Categories
গদ্য

বিধান সাহার গদ্য

বাদামি বায়স্কোপ

সিমি আর চৈতি সেদিন সকাল সকালই চলে এসেছিল। ‘আঙ্কেল আঙ্কেল চলেন ঘুইরবার যাই।’ আমারও ভোর দেখার বাতিক। মেয়ে দু’টির মুখের ওপর ভোরের পবিত্র আভা পড়ে ওদের আরও স্নিগ্ধ আর কোমল দেখাচ্ছে। হালকা-পাতলা গড়নের শ্যামবর্ণের মেয়ে দুটোর চোখে অপার বিস্ময় আর কৌতূহল। কোনো এক শহুরে আঙ্কেলকে দেখার। আঙ্কেলের কাছে তাদের পারাগুলোকে জানাবার এক তীব্র ইচ্ছা ওদের আচরণে।

Categories
গদ্য

হাসান রোবায়েতের গদ্য

ধরমপুর

অনন্ত শূন্যতার ভেতর যেতে যেতে একদিন হঠাৎ করেই শিশুরা দেখতে পায়— পৃথিবীর ঘাসের উপর ছোটো ছোটো ফুল। মাটিতে রোদের গন্ধ। নক্ষত্রের থেকে যে-আভা হাজার হাজার ছায়াপথ পার হয়ে লেগে আছে পেয়ারা-পাতায়, কুণ্ডুলি পাকিয়ে ধাতব খেলনার গায়ে আছড়ে পড়ছে রাতে, একটা কি দুইটা দাঁতে সে তারার আলোও কামড়ে ধরে শিশুরা। সে তখন ধীরে ধীরে টের পায় মায়ের অশ্রুত ঘ্রাণ।

Categories
গদ্য

সুপ্রিয় মিত্রের গদ্য

অমুকের গৃহদর্শন

বৃষ্টি যে হয়েছিল একটানা, ছেদরানো কাদা লেপটানো পাতাদের শবদেহ ছাড়া কে বুঝবে। শেডের তলায় যে গুল্মটি ছিল গার্হস্থ্য স্পর্ধার টবে, একদলা মাটির ওপর একখান পাতা মূর্ছা গিয়েছে কাল রাতে; শেষ হাওয়ার ট্রিগারে খামোখা। সে পাতা পাথরকুচি, শেকড়ের সুরক্ষা তাকে বাঁচাবে— আশঙ্কা নেই, জল ঘোষণা করেছে। স্প্রিংকল মগ থেকে সহায়তা ঝরে পড়বে, বেলা হওয়ার অপেক্ষা।

Categories
অনুবাদ গদ্য

পল নিহাগীর গদ্য।। অনুবাদ: প্রলয় মুখার্জী

প্রবঞ্চকর

আমি প্রবঞ্চক, এ কথাই বলছিলাম নিজেকে। গভীর রাতে প্রশ্ন করি, আমি কে? বলি ও! তুমি প্রবঞ্চক মাত্র। মাদাগাস্কার জঙ্গল এ কথাই তো শেখায় প্রতিদিন। একটি নীল লেমুর তন্দ্রাচ্ছন্ন কুয়াশার ভিতর আড়াআড়ি ছুটে যায় যখন, চেরি ফলের চেয়ে লাল টকটকে ক্যামিলিয়ন দু’টি বাওয়াবের নিদ্রাকাতর শাখায় ক্ষণকাল সঙ্গমরত, এই পৃথিবী সুন্দর লাগে।

Categories
গদ্য

জগন্নাথদেব মণ্ডলের গদ্য

নিঃসঙ্গ কথকের নিজস্ব পালা

আজকাল সকালের দিকে বাঁকানো খুরপি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিই, বেড়ালকে ভাত খাওয়াই, গাভিন হওয়ার পর ছাগলের শিংয়ে তেলসিঁদুর লাগাই।

দেওয়ানগঞ্জে প্রথম আষাঢ়ে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা দেখতে যাই, ছোটোবয়সে শ্বশুরঘরে চলে যাওয়া দিদি কাঁঠালবীজ পুড়িয়ে চালভাজা মেখে দেয় খাঁটি সর্ষে তেলে দিয়ে, কাঁচলঙ্কা দেয়, ভুট্টা পোড়ায়, আদারস দেওয়া চা করে।

Categories
গদ্য

শতানীক রায়ের গদ্য

আরও বেশি জীবন্ত

চিত্র: জর্জিয়ো দি চিরিকো

আমি জানি। দীর্ঘ সময় পেরোনোর পর তোমরা ঠিক আমাকে অক্ষরে অক্ষরে খুঁজে পাবে। এখন নয়। অনেকটা সময় না পেরোলে সমকালের কুয়াশা কাটে না। একে আমি দ্বন্দ্ব বলি। আবার কুহকও বলা চলে। জীবনানন্দের হাজার বছরের পথ চলা এরকমই। ভেতরে ভেতরে চলেছি কিংবা পাহাড়ের হিমশৈলর মতো সারা শীত সারা গ্রীষ্ম সারা বছর এতটাই স্তব্ধ হয়ে আছি যে, কেউ তার মর্ম বুঝতে পারছে না।

Categories
গদ্য

সেলিম মণ্ডলের গদ্য

কৌতূহলের জানালায়: পাগলাখালি

পাগলাখালি আশ্রম

‘উঠল বাই তো কটক যাই’, ক-দিন আগে হঠাৎ এমনই বাই উঠেছিল আমাদের। বহুদিন ধরে পরিকল্পনা চলছিল, যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কতটাই বা দূর? চাপড়া থেকে বড়োজোর ২৫ কিলোমিটার। মুশকিল হল, ডিরেক্ট যাওয়া যায় না। বাস, ম্যাজিক, টোটো সব ভেঙে ভেঙে যেতে হয়। এটা বেশ হ্যাপার। কথায় বলে ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’, কোনো বিশ্বাস বা তর্কের খাতিরে নয়, স্রেফ কৌতূহলেই যাওয়া।

Categories
গল্প

সুপ্রিয় সাহার গল্প

টিকিট টু পাকিস্তান

তারপর লোকটা বসিরহাটের গাড়িতে যেই চেপে বসেছে অমনি গাড়িটা মাছ হয়ে গ্যাছে আর তখন যেই লোকটা বলেছে এতবড়ো মাছ অমনি মাছটা

Categories
গল্প

আশরাফ জুয়েলের গল্প

গলছে মেঘের হাতিটা

চিত্র: রেনে মাগরিত

—দোলেমোন, বালো, তি-ভী… সাড়ে তিন বছর বয়সী মুখ থেকে বের হয়ে আসা শব্দগুলো এখনও স্পষ্টতা পায়নি। কিন্তু অন্য বাতাস তাঁর কথায় প্রাণ যোগাচ্ছে।
—তিভী, দোলেমোন, শুন্দল… বিষণ্ণ শহরে হঠাৎ জ্বলে ওঠা আলোর মতো হেসে ওঠে শিশু মুখ।

Categories
গল্প

অর্ণব রায়ের গল্প

সাইনেস্থেশিয়া

চিত্র: রেনে মাগরিত

—বাবা সাড়া দিচ্ছে না যে, ও বকুল। আমার কিন্তু ভালো ঠেকছে না। তুই ছুট্টে যা, মাকে ডেকে নিয়ে আয়। ওই দেখো, দাঁতে দাঁত লেগে গিয়েছে। শিগগির চামচটা দিয়ে যা। এখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছিস? বাবা, ও বাবা, সাড়া দাও। এই দেখো, আমি টুনি, বাবা!