লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

রাণা রায়চৌধুরী

বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে


ঐ লাভ চিহ্ন উড়ে যাচ্ছে
ধরো ধরো, ও যে বিষাদের প্রতীক
ও যে অভ্রান্ত অভাবের বাড়ি

ওকে আটকে রাখো। ওকে ভয়ংকর তালাচাবির নিভৃত
আগুনে সাজাও।

এই লাভ চিহ্ন
মায়া ও বাসনা ঘেরা উদ্ভ্রান্ত এক
পাখির পালক, অপলক আকাশের নীল দিকরেখা

ধাক্কা ও আকাঙ্ক্ষা মাখা এক
বৈদ্যুতিক দূরবীণ, ওই শরীরে শরীর মেখে
কাঁদছে ও

ওকে রুমাল দাও, আর দাও সন্দেহের হ্যারিকেন

ওই উড়ে যাচ্ছে ও
গায়ে তার বাতাস আর, আর গান লেগে আছে –
বিরহের ব্যস্ততায় ওই বাথরুমে ঢুকল, হিসি ও সন্ধ্যার
সন্ত্রাস ওকে শান্ত করুক…

গদ্যের কারিগর ওকে দিক ঘাস
আর এফএম রেডিয়ো
তেহরানের বাতাসে ভেসে যাক সে


যারা বাইক চালিয়ে যায়, তাদের আমার
ভালো লাগে। তাদের গায়ে ও মনে
অজগরের চামড়া, বনজ সহজ গুল্মলতা,
আধুনিক আসবাবের মতো গতি আর
তীব্র আকাশ কাঁধে উহাদের চলে যাওয়া…

দেখি আমি

দেখার চোখ দিয়েছিল যে সেও চলে যায়
গানের গা থেকে পাতা খসে পড়ে
ছোটো পিশি পাস্‌ড অ্যাওয়ে বলে ট্রান্সমিটারে আগুন
জ্বলে ওঠে, গানের গা থেকে ছোটোপিশি খসে পড়ে

দেখি আমি

ছালবাকল ওঠা একটা জীবন
যাকে ট্রেন থেকে দেখা অচেনা গ্রামের
মতো মনে হয়, ওইখানে মেজদা সরোজিনীকে
জড়িয়ে শুয়ে ছিল, মেজদার বিছানায়
বাইকের চাকার দাগ
সরোজিনী ঘষটে ঘষটে মৃতদেহ হয়ে ওঠে

মেজদার লিঙ্গ যেন
ভয়ংকর লেপার্ডের মতো
অদৃষ্টের দিকে চেয়ে থাকা

হে বাইক, বিড়াল কাটা রাস্তায়
এত মেজদা ও সরোজিনী কেন আজও?
হে বাইক, তোমার গর্জনে কেন এত
আত্মত্যাগ লেগে আছে?


মোমবাতির একটা দীর্ঘ কালো ছায়া
দেখা যাচ্ছে।
একজন ঝুলে থাকা মানুষ যেমন
ভাল্লুকে রূপান্তরিত হয়।

একটা বিপরীতমুখীরেখা তোমার
আমার সবার জীবনে আসুক