লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

স্বস্তিকা ভট্টাচার্য

জল

যে চলে গেছে
তার প্রতি প্রশ্ন নেই
যে রয়ে গেছে
তার প্রতি আশা নেই।

মানুষ তো জলের মতো
যে-ধারা একবার গেছে,
তা আর ফেরত আসে না।

অথচ টাইম কল
তার জন্য কত অপেক্ষা!

মাছবাজার

বাজারে যাই
মাছের জল পেরিয়ে এগোই।

দাম বেড়ে গেছে
তাই পছন্দমতো মাছ নিতে গিয়েও
না নেওয়ার অজুহাত পেয়ে যাই।

খুব রেগে গেলে বলি,
“মাছের বাজার পেয়েছ বুঝি!”
অথচ জানি
ওই বাজার থেকে কীভাবে মুখ ঢেকে বেরোই।

বাড়ির খুদেরা রোজ এক মাছে বিরক্ত
কিন্তু ওই দুপুরের দিকে পড়ে থাকা
নেতিয়ে যাওয়া মাছ ছাড়া আমার গতি নেই।
পরের মাসের এক তারিখ আসে যায়।
মাছের রকমে বদল আসে না, আনি না তাই।

যা সস্তায় পাওয়া যায়,
তার বেশি কিছু আমি জানি না।

সাধারণ কথা

যারা পাশাপাশি ঘুমায়
সবাই মা-সন্তান, স্বামী-স্ত্রী
পরিচিতও নয়।
ফুটপাথে পিঠ রেখে
আকাশ দেখে একসাথে
রাত্রিবেলা পাশ ফিরে ঘুমায়।

দরকার শব্দটা ভীষণ সীমিত।
ভাত, কাপড়
মাথার ওপরে ছাদ।

মিছিল গেলে তাকিয়ে থাকে
কোলে বাচ্চাকে নিয়ে
যেন ফ্রি-তে সার্কাস!
কেউ ঝান্ডা নিয়ে চলে গেলে
শোনে,
“আমরা আসলে দিন বদলাবে।”

সংসার

মা চিরকাল একটাই সংসার বুনলেন
বাবার যত রাজ্যের গল্প,
সেই সংসারের দাওয়ায় বসেই।
মায়ের সংসারে এদিকে গল্প নেই,
একটা নিয়মে বাঁধা সব।
অথচ বাবার গল্পে,
কোনোদিন সংসার আসেনি।

এ-কারণে কি প্রয়োজনেই শুধু কথা বলতেন,
মা-বাবা?

ঈশ্বর

ঈশ্বর এখনও চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।
লন্ঠন খুলে নিয়ে বউ চলে গেছে,
পুকুর ঘাটের অন্ধকারে স্নান সারতে কষ্ট হয়,
ঈশ্বর স্নান সেরে এলে তাকে ‘ বলে ডাকি।

নৈবেদ্য সাজিয়ে রাখে মানুষ,
ঈশ্বর মানুষে উত্তীর্ণ হন খাবারের চাহিদায়।
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে গিয়ে অস্পৃশ্য হন ভগবান,
এক পাতে ভোগ খায় ভোগী আর দাতা।

আলেয়া জড়িয়ে উপাসক হন সাধু,
গেরুয়ার আড়ালে লালিত লোভ জেগে ওঠে।
“ঈশ্বর আছে, আছে ঈশ্বর”— চিৎকার করে ওঠে উপচার,
প্রণামীতে নেশা করেন ভগবান।

বউ লন্ঠন নিয়ে ফিরে আসে ভোরে।
যেটুকু যা ধুয়ে গেছিল, তাই লেগে যায় গায়ে
মানুষজনম ঘুচে যায় গোপনে।
ধরা-চুরো-নৈবেদ্য, ঈশ্বরজনম আবার প্রচারিত হয়।

ঈশ্বর ফের চাদর মুড়ি দিয়ে জব্বর ঘুমের প্রস্তুতি নেন।

 

Facebook Comments

পছন্দের বই