লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

কৌশিক দাস

সংক্রমণ

মধ্যদুপুরে গলির ভেতরে একটা বাড়ির দিকে
চোখ পড়ল—

পুরোনো কাঠের ফ্রেম, জানালায় নীল রঙের পর্দা ঝুলছে

হাওয়ার সেপ্টিপিন তাকে নাড়িয়ে দিল?

ঘেমে-নেয়ে ওঠা ভিজে চুলের মতো
মনে হল সময়টা। কে জানে ওই নীল পর্দা থেকেই বাতাসে আরও একটা নীল ছড়িয়ে পড়বে কিনা!

বাজার

রবারের মতো একটা চিন্তা
কতদূর টানা যেতে পারে

বেশি টানলে সে ছিঁড়ে যাবে; অথচ ঘরে
একটাই রাবার।

ছিঁড়ে গেলে আবার কিনে নিয়ে এসো

এ-সব ভাবলে আমার ঘাম হয়;
কেন-না কেনার জন্য আবার সেই বাজারে যেতে হবে।

আমি আর কুকুর

আমি একটা কুকুরকে নিয়ে কবিতা
লিখতেই পারি যেমনটা লেখে এখনকার
কবিরা কুকুরের লেজ নিয়ে

কিন্তু আমি লিখছি না তার কারণ ওই
কুকুরটা নিজেই

চার রাস্তার মোড়ে রোদের মধ্যে সে শুয়ে
আছে। গায়ের অনেকটা জুড়ে পচন ছড়িয়েছে— এই কথাগুলো নিয়েই তো আস্ত একটা কবিতা লেখা যায়

কিন্তু আমি লিখছি না কারণ আমার যেন
মনে হচ্ছে করুণ চোখ নিয়ে আমিই চার রাস্তার মোড়ে পচতে থাকা শরীরটা নিয়ে কুকুরের দিকে তাকিয়ে আছি।

নিদান

কাটা শসার উপরে বিটনুনের ছিঁটে পড়লে
কেমন গন্ধ ওঠে

এই গন্ধ ধরেই আমাদের আনাগোনা;
শসাখেতের পাশে চালকের ভ্যান আসার কথা
সন্তর্পণে, সেলাই করা রাতে

আল পাশ ফেরে, হাই তোলে, এসব চালান সে তার প্রপিতামহদের থেকে জেনেছে,তাই তার নাভি-ঘাস বিচলিত হয় না

কিন্তু কে বিচলিত হয়? বিচলিত একটি শব্দ;
তার ঠিক পাশেই গ্রামের হাট বসে, পঞ্চায়েত বলেছে, নিদান দিয়েছে : গ্রামের বাইরে যেন কিছু না যায়।

নিউটন

গুলির কোনো ধর্ম নেই,
সে চোখ বুজে মালিকের ট্রিগার শোনে

মালিকের কোনো ধর্ম নেই,
সে শোনে উপরওয়ালার কথা

উপরওয়ালারও কোনো ধর্ম নেই
সে শুধু বোঝে চারপায়ার ওই চেয়ারটাকে

চেয়ারের অবশ্য একটি ধর্ম আছে,
সে কেবল প্রতিটি বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের
দিকে আকর্ষণ করে।

মৌসুমি ফলের বাজার

কীভাবে যেতে পারি তোমার কাছে সেই নিয়েই আজ তেরো দিনের ব্যক্তিগত সফর।

তেরো দিন, তেরো সপ্তাহ নাকি তেরোটা বছর;
তেরো লক্ষ কোটিও হতে পারে

এ-সব সংখ্যার গায়ে হাওয়া দিয়ে চলতে চলতে জীবাশ্ম পায়ে এসে পড়ে, জানি এগুলো তোমার দিকচিহ্ন অথবা ঠিকানা হবে না

তাহলে কীভাবে যেতে পারি তোমার কাছে?
তোমার মায়ের বয়স বেড়েছে, তাকে মৌসুমি ফল এনে দেবার কথা ছিল, জামরুল বনের ছায়ায় নিয়ে গিয়ে পুরোনো কথোপকথন;
কীভাবে একটা ওষুধ দু-টুকরো করে ভেঙে খেতে হয়

সে-সব হল কই! বনগাঁর হাটে ফলওয়ালাদের সঙ্গে তোমার ঠিকানা নিয়ে ঝগড়াঝাটি হয়

ওরা আমায় হরিদ্রা বর্ণের খোসা দিল, বলল হাটেবাজারে ফলের ব্যাবসা খুব একটা ভালো নয়।

 

Facebook Comments

পছন্দের বই