লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

অরিত্র সোম

অ্যাশট্রে প্রস্তুত রাখো

ডালটুকু দেখতে পেয়েছ; কিন্তু ধ্বংসস্তূপে পড়ে থাকা পায়রাটিকে ভাবার মতো যোগ্য এখনও হয়ে ওঠোনি। আপাতত মনোযোগ দিই মঞ্চে। গিটার হাতে আলো করে রেখেছি কিছু নাগরিক। আমাদের গলায় ভাষা দাও, চলনে-বলনে সোচ্চার হও সংস্কৃতি।

এমনতর ইচ্ছের মধ্যেই ভিড় বাড়ে। গাড়ি আর সানগ্লাস যথাস্থানে রেখে মাননীয় উঠে যাচ্ছেন দেওয়ালে। এটুকু আওয়াজ সহ্য করে রাখো অন্তত। শুনেছি তোমার তো এখন কাজ-টাজ নেই বিশেষ কিছু…

নাগরিক সোচ্চার হয়। লাল-নীল মরসুমে আরও কৌতুক খোলে আকাশে। ছাদের দড়ি শুকনো সব; পাঁজরের বদলে পোস্টার উড়ছে। মাঝরাস্তা পেরোলেই সাফসুতরো মেজাজ। শ্লোগান নেই তবে দমকা কাশি ওঠে। সঙ্গে চাপ চাপ গন্ধ। রক্ত বেরোনোর মতো বোধহয় বিপ্লবী হয়নি ঠিক। বরং পলাশ কুড়িয়ে এগিয়ে দাও পাশের সিটে। আড়ালে খুচরো কয়েন— মানুষ, তাকিয়ে থাকে মানুষের দিকে।

মানুষ অকপট ঘুমিয়ে থাকে মানুষের পাশে
মানুষ ঘুম থেকে উঠে, লাঠি মারে
মানুষের মুখে

অতএব ইন্টারনেট চালাও। তুমি নাগরিক, শিক্ষিত ছন্দ মিলিয়ে গড়ে তোলো পবিত্র আশ্রয়…
আর পায়রার
ছাই উড়ে
উড়ে
উ ড়ে

অ্যাশট্রে, প্রস্তুত রাখো।

নিজস্ব শহরের ওপার হতে— ৫

স্বপ্নের মতো কিছু একটা যেন উড়ে যাচ্ছে। রিকশাস্ট্যান্ডের ঠুমরি ছায়া ফেলেছে গোটা ঘরে। মোটে সাতজন মানুষ— অ্যাশট্রে কালো করে পুড়েছে সব। শ্মশানযাত্রীর দল, হবিষ্যি ভুলে, এখনও চেয়ে আছে নদীটির দিকে। ওদের সবার বুক ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে দুটো আলতা-ছাপ। পথ ভুল করে দৃশ্যে ঢুকে পড়েছে বিড়াল। কাউকে তোয়াক্কা না করে ফিরে যাচ্ছে পুরোনো চেয়ারে। আস্তে আস্তে একটা বিকেল চলে এল ছাদে। মিস্তিরিরাও ফিরে গেছে যে যার মতো, স্বপ্নে। আমি ফিরতে পারছি না কেন— এই খচখচানি নিয়ে ঘাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অস্থি ভাসান দিতে গিয়ে সে শক্ত করে চেপে ধরেছে হাত। ছাড়াতে চাই না; কিন্তু…

ঢিলের বৃত্তাকার যাপন বুঝিয়ে দিচ্ছে— তৈরি হও।

ঈশ্বরের সাদা পেরেক


দেওয়াল থেকে সজারুর মতো তাকিয়ে আছেন ঈশ্বর
একটা পেরেক পেলেই পাশের জমিটি
বেদখল হয়ে যাবে


গত পরশু থেকে পাপোষের কোণে রাখা
সাংসারিক ছবিটি


যিশুর পা থেকে, আপাতত
একটাই পেরেক তুলে নেওয়া হয়েছে

কাজ চালানোর জন্য

রক্তবীজ— ১

প্রতিটা জানলা বেয়ে, অজস্র পাতা আসে ঘরে
জড়ো হয়; চলেও যায় একসময়— মেনিটির মতো
ঘরে ঘুরে বেড়ায় মর্গের হাওয়া
তার গন্ধ নিতে
নিতে নিতে
দেওয়াল ভরে উঠেছে রক্তে

কাশির দমক যেখানে শেষ রাত্রির নিশ্বাসের মতো

রক্তবীজ— ২

তারপর পাগলেরও সাধ হল শেষ হওয়ার—
খানিক ট্রেনে, খানিকটা কাটাকলের পথে ছুঁড়ে দিয়ে
দেখে নিতে চাইল পৃথিবীর গন্ধ
কোনো বৃষ্টি এল না। শব্দ হল না।
শুধু কিছু কুকুর একে অপরের গা শুঁকে
চলে গেল বস্তির জঙ্গলে…

এতক্ষণে
গা বেয়ে উঠে পড়েছে মা-পিঁপড়ে ছেলে-পিঁপড়ে
ভিতরে ভিতরে চলছে
মাংস খাওয়ার প্রস্তুতি

Facebook Comments

পছন্দের বই