লেখক নয় , লেখাই মূলধন

ভেন্ট্রিলোক্যুইস্ট পলাশ অধিকারীর সাক্ষাৎকার

‘একেবারে শুরুর দিকে ভেন্ট্রিলোক্যুইজম-এর ব্যবহারটা মূলত লোক ঠকানোর কাজে।’ ভেন্ট্রিলোক্যুইজম নিয়ে প্রণয় মোদককে আরও নানা কথা জানালেন পলাশ অধিকারী।

ভেন্ট্রিলোক্যুইজম-এর শুরু কীভাবে?

একেবারে শুরুর দিকে ভেন্ট্রিলোক্যুইজম-এর ব্যবহারটা মূলত লোক ঠকানোর কাজে, যেমন প্রেত-আত্মা নামানো ইত্যাদি। ভেন্ট্রিলোক্যুইস্টরা আত্মা ডেকে আনার ছলনায় অদ্ভুত কণ্ঠস্বর বের করত আর মানুষ তাই বিশ্বাস করত। আঠারোশো শতকে পুতুল নিয়ে প্রথম ভেন্ট্রিলোক্যুইজম শুরু হয়।

পলাশ অধিকারী কীভাবে ‘ভেন্ট্রিলোক্যুস্ট পলাশ’ হয়ে উঠল?

পলাশ: ছোটোবেলা থেকে দূরদর্শনে প্রবীর দাস, সমীরণ আচার্য পরিচালিত ‘চিচিং ফাঁক’, ‘হরে কর কম্বা’, ‘ছোটোদের আসর’ এইসব অনুষ্ঠান থেকে প্রভাবিত হই। প্রথমে তো ‘ভেন্ট্রিলোকুইসম’ শব্দটাই উচ্চারণ করতেই পারতাম না। দীর্ঘদিন ধরে কথা বলা পুতুল, টকিং ডল এইসব শুনে এসেছি। ইউটিউবে টকিং ডল বলে প্রথমে খুঁজেওছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে ‘ভেন্ট্রিলোক্যুইজম’-এর সাথে আলাপ হল।

পথনাটিকার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের উপর সচেতনামূলক অনুষ্ঠান করতাম পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতে। তখন সেইরকম অনুষ্ঠানের জন্যই আমার-ই এলাকার ভেন্ট্রিলোক্যুইস্ট তরুণ কুমারের সঙ্গে আলাপ। তাঁর ভেন্ট্রিলোক্যুইজম কাছ থেকে দেখতে দেখতে কখনও কখনও নিজে মুখ না নাড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা শুরু করে। আর এই যাবতীয় কৌতূহল উগড়ে দিতে থাকি ঘরের আয়নার সামনে। ভালো উচ্চারণের জন্য ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য আওড়াতাম। তারপর আমাদের ডিরেক্টারের উৎসাহে আমি যখন তাদের ডেমো দিলাম আমার অনুষ্ঠান তাদের খুব ভালো লেগে গেল। তারপর আস্তে আস্তে ৩০০ টাকা, ৪০০ টাকার অনুষ্ঠান করেছি। এমনও অনুষ্ঠান করেছি, অনুষ্ঠান শেষে মিষ্টির প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।

তোমার সাফল্যের অন্তরালে যাঁরা…

পলাশ: মীরাক্কেলে যাওয়ার আগে প্রবীর দাস আমার ‘ভেন্ট্রিলোক্যুইজম’-এর খুব প্রশংসা করেছিলেন আর সেগুলো আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। পরে মীরাক্কেলের সৌনাভকে দেখা এবং মীর স্যারের মারাত্মক প্রভাব ছিল আমার মধ্যে। মীর স্যার আমার কাছে ‘সালমান খান’, তাঁর সামনে পারফর্ম করাটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। পরবর্তী ক্ষেত্রে মীরাক্কেলে যে পারফর্মেন্স করি সেই সব স্ক্রিপ্ট-এর পিছনে ড. কৃষ্ণেন্দু ও সৌরভ পালোধি অনেক ভূমিকা আছে। এছাড়া শুভদীপ, অর্ণব এরা আমায় ভীষণভাবে সহায়তা করেছে।

ইউটিউবে ‘ভেন্ট্রিলোক্যুইজম’ নিয়ে কিছু খুঁজলে তোমার নামটা পাই। এই লড়াইটা…

পলাশ:  যারা চাকুরীজীবী তারা ষাট বছর পর রিটায়ার নেয় কিন্তু একজন শিল্পীর লড়াই সারাজীবন চলে। আমাদের রিটায়ারমেন্ট নেই। একজন লেবারের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কিছু নেই। কাজ শেষ হলে আবার পরের কাজের জন্য ঝাঁপাতে হবে। কিন্তু কাজটা কী ধরনের করব, সেটা বাছাও একটা লড়াই।

লাইভ ও ক্যামেরা, দুটি পরিসরে পারফর্মের জন্য আলাদা কী অভিজ্ঞতা? 

