লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সুতপা চক্রবর্তী

গ্রামের নাম শঙ্খনীল, নদীর নাম স্যেন


আমাদের দু-জনার স্নানযাত্রার সাক্ষী একমাত্র এই নদী।

এখন মধ্যরাত। পৃথিবীর কেউ তা
জানে না। জানে না কোনো
আচাভুয়া পাখি। এই যে নদীর
ধারে বসেছি আমরা, আর সারা
আশমান জুড়ে বিকট পূর্ণিমা
অঝোরে ঝরে পড়ছে আমাদের শরীরে
দেখ, কেউই তা দেখছে না।
আমরা কীভাবে নিজেদের
আড়াল করেছি, কীভাবে একে
অপরের দিকে ছুড়ে মারছি মুঠো
মুঠো বৃষ্টিস্নান
তা দেখার কোনো চোখ নেই। তা
শোনার কোনো কান নেই।
পৃথিবী এখনও দৃষ্টিহীন।
পৃথিবী এখনও শ্রবণশক্তিহীন


এসো, এই নদীর ধারে দু-জনার
বৃষ্টি সাজাই। ধরো, একখানা
কুঁড়েঘর, বাঁশের বেড়ি। এ-গ্রামের
নাম শঙ্খনীল । নদীর নাম স্যেন।
সে-নদীর ধারে আমাদের সংসার।
অবিরাম জোছনা পড়ে। অবিরাম
বৃষ্টি পড়ে। আমাদের সাতপুত্র
ডাগর ডাগর। আমি তুমি জোছনা
খাই। বৃষ্টি খাই।
রাজা, ওগো রাজা, এসো এসো,
এই নদীর ধারে দু-জনার বৃষ্টি সাজাই


বৃষ্টি সাজাতে গিয়ে মনে পড়ল
এখানে, এই নদীর ধারে বসে
আমাদের সারারাত ভেজার কথা
ছিল। এখন কি বৃষ্টি হবে, রাজা?
তোমার শরীরে এত আমার গন্ধ
কেন? আমার শরীরে এত
তোমার গন্ধ কেন? যদি কেউ টের
পায়! লুকোও রাজা, নিমেষে
লুকোও। তোমার ভেতরে
লুকোও আমায়


শোনো না। দাঁড়াও এবার। একটা
চুমু খাই!

কত কত বিরহের পর আমাদের
দেখা হল, রাজা! যত বলি তত
যেন কম পরে ভাগে। আমার
ভাগে তোমার ভাগে, সব
মিলেমিশে একাকার এখন।
চারদিকে তুমুল বৃষ্টি। তুমুল
তুফান। রাজার শরীরে আমি
আঁকি সংসার। সংসার। নিরাকার।
রাজা, রাজা, ও আমার জন্মের
রাজা। এসো, আচমন করি তোমার


দেখ, এই নদী এই দীর্ঘ রজনী
আমাদের কীভাবে আগলে
রেখেছে!

তুমি পরজন্মের কাছে মানত
করো আমারে। অথচ প্রতিটা
জন্মেই আমি এসে ধরা দিয়ে
যাই। রেখে যাই আমার ছাপ।
তোমার শরীরে দিয়ে যাই
আমারই বৃষ্টি, বন্যা। কী আবেশে
সেখানে ঘাই মারো তুমি! ঘাই
দেও আমারে। বোঝো না জন্ম। বোঝো না ইঙ্গিত। আমিই তো
তোমার একমাত্র শেকল,
সাতনরী সোনার হার। ওহ্ রাজা,
মানত করো। মানত করো। মানত
করো আমারে বার বার

Facebook Comments

পছন্দের বই