লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

জয়শ্রী ঘোষ

অসুখ


তবু কাঁটা দেয় গায়ে। শীত, সে তো বহুদূরে! ধুলো নেই, মাটি নেই, স্পর্শ নেই, ভেসে যায় তরল ধারা। মেঘ ছুঁয়ে সবুজলতা, স্মৃতি ফিরে এলে পাখি ডানা মেলে। লাল পালক, হলদে পালক ঝরে পড়ে নদীর কিনারায়। জলটুকু কথা বলে, এ-কবিতা কাকে দেব উপহার! তরঙ্গ খেলে যায় পাকস্থলীর জটায়। রামধনু রঙে বিষাদ মাখানো, জড়িয়েছে দ্বীপের গায়ে—


একটা আস্ত শহর জলে থৈথৈ, টাচ করেছি যেই লিফটে নিমেষে এগারো তলা। চাবি খুলি এ কি অবস্থা! ঘরের ভিতরে ঘর ডুবে আছে, বৃষ্টি ভিতরেও। শাওয়ারের জল খোলা, শব্দ রিমঝিম! দু-কান দু-হাতে চেপে ধরি…! পশ্চিমের জানালায় শুকনো গোলাপ কুঁড়ি, স্ট্রবেরি টুকরো করা। ওদিকে গোছানো ব্যাগে তোয়ালে জড়ানো বোতল, ভিজে গেছে সব কিন্তু সবটাই ঠিকঠাক পরিপাটি। মুখোমুখি ঘরে রোদ্দুর, বেবিফ্রক দড়িতে ঝুলছে বারান্দায়। তবুও এ-বাড়িতে বৃষ্টিপাত! কে যেন বলছে, ভিজে গেলে?


নিশ্বাস নিইনি বহুদিন, হাওয়া ভরে রেখেছি কাচের বোতলে, উলটেপালটে দেখে সাজিয়ে রাখি সামনের টেবিলে। বোঝাই হাওয়ার প্রকার ভেদ… দূষিত হাওয়া, বিশুদ্ধ হাওয়া, এয়ার পিউরিফায়ার সিস্টেম। আমি গাছ নিয়ে পড়াশোনা করি রীতিমতো, হাওয়া চুরি করি আর বোতলে ভরি তারপর সাজাই টেবিলে সারিসারি। হঠাৎ আহ্লাদে অজান্তে ঘাড়ের আঁচিলে হাত চলে যায়, আমি খেলি আনমনে। বোতলে নিশ্বাস চিৎকার করে বলে, সাতজন্ম হয় না সাতসমুদ্র, তুমি মিথ্যাবাদী, তুমি কিচ্ছু জানো না


বাতাসে ফুলের রেণু, তারা কথা বলে। আকাশে ঘুড়ি, তারাও কথা বলে। ঘূর্ণি হাওয়ায় শরীরে ন্যুডিটি ওড়ে। এতদিন যেখানে ধারাপাত লেখা ছিল, সেখানে মেঘ ঢোকে। ঘুড়ি যত ওপরে ওঠে, ততই গভীরে যায়। ঘনীভূত হতে হতে স্নান হল চোখের। মস্তিষ্ক নিশ্বাস নেবে না বললে মেঘেরা ঘিরে ধরে। বাতাস ভরে দেয় নীল বেলুনে, তবুও বাঁশি বাজল না আর


ছিঁড়ে যায় ক্রিয়াপদ, চেতনার ঘোর বরষা। শুকনো গলা, পাশে জল রাখা আছে গ্লাসে। গোপন অঙ্গে স্পর্শেরা খেলেছে! আমি স্নান দিই পরতে পরতে। প্রশ্নের বোঝা এত পিঠ ঝুঁকে গেছে, সোহাগী দুপুর তবু ঘুম নেই চোখে তৃষ্ণা। বুকময় জমে থাকা বৃষ্টি কোন উঠোনে দেবে ধরা?


সাঁকোর দু-পাশে মাছেরা খেলা করে। আঁশটে সাঁকো মাছরাঙা খুঁটেখুঁটে খায়। এ-শতকের পাখিরা জন্ম ছিঁড়ে জড়ো করে গাছের কোটরে। দীর্ঘ সাঁকোটি এক টুকরো আলো চায়, কোটর ছুঁয়ে দেয় সূর্য। বৃদ্ধ সাঁকো মাঝে মাঝে তাপ নেয়, কতটা সরল হলে চাইতে পারে! কঙ্কাল ফেলা আছে নদীর এপারে ওপার, নতুন প্রেমিকেরা শ্বাস ফেলে দেয় পথের ওপরে। কারো রয়ে গেছে চুম্বনের ছোঁয়া। প্রবীণ প্রেমিক ফেলে যায় পুরোনো কয়েন। সাঁকোরও কান্না আছে! নদী টলমল—


ব্যাধির জমাট রক্ত দু-হাতে, লাল রঙে রাঙিয়েছে পোশাক। হেমন্তের পাখিরা দল বাঁধে আকাশে, মেঘ উড়িয়ে নিয়ে যায় কোথায় কে জানে! বৃষ্টির নৃত্য সর্বনাশা, নূপুরের শব্দ চরম। যুদ্ধ ভেঙে চুরমার! ছাতা হাতে এসেছে চাঁদ, সাজিয়ে নিই খেলার ঘুঁটি। স্বপ্নগুলো মুঠোয় ভরে পালঙ্ক ভেবে নিই। যত বড়ো পালঙ্ক ততটাই খিদে, এসো ভাগ করে খাই। নীরবতা খানখান, একটু নস্টালজিক হও মাঝে +মাঝে। ব্যাকরণে চোখ রেখে দেখি রোদ কমে আসে, কালো সর্বনাম অন্ধকার ঢেলেছে, আকাশে একটা-দুটো তারা মিটিমিটি হাসে, যাবতীয় কথায় আলোর প্রলেপ… এত অসুখ এত ঔষধ তবুও ফেটে পড়ছে কুসুম—

Facebook Comments

পছন্দের বই