লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

উজ্জ্বল ঘোষ

শস্যময়ূর

ক্রন্দসী, তাঁতের কণ্ঠদাগ ধরে ধরে গিয়ে দেখি
নীল মাঠে শস্যময়ূর ফোটাচ্ছ তুমি।
অক্ষরের মাঠ বরাবর হেঁটে হেঁটে
এসে পড়লাম এ কোন শস্যের মাঠে!
গর্ভস্থ ভ্রূণের মতো বাঁধা পড়লাম তাঁতের নাড়ির ডাকে।
ধ্বনিময় মাতৃগর্ভে, আশ্চর্য ছন্দের ঘরে, শুনি
মাতুলকুলের হাতে বোনা হয় গায়েহলুদের হলদে শাড়ি।

দূর নও, শান্তিপুর, মায়ের যমজ দেশ তুমি;
আমাকে ফসল করো, শস্যে ভরে দাও।

ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে

ঘুঁটে পোড়ে, তবু কেন গোবর হাসে, মা?
দহনে তৃপ্তির স্বাদ কেন খোঁজে আর এক দহন?

গোবরের গোল থেকে নাড়ি ছেঁড়া দুটো ঘুঁটে
ভীষণ আলাদা কেন পোড়ে;
হৃদিপদ্ম ছাই হলে মিশে যায় উনুনের বুকে!

অন্ধকার সুতো বাড়ে তোমাতে আমাতে।
অনক্ষ রুমালে বাঁধা থেকে যাব তুমি আর আমি?

সংখ্যার জননী তুমি সৃজনের গোল;
যদি চোখ মেলে দাও, যদি সেই শিশুর ঘুমোনো
বাবা আর মা-কে মলে দাও কান, তবে
পুড়ে ছাই ধুকপুক থেকে হৃদয় নিঃসৃত হবে।

প্যারাসুট

ধ্বনির প্রহরী আমি, পদাঙ্কের কান;
মনোমোনিয়ামে দেখো বেলো করে কারা—
বেলো করে পৃথিবীর পাঁচটি আঙুল

পাখিরা শুদ্ধ ‘নি’ জানে, কোমল ‘রে’ তাও জানে;
আমি মনোমোনিয়াম, বাজি
ভীষণ গোপনে, শোনো,
সারেগামা প্যারাসুট বোনে

ঠেলে নিয়ে যাও যদি খাদের কিনারে
প্রজাপতি প্যারাসুটে উড়ে যাব দূরে

আবার প্রসূত হব মাটি আর জলে

লবণ সত্যাগ্রহ

দিগম্বর ফকিরের বেশে হেঁটে যাই চলো দু-শো একচল্লিশ মাইল।
এসো ডাক পাড়ি, সাড়া দিই, শুনি সমুদ্রকথন।
শব্দেরা ঢেউয়ের মতো ছুঁয়ে দিক এসে;
স্বরের ভেতর ছবি, ছবির ভেতর স্বরলিপি
রেখে দিয়ে, ফিরে যাক নিজেদের দেশে।
দিগম্বর ফকিরের বেশে তৈরি করি চলো প্রাণের লবণ।

বলো বীর

(গৌতম বসু-র শ্রীচরণে নিবেদিত)

“জয়লোভে যশোলোভে রাজ্যলাভে, অয়ি,
বীরের সদ্‌গতি হতে ভ্রষ্ট নাহি হই।”
— কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অঘোর পল্লব নিয়ে ধরাশায়ী শাল
ভাগীরথী বুকে বেঁধে দাঁড়িয়ে মশাল
ঠান্ডা পর্ণে লেগে আছে বীরের গঠন
তোমার চিন্ময় জল তোমার বাহন

পরাস্ত বাতাসে বয় জয়ী ইতিহাস
যাপন চিন্তিত মেঘ, জীবন আকাশ
আকাশ ভ্রমণপথ, আকাশই পথিক
পাতালে অর্ধেক বৃত্ত— অদেখা অনীক

শ্মশানে শুধোয় এসে রাজার সন্তাপ :
বীরের সদ্‌গতি থেকে ভ্রষ্ট হওয়া পাপ?

 

Facebook Comments

পছন্দের বই