লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সুমন মল্লিকের কবিতা

বোধন

শব্দায়মান নয়, বরং গভীর নীরবতার মধ্য দিয়ে আসে
বকুল কুড়োনোর দিনগুলি…
দিনগুলি অথৈ প্রেরণা লেপে দেয় এখনের দিনগুলিতে

এখন আর নেই এলোচুলের স্বর্ণসিঁদুর
এখন আর নেই বাকরুদ্ধ ঠোঁটের ওম্
তবু একটা ঘূর্ণি ওঠে – ঘুরতে ঘুরতে অচৈতন্য হই
শিহরিত হই, তারপর একটা সময়
সামনে এসে হাজির হয় কপালের দোষ

আমি দোষকে রোজ বলি : কীভাবে তুই এখনও প্রিয়
প্রিয় তো আরও কতকিছুই… এমন কি এই যন্ত্রণাও
অপ্রিয় নও… তুমি প্রিয়, আজও আগেরই মতো প্রিয়
তাই তো মূর্খের ভাঙা পাঁজরে তোমার শাশ্বত বোধন

মায়া

রক্তমজ্জায় ঢেউ তুলে মিলিয়ে যায় রাধিকার অগ্নিসম চোখ
ময়ূরের পালকের মতো যত্ন করে রেখেছি কামনার ফেরি
অন্তরাত্মার চিরবর্ষায় আর ভিজে ভিজে অসুখ বাধাই না
বরং অভিসারের নদীটিতে চালাই প্রেমিকের কাব্য-নৌকো
অস্ফুট… অর্ধস্ফুট… কখনও কখনও স্পষ্ট কিছু কথামাধুরী
ধ্বংস ও সৃষ্টির ঠিক মাঝখানে জাগিয়ে রাখে অনুরত মায়া

বাউল

এতো এতো পান ও পিপাসায়
কীভাবে মিলতে পারে নির্বাণ
বিবিধ আগুনে পুড়তে পুড়তে
একসময় আকাশ ভেঙে প্রবল
বৃষ্টি নামে – গলে যায় প্রতিটি
বেদনার কবচ, ভেসে চলে যায়
সব তামসিকতা, আসে নির্লিপ্তি
হাতে ফুটে ওঠে একটি জবাফুল
হাতে ভেসে ওঠে মেদুর নির্বাণ
এরপর শুধু আলোঝরনা, এরপর
অন্ধ কানাইয়ের মতো দিবানিশি
বাঁশির আশ্রয় আর সুখের বাউল

শ্রীঅঙ্গ

শিউলিতলায় বসে বসে কী খুঁজি
যা খুঁজি তা তো পাই না নিভৃতে
কত চপল প্রজাপতি উড়ে যায়
ওদের সাথে ওড়ে না দেহপাখি
বাসনার দিগন্তপ্লাবিত তরঙ্গমালা
কী এমন নির্মাণ করে শূন্যতায়
যার ভেতর দাঁড়িয়ে দেখতে পাই
মনের আকাশে এক এক করে
তারা খসে পড়ছে অসীম গতিতে
আর তার মধ্য দিয়ে ভেসে যাচ্ছে
মোহিনী প্রিয়তমার অক্ষয় শ্রীঅঙ্গ

হৃদি

আর কিছু নয়, এই যে বুকভর্তি বেদনাপ্রপাত তছনছ করে আমাকে
এর মাঝেই একটি ব্রহ্মপুষ্পের মনখারাপের নীচে স্থবির শুয়ে থাকে
এক জনমের অনুতাপ… আর হাহাকারে নিরাকার হয়ে উপবিষ্ট হয়
প্রেমের কৃষি ও চক্র – আত্মকথা উথালপাথাল করে মাথার ভেতরে

আর কিছু নয়, শুধু কিছু পুণ্যলগ্ন নদীর জলে চাঁদের আলোর মতো
স্নিগ্ধ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আমার বোধবুদ্ধিহীন প্রতিটি তৃপ্তি-অতৃপ্তিতে
মধ্যরাতে তুমি কেন মেঘের পালকি থেকে নেমে আসো নববধূরূপে
আমি তো পিরিতফকির– এই দুই হাতে তুলে ধরি অপাপবিদ্ধ হৃদি

Facebook Comments

পছন্দের বই