লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

নিমাই জানা

সাইকেলটি প্রেমিকা, কেমোথেরাপি আর কোরিয়োগ্রাফার


সাইকেলে রাখা ফরসেপটি এক লোমশ ডাক্তারের ডান হাতের ছত্রাক সংক্রমণ
অপারেশন থিয়েটারের নীল বিছানাটি হঠাৎ ঘামে জবজবে, ক্যামপোজ ইঞ্জেকশনটি শিরদাঁড়ায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সাপের মতো, অবচেতনেই প্রেতশিলা দ্যাখে সবাই অথবা ঈশ্বরকে, শববাহী গাড়ির চালক অনন্ত নেশা ঘোরে থাকে দিনরাত
তার চোখে অনলবৎ চিতাগ্নি জ্বলে সারাটা জীবন
গভীর রাতে কেউ হেঁটে যায় মৃদু ছন্দ তালে


লাল রঙের কঠিন আলোর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে কতজন মরুভূমির জোনাকি হয়ে গেছে
নিজের বুকপকেটে জমিয়ে রাখা তিল ক্ষেত্র আর হাইপোথ্যালামাসের লজ্জাবতী গাছ পাতা মুড়িয়ে ডেকান ট্র্যাপে আটকে গেল
ব্রন মুখে কতজনের মুখ, সিলিকন ক্যাথেটার, নর্মাল স্যালাইন আর ডিসপোভ্যানের উদর ছাড়া সবাই সন্ন্যাস, আসলে সকলের গায়ে মৃদু তাপমাত্রার জ্বর ছিল। দেবতার পায়ে আলতা পরাতে গিয়ে ভেঙে ফেলেছে কাচের প্রিজম শিশি
তারপর মানুষেরা বিকলাঙ্গ কবিয়াল হয়ে গেছে
মুখ ফুটে কথা বলতে পারে না সংগমকালে


মৃত্যুর পরে কতজন সন্তান এক বিছানায় ঘুমিয়েছে ১৫ দিন নিরামিষ ভোজ্য খেয়ে
চাদরে টিকটিকি আরশোলা ছাড়া সবাই প্রদীপের আলোয় শিখে নিচ্ছে নিজেদের সংশ্লেষণ ক্ষমতার ক্যাপাসিটি, পাঠ্যপুস্তকের
দিদিমণি শেষ সময়ে কলমের পেছন দিকটা খুঁচিয়ে দেখছে চোখের উপপাতার স্পন্দন, বুকের কাছে স্টেথোস্কোপ রাখতেই মুহূর্তে জেনেছিলাম এক্সপায়ারি নোটের পিছন দিকে অনেক অনুর্বর ফাঁকা মাঠ পড়ে আছে, গর্ভবতী হয়ে পড়ার খবরটি ঠিক তার মতোই ব্ল্যাঙ্ক্স, ম্যানকাইন্ডের প্রেগা নিউজ


সাদা দিদিমণির ইউনিফর্মে অদৃশ্যভাবে দেখেছিলাম পেছনের রঙিন স্ট্রিপ, এই যৌনতা দেখতে গিয়ে আমার চোখ বুঝিয়ে দিল কোনো এক অপরিচিতা অন্ধকারের ওপারে দাঁড়িয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ কদমের কবিতা শোনাতে পারে
অথচ যে-কেশরাশির জন্য পাগল হয়ে সাইকেল চালানো ছেড়ে দিয়েছ, তার লিভারের অসুখটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের মতো
সে আসলে কেউ নয় নিজের শুয়ে থাকা সায়ানাইড বেডসিড কথা
শরীরের সব ছিদ্র মশার কামড়ে মারা গেছে


