নিঃশ্বাস
আর কিছু অপ্রত্যয়ী অপবাদ
মিলেমিশে যাচ্ছে গ্রহণযোগ্যতায়…
এখানে আশ্রয় হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ঘুম।
চোখের প্রতি মায়া বাড়িয়ে
উপেক্ষা করে গেছি স্পর্শকাতরতা…
অথচ এখন অনটন বাড়লেই আমরা ব্যবধানে শোক করি।
জলোচ্ছ্বাস কমে আসে, এরপর…


আগুনের নীচে যেটুকু অন্ধকার জুড়ে রাখা থাকে
সেখানে ধ্বস নামে জিপসি মেয়ের কোলে
অথচ জিরো পয়েন্ট থেকে ফিরে আসব জেনেও
আমরা থামিনি এতটুকু…
ঘুঙুরের প্রতিটা সুতো থেকে
করবী ফুলের মতো খুলে যেত বিষাদ
আর দেখব না বলেও কারা যেন
আবছামতো লেগে থাকত সান্দ্রতায়…
কত মনোরম ক্ষত নিসর্গের মতো দায়ী হয়ে আছে।
চোখে ফুটে ওঠেনি এতটুকু উৎকন্ঠা,
শীতের দিন ভেবে এড়িয়ে গেছি রোদ
আর পরিণতি ফেলে রেখে
যে যার মতো খুঁজতে গেছি ঈশ্বরত্ব।
একান্ত ভেতরে খিদে পেলে কেউই কিন্তু নেশা করি না…


আরও কিছু যাতায়াত
আরও কিছু মুলতুবি ট্রেন
আরও কিছু বিকেলের সোহাগ
আরও কিছু অপরিণত কোলাহল
আমরা পেরিয়ে যাচ্ছি একেকটা ফেরির ডাক…
ক্রমশ পাতলা হচ্ছে ভিড়
যাতায়াতের রাস্তায় একটা সময়ের পর
ফুরিয়ে আসে আত্মীয়তা।
আমরা চিনে ফেলি টানাপোড়েন।
ফিরে আসব কখনও। টানাপথ…
জংশনবিহীন নতুন কিছু স্টেশন
জাঁকিয়ে বসবে আগামী শীতের পর…

বিগত শিশিরের ছাপ


প্রতিটা নিকটে আসার কাছে
কৃপণ হয়েছি যাচ্ছেতাই।
সাবলীলতায়য় প্রাণপণ থাকে না,
আমরা পাহারা দেওয়া ছেড়ে দিই এরপর…
জ্বলন্ত অসম্ভবে পুড়ে যাচ্ছে পাখিরা
কলোনিয়াল তর্ক সেলাই করে
জানালায় এসে রেখে যাচ্ছে বোবা অধ্যায়…
সংজ্ঞা ছেড়ে উঠে গেলে ক্রমশ
তুমি সহজ হয়ে ওঠো করতালির ভেতর।


ভাবতে বসলে আর ব্যথা লাগে না সম্ভবত…
তোমাকে দেখেছি, দামাল বাতাস মেখে
শুধিয়ে বেড়াচ্ছ সহবত।
পশমদিনের সঞ্চয় আর
নহবতে মিলিয়ে যাচ্ছে ভাঙনের ডাক…
ঘুঙুরে অনুপ্রবেশকারী প্রতিটা ধুলো
পুরুষ হয়ে যায় সেই রাতেই।


নজম থেকে উঠে যাচ্ছে অনুমান
আর উলঙ্গ হয়ে দাঁড়াচ্ছে গান্ধারী চোখ।
সর্বনাশে অভ্যস্ত হয়ে গেলে
ঈশ্বরী পুজো পায় না
স্বরণযোগ্যতায়।


আজন্ম জলরঙে সাঁঝ লেগেছে
অথচ ঋণের কাছে এসে
আমরা ভোরের শব্দ বলি ছন্নছাড়া…
পালক হতে চেয়ে তুমি
পাখির অহংকারে প্রণয় খুলে রাখো।
নিঃশ্বাস ও আগুনে পার্থক্য নেই।
এই বসন্তে পরিণত হবে রোদ।


সুতানুটির গল্পে উদ্ভিদের মৃত্যু…
হীরাবাঈ এর অঙ্গন থেকে পলাশ চেয়ে এনো।
এসমস্ত রাত নিজেদের কাছেই কৈফিয়ত রাখছে অবিকৃত।
অন্যমনস্কতায় ছুঁয়ে গেলে
হাওয়াদেরও বিচার চাওয়া হোক…

Facebook Comments

পছন্দের বই