লেখক নয় , লেখাই মূলধন

স্মৃতিকে পাহারা দিয়েই চলে গেলেন কার্তিক মোদক: সেলিম মণ্ডল

গতবছর বেশ কয়েকবার কার্তিকবাবুর কাছে গেছিলাম। একটা পরিকল্পনা ছিল। পত্রিকায় একটা বিশেষ ক্রোড়পত্র বা সংখ্যা করব। কিন্তু ওঁর ঠিকঠাক সহায়তা না-পাওয়াতে কাজটা আর এগোয়নি। সত্যি বলতে দোষটা ওঁর একার না, তখনই বয়স ৮০ মতো। কানে তেমন শোনেন না। সবকিছু ভুলে যান। যতবার সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন দিয়ে এসেছি হয় উনি হারিয়ে ফেলেছেন নতুবা ভুলে গেছেন। কখনো খড়দা বা কখনো চাপড়া থেকে গেছি। আমার পক্ষেও বারবার যাওয়া সম্ভব নয়। ফোন ঠিকঠাক মতো হ্যান্ডেল করতে পারেন না। পারলেও বা শোনেন না ঠিকমতো… পার্থদাও বারবার গেছেন। সেলিম কাজটা করতে চাইছে, ছেলেটাকে একটু হেল্প করো। সর্বদা আশা দেখিয়েছেন। কিন্তু কাজ আর এগোয়নি।

তবে মানুষটাকে কাছ থেকে দেখে বুঝেছি কি আন্তরিক! বাড়িতে ঠিকমতো আয়োজন না করতে পারায় হোটেলে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ালেন। কত স্মৃতির কথা শুনেছিলাম। জয়কৃষ্ণ গোস্বামী, সুবোধচন্দ্র সরকারের কথা। বিনয় মজুমদারের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের কথা। বিভূতিভূষণ ছিলেন তাঁর স্কুল শিক্ষক। তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর খেলার সাথী। দেখিয়েছিলেন তাঁর পুরানোদিনের ছবিপত্র।
নানা কাগজ। জয় গোস্বামীর ছাপা কবিতার প্রথমটি উনিই ছাপিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, গল্পকার শক্তি চট্টোপাধ্যায়কেও পাওয়া যায় ওঁর পত্রিকায়।

এসব লিখতে গেলে এখন কয়েকপাতা হয়ে যাবে। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে আমি এর চেয়ে বেশি লিখতে পারলাম না। তাঁর স্নেহের হাত এখনো মনে হচ্ছে, মাথার উপর রাখা আছে। আমি কি সব লিখছি!

উনি একটা কথা বারবার বলেছিলেন, ‘সেলিম, এই লাইনে কেউ কাউকে জায়গা দেবে না। নিজের জায়গা নিজে করে নিতে হবে’। কার্তিকবাবুর কথা মনে পড়লে এই কথা বারবার মনে পড়ে। গুরুবাক্য।

সীমান্ত সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কার্তিক মোদক। কিছুক্ষণ আগেই ফেসবুকে দেখলাম উনি আর নেই! কোথায় গেলেন উনি? ওঁর স্মৃতিকে এবার কে পাহারা দেবে?

Facebook Comments

পছন্দের বই