পলাশ: ক্যামেরার সামনে ব্যাপারটা পুরো আলাদা। সেখানে ‘রি-টেক’-এর সুবিধা আছে। এখানে লেভেল অনেকটা নীচু করে দিতে হয়। ক্যামেরার অবস্থান মাথায় রেখে পারফর্ম করতে হয় সুতরাং আমার ফেসটা যেন ক্যামেরার দিকে হয়। আবার এখানে লোকের রিয়েকশনটা বোঝা যায় না যেটা অনস্টেজ পাওয়া যায়। এই জিনিস তা বহুদিন পারফর্ম করার পর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি কোনটা মানুষকে আনন্দ দেবে।

হাজার হাজার লোকের সামনে পারফর্ম করার মধ্যে একটা আলাদা হিরোইজম আছে। সেখানে দর্শকের প্রতিক্রিয়া স্বচক্ষে দেখতে পাই, তাদের সাথে সরাসরি ইন্ট্যারাক্ট করতে হয়। দর্শকের হু হু, হাততালি কানে এলে বুঝতে পারি যে আমি বোধহয় ভালোই করছি। কিন্তু স্টেজে ভুল করলে ক্ষমা নেই। ক্যামেরার সামনে মেপে কথা বলতে হয় কিন্তু মঞ্চে আমি স্বাধীন।

দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য নতুন কোনও পরিকল্পনা?

পলাশ: এখন ভাবি নতুনভাবে আর কীভাবে মজা করা যায়, ইউটিউব ঘাঁটতে থাকি। লাইভ পারফর্মেন্সে চেষ্টা করছি বিদেশি পুতুল এনে যদি আরও এন্টারটেইন করা যায়। লন্ডন থেকে একটা নতুন মুখোশ আনিয়েছি যেটাকে রনিদার মুখে পড়িয়ে মীরাক্কেলেও একটা পারফর্ম করেছি।

অভিনেতা পলাশ নাকি ভেন্ট্রিলোক্যুইস্ট পলাশ?

পলাশ: দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। তবুও চোখ কান বুঝে অভিনেতা পলাশ। আসলে ভেন্ট্রিলোক্যুইজম-এর জন্য একসময় খুব কষ্টও পেয়েছি। বাংলায় ভেন্ট্রিলোক্যুইজম দু’হাতে পুতুল তো আগে কখনও দেখেনি, সেটার জন্য আমি খুব প্রশংসা পেতে শুরু করেছিলাম। অপূর্ব, আবু হেনা রনির মতো আমারও একটা ভালোবাসার মানুষ তৈরি হয়েছিল। এটার জন্য খুব ফাস্ট্রেশনে ছিলাম, যে আমি বোধহয় ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হিসাবে পরিচিত হলাম, অভিনেতা নয়। আমার অভিনয় আগে পরে ভেন্ট্রিলোক্যুইজম। আমি ভেন্ট্রিলোক্যুইজমকে নিয়ে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছি কিন্তু প্যাশন আমার অভিনয়।

অভিনয়কে সামনে রেখে ভেন্ট্রিলোক্যুইজম নিয়ে তুমি এগিয়ে যেতে চাও। সেক্ষেত্রে তোমার পরবর্তী পরিকল্পনা?

পলাশ: নতুন কায়দায় ভেন্ট্রিলোক্যুইজমকে মানুষের সামনে আনার জন্য ভাবছি। নাটক-থিয়েটারের মধ্যে ভেন্ট্রিলোক্যুইজম, যেটা এখনও পর্যন্ত খুব একটা দেখা যায়নি। বাংলা সিনেমায় বা ভারতবর্ষের সিনেমায় ভেন্ট্রিলোক্যুইজম আসেনি, সুতরাং আমার কাছে এমন একটা বিষয় আছে যেটা আমি জানি আর একই সঙ্গে অনন্য। আর এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে আমি একটা ছবি বানানোর পরিকল্পনাও করেছি।

Facebook Comments

পছন্দের বই