দ্বিখণ্ডিত হওয়ার আগে মাথার হাড় আর চোখের প্যানিক ডিজঅর্ডারের মতো কাজল, সাইকেলের সাথে মৃত্যুবরণ করেছে
তার পাদানিতে সুয়েজ খাল ছিল, পিঠে কত ভূমধ্যসাগরের চিত্র অংকন করেছি ফেব্রিক কালি দিয়ে, গ্রে ম্যাটারের ডিপ শেডিং
ইচ্ছা করে কোনো জলবিন্দু আঁকিনি বুকের দিকে সাইকেলের হৃদপিণ্ডে জলজ হিমঘর আছে
তার প্রতিটি শিরায় ত্রিভুজের কালচে রক্তস্রাব
আগুন জানে সাইকেলটি একটি মৃত সাইনবোর্ডের মতো ভীতু, ঘনঘন ডিলিট করে ম্যাসেঞ্জারের চ্যাটিং, ইমোজিতেও ভয়
স্পাইরাল পাতাবাহার নতুবা একটি উচ্ছল ইনস্টাগ্রাম অবলা গ্রিটিংস কার্ডকে ছুড়ে দিয়েছে মরচে ফুলের সাথে
মৃতপ্রায় পরজীবী হাঁ করে দেখে নিমগাছ
আর বাকিরা অশরীর প্রেমের সমীকরণ ভুলেছে
জানালাটি তারপর দীর্ঘ রাস্তা আর ফুলটব হয়ে গেছে


আমি শুধু একটি কাপড় রঙের সাইকেলের কথা ভাবি, কীভাবে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে পিছনের ক্যারিয়ারে বসিয়ে মৃত প্রেমিকার কাছে নিয়ে যায়, প্রেমিকার দাঁতে হলুদ রঙের ক্যাভিটি ছিল সাদা কবরের ভেতর পাশাপাশি ইষ্টমন্ত্রের গেরো খুলে বাইবেল পড়ার পর দু-জনে দুটো মেডিকেটেড পিল খেয়েছিল
তারপর কেউ সারারাত ঘুমোইনি, ভিঞ্চি দাঁত খিঁচিয়ে কোর্টে আপিল করেছেন।
দু-কৌটো রঙিন আপেলের জন্য কেউ হাত পোড়াতে পারে, অথচ তার রঙের কৌটায় জীবন্ত কোবরা সাপ, যেন পিচ্ছিল ম্যাজেন্টা মোনালিসা আঁকার পর গভীর রাতে উঠে নিজের জীবনের ছবি ফুটিয়ে তুলতে এঁকে বসলেন একটি পাত্রীওয়ালা পিদিম
তার পিঠের উপর একগোছা স্তনের চারাগাছ


নিজের পায়ের তলায় ফুট অ্যাবসেস আছে কোনো ওষুধেই কাজ করছে না বয়স্ক বাবার ক্যাথিটার ছাড়া সবেতেই বিছানার বেডসোর গন্ধ
রঙিন জলীয় দ্রবণে অণুজীব আর রঙিন মাছেরা ফেরোমেন নির্গত করে, প্রজননের নেশায় কত সৈন্য অপেক্ষা করে আছে রাত জলাশয়ের ধারে, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র
ওই তো দ্যাখো, উঠে আসছে যুধিষ্ঠির ছায়ার মতো


হাতে মহাপ্রস্থানের দলিল হায়ারোগ্লিফিকে লেখা, এক অবৈধ দ্বিভাষী দরকার
মৃত মুরগির চামড়ার মতো কাঁকড়া বিছার অসুখটি চেপে রাখবে বুকের পাঁজরে
নৌকার আয়ু এত কম হওয়ার কথা নয় তারা, পারাপার জুড়ে দিয়েছে প্রবাল নেশায় শববাহী গাড়িতে করে আত্মারা ছুটে যায় ধূপ গন্ধের দিকে, ঘূর্ণাবর্ত ধোঁয়া, ব্রহ্মাণ্ড
মাটির ছোপকে ব্রহ্মাণ্ড বলা যায় কী ভাবতে ভাবতেই সাইকেলটির দুটো পাখনা গজিয়ে গেল সাইকেল আর রিমফিতার কোনো সমাধানসূত্র বের হল না
সাইকেলটির ব্রহ্মলোকে বিয়ে হওয়ার পর দুই শতাব্দী কেটে গেছে, জন্ম নিয়েছে একটি চিন্তিত নার্সের ভাঁজ করা কপাল
মৃত সাইকেলটির শরীর জুড়ে প্রাক্তন প্রেমিকারা নাচ জুড়ে দিয়েছে
রোদ এখন কোরিয়োগ্রাফার

Facebook Comments

পছন্দের বই