লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

অমিতাভ মৈত্র

শর্টকাট

যদি ক্রাচ সঙ্গে থাকে
অস্তিত্ব স্রেফ দু-মিনিটের হাঁটা পথ

যে ভাবে মিথের জন্ম হয়

রাতে তারা দু-জন কবরখানার প্রধান ফটক থেকে
নেমে আসে নিঃশব্দে
আর অন্ধকার রাস্তায়
নরম থাবা ফেলে ঘুরে বেড়ায়।

লোকে বলাবলি করে
ধুলোমাখা শিরীষ গাছের আড়ালে
মাঝে মাঝে তারা পেচ্ছাপ করার জন্য থামে।

বুড়ো আর সূর্য

মাটির পাত্রে জ্বলন্ত কাঠকয়লা জুটত না বলে
শীতে অসাড় বুড়োটা চাইত
সূর্য যেন না ডুবে যায় কখনো।

সূর্যই জানে আসলে এক অবাস্তব ধর্মযাজক সে
মৃত্যুদণ্ডের আগে যে দণ্ডিতের সামনে
অনুভূতিশূন্য কিছু কথা
কাগজ দেখে অন্যমনস্কভাবে পড়ে যায়।

নিরাপত্তা

দেয়ালে শক্তভাবে জুড়ে থাকা প্রতিটি ইট
তৃপ্ত থাকে তাদের নিরাপদ সুসংবদ্ধ জীবনের জন্য।

বাতাস মাঝে মাঝে বিদ্রূপ করে তাদের জীবনকে

তারা কানে তোলে না।

আউটডোর টেবিল

উপুড় হয়ে শুয়ে আছে নিঃসাড় আকাশ
আর তার পিঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে
আস্তে আস্তে, সারাদিন ধরে এগিয়ে যাচ্ছে লাল স্টেথোস্কোপ

সম্ভবত অসুখ খুঁজছে।

সিদ্ধি

একজন মানুষকে হত্যা করার পর
কয়েকদিনই শুধু হাত কেঁপেছিল আমার
কিন্তু তারপর আবার যখন ছবি আঁকায় ফিরলাম
আমার কল্পনা আর রং
অনেক বেশি গভীর ও সাহসী হয়ে উঠেছিল

আমার মনঃসংযোগ আর তুলি ধরার ক্ষমতাও বেড়ে যায়

অনুতাপের ঘরের দেয়ালে যা লেখা ছিল

এমন জীবাণুশূন্য করে নিয়ো না নিজেকে, যাতে মনে হয়
সাদা সাবানের ওপর কালো ফিনাইল দিয়ে
                        লেখা হয়েছে তোমাকে

ঈশ্বরের হাতে, ঈশ্বরের লেখার খাতায়

শপিং মল-এ একজন আধ্যাত্মিক

ট্রায়াল রুমের ভেতর থেকে লাল কর্সেট পরা মহিলাটি
চাপা গলায় বললেন— গাধা কোথাকার!

আর ব্লেজার বাড়িয়ে ধরে একজন ঝকঝকে বিক্রেতা
                                            তখন বলছেন—
নিন এই দুর্দান্তকে! শুধু আপনার আগের জীবন আমাকে
                                            দিন।

মনে হয় এই শহরে সবাই
ঘরের আলো নিভিয়ে
স্ট্যাচু হয়ে থাকার খেলা পছন্দ করে
আর কোনোভাবে সেই খেলা আমাকেও টেনে নিচ্ছে হয়তো।

ঘষা কাচের ওপাশ থেকে আর একজন লাল কর্সেট
          খসখসে গলায় বলে উঠলেন— গাধা কোথাকার!

Facebook Comments

পছন্দের বই