লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

মহিউদ্দিন সাইফ

শুরুর দিনের কথা

সেই হাঁসীর শূন্যতা ভরা মুখ ঈর্ষ্যারতি-র
জেনে কাছে গেলাম।
সাধ হল, এত অপাঠ্য পীত লিপি কার?
চকিতে আকাশের ইঙ্গিতময় সুবাস কষ্টিপাথরের হয়ে এল।
যে-আভাস বহুদিন, বহুকাল থেকে
উঠব উঠব করে রোজ গাঢ় হচ্ছিল
আজ নেহাতই অবলীলায় সরোবর খুলে বেরিয়ে এল
ঝাড়তে ঝাড়তে শত ডানা।

বাতাসের সূক্ষ্ম কণাগুলি,
যেগুলিকে জানতাম ধুলোপিণ্ডের সারাৎসার বলে,
সহসা চৌচির হয়ে
ফোটাতে লাগল একটি করে নিশুত কদম।

আমি আকাশ আর মাটির মাঝখানে
সিঁদুর-হরিতাল খুঁটিটা ধরে ভাবছি,
হাঁস, হব কি হব না…!

পাখিঅলা

একদিন এক পাখিঅলা এল, আমাদের খুশবুদার দেশে।
জন্মের পর এই প্রথম।
পাখিদের মুখ এত গাঢ়!
রঙ্কিনীর মনে হল।

সে কত কিসিমের, কত ছাঁদের রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা।
নির্মল কেশগুচ্ছে গরবিনী
পীতধড়ায় ইঙ্গিতময়,
কাঁচা অঙ্গের মখমলে সাত ঘোড়া
চরে বেড়াচ্ছে, প্রগল্ভ মাঠ।

লাল পদ্মের মতো পাখিঅলা,
যেন দীর্ঘ জীবন পার হয়ে এসে শোনাল অভিনব কথা।
ত্রিভুবনের গূঢ় রঙ ছেনে ফোটাল
স্ফূর্তি নামের এক বুদবুদ।

আমরা ছেলেবুড়োরা যাবতীয় চোখ খুলে দেখতে লাগলাম
ভিন্ন ভিন্ন পাখি থেকে উত্থিত হচ্ছে
একএকটি নিরল শব্দ।
সেই ধ্বনি ক্রমে গাঢ় হতে হতে
আমাদেরই মাঝে রুয়ে দিচ্ছে শত শত যুগনদ্ধ তরু।

ঘোড়াজন্ম

পড়ে থাকি
অর্জুন গাছের গোড়ায়
আরও সব দারাসুত
মুখে মুখ গুঁজে, গুফতুগু
বপ্তা মংলার সাথে, খুবধীরে, প্রণয়মেদুর।
সে এক ইশানচাপা, নেশাড়ু অখিল,
ছড়িয়ে রাখে উঁইমেকা, থানে
একগাছি সুতো, কাজল, এয়োতির সিঁদুর।
এন্তেজাম করে, সাঁকরাতে, মাধুকরী
গন্ধে উথাল জুড়িভোগ।

পিতার থেকে মন্ত্র নিয়ে, অঙ্কুরিত নাদ
বেঁধেছে এই কচ্ছপী বীণা।
সেই থেকে তার হাতে ভরণ-পোষণ,
গান শুনি: অর্ধমাগধি দোঁহা।

নির্ভাবুক বসে থাকি, দ্রুতমন্দ ছায়ায়
গোপন টুরুই ডাকে কোনো কোনো দিন।

জ্যোৎস্না রাতে

জ্যোৎস্নায় লহর, উড়ছে চরকার সুতো।
শুক্লা দ্বাদশীর আকাশ, পাহাড়ি নীল ও মন্থর।
তা-ই অধিকার করে বসে আছে বুড়ি
বৃহন্নলা বটের তলায়।

সীতালাউ ফুল টুপাতে রাখা
অপার্থিব দোপাটির আলো, শিশির স্বাগতা।

এদেরই গোপথ দিয়ে নেমে আসে
আরও একটি বুড়ি, অঙ্গুষ্ঠপ্রমাণ।
ত্বকের কুঞ্চনে সৌরভ, গুলঞ্চবাহার।
মহাদানা ঘাটে দূরজন্মের স্মৃতির মতো নেমে
ভাঙে গোল পাথরটির গুমান।
মাখিয়ে দেয় মাথায় চন্দন পায়ে গেরুমাটি।

হাত ধুতে ধুতে
ব্রহ্মানন্দ তালশাঁসের মতো হয়ে আসে পুকুর।
একটি মোহন পাখির দিকে চোখ ঠেরে
হেসে ওঠে,
কে এই মরমিয়া?

জল…

নিরাময়

‘একদিন জলাশয়ের মতো এক যুবতী এসে
আমাদের শৈশবের কাঁথাকানি রাখা
প্যাটরা খুলতেই চারপাশে প্রস্রাবের মহক।’

এটুকু শুনেই মনে হল, কার কাছে যেন
রাখা আছে তামার ঘুনসি।
পিতামহের জালকাঠিগুলি পেলাম না বলে
নামাজ-পাটির থেকেও উঠে এল প্রাণ?
হাঁস আর সাপের খেল দেখতে চেয়ে
সারারাত কাবার হল জ্যোৎস্নার খোঁজে…

কিন্তু এ-ধূলিশয়ান সংসারে দেখলাম
একটি কাবরা ছাগল চরে বেড়াচ্ছে সঞ্চালিত বাতাসে।
আউল করা সবুজে দু-একখানা বংশলোচন।
আর অদূরে মকরধ্বজ আকাশে
কে যেন আমাদের হরিমান রোগ
শুক আর শারিতে স্থাপন করছে,
বুনো হরিদ্রায় ছড়িয়ে দিচ্ছে।

 

Facebook Comments

পছন্দের বই