লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

শুভম চক্রবর্তী

নিষ্ঠুরতা এ-প্রকার দোলে

নিষ্ঠুর পেরেকে ঝুলছে চায়ের সসপ্যান। হাওয়ায় হাওয়ায় দুলছে চায়ের সসপ্যান। নিষ্ঠুরতা এ-প্রকার দোলে। ঝড় ও বাদলে তার গুপ্তছাপ লেগে থাকে মোহরের গায়ে। কিন্তু সে মোহর কার এই প্রশ্ন কেউ-ই করে না। জিজ্ঞাসাশূন্য এক স্থিতকল্প অবস্থান নেয়, বিড়ি টানে, ঠুনকো কপর্দক বাতাসে উড়িয়ে, ডাকে— আয় তোরা আমার পুরোনো। আজ রাতে নাকাবন্দি খেলি। আজ রাতে ঘুমের তুলোট খাঁজে মুখ দিয়ে ওম নিতে নিতে পরম্পরাচ্যুত এক মাংসের খাটালে গিয়ে বসি।গবাদিপশুর খোপে নিজেদের ঢেলে ঢেলে দেখি। জাবর ও চঞ্চুর দাগ কঠিন মোহরে লাগে কি-না।

চাঁদ ক্ষণিকের পালা

আকাশে যায় চাঁদের নাও। জলেও যায় চাঁদের নাও। এই দু-কূল টানাটানির মজঝঝিমে কে ডিঙা বাও। মজঝঝিমের তেমন রাত অন্ধকার আলোর সার। আলোর সার সারাৎসার তেমন রাত অন্ধকার। আকাশে যায় চাঁদের নাও। আঁকা হাতের বাঁকা পথে। জলেও যায় চাঁদের নাও। পাল টাঙাও মনোরথে। তারপরের হদিশ আর। নেই কোথাও নেই কোথাও। তারপরের সব সাঁকোয়। ঘোড়া ছোটায় অন্ধকার।

কী এক নিপুণ কাম

কী এক নিপুণ কাম আজ আমায় জড়িয়ে ধরেছে। তোমাকেও ধরেনি কী কামবশায়িতা? আগুনের পাশ দিয়ে শাড়ির আঁচল তুলে ভাঁজ মেলে দূরে চলে যাওয়া। বিলক্ষণ ফিরে আসা ততোধিক তড়িৎ গতিতে। তারা চোখ গোল করে। বাতাসে শূন্যের গূঢ় মঞ্জরী পাকায়। থোম্বা চোখে চেয়ে থাকে থুতনি নেড়ে দেওয়া কোনো বাঘ। আমি সাদাসিধা লোক। তবু কী এক নিপুণ কাম আজ আমায় জড়িয়ে ধরেছে। পাকিয়ে পাকিয়ে একটি যজ্ঞডুমুরের গাছে তুলে দিয়ে মঁই টেনে নিল। আমি কি সটান জোরে ঝাঁপ মারব তীব্র অন্ধকারে।

ডায়েরির পাতা

আমার পূর্বজন্মের মায়ের সঙ্গে আমার এই জন্মের মায়ের দেখা হয় যদি, সে দেখা কি বলো শুধু কল্পনার হবে। মেঘঢাকা নরম বিকেলে মাঠ থেকে ফিরে আমি গাছতলে কলহতে-রত আমার দু-জন মাকে দেখতে পাব পথের নিয়মে। আমার পূর্বজন্মের প্রেমিকার সঙ্গে আমার এই জন্মের প্রেমিকার দেখা হয় যদি, সে-দেখা কি শুধুমাত্র কল্পনার হবে। রোদে পোড়া নিভাঁজ বিকেলে পথশ্রান্ত আমি যদি ঘরে ফিরে আসি। কে দেবে এগিয়ে কাছে পেতলের ঘটি ভরা সুশীতল জল। কার মুখ দেখে আমি সেই পোড়া দাহর ভেতরে, পত্রালি বিছিয়ে শোবো, শরৎ ভোরের প্রত্যাশায়। স্বপ্নের ভেতর দিয়ে জন্মগুলি, জন্মান্তরগুলি কৃষ্ণচূড়ায় ভরা এক একটা স্টেশন ফেলে দূরে চলে যায়।

রক্ত ক্লট বেঁধে ছিল

তোমার নিতম্ব খুবই ভালোবাসি। এত নরম আঁধার। একবার দেখিয়েছিলে ছড়ে যাওয়া নিতম্বে যখন রক্ত ক্লট বেঁধে ছিল, সে-দেখাকে আজও ভুলিনি। তবে কি নিতম্ব নয়, নরম আঁধারে আমি আমার দেখাকে শুধু দেখতে চেয়েছি। বনের ভেতরে দিয়ে চলে যাওয়া পথটির মতো। কামনার সমাপ্তি নেই, একেবারে নরম, মাসুম। চোখে জল৷ তোমার নিতম্ব খুবই ভালোবাসি এবং বাসি না। মাঝেমধ্যে নদীর অনেক কাছে চলে যাই রোমশ বিকেলে, যত কাছে গেলে আর ফিরবার উপায় থাকে না।

Facebook Comments

পছন্দের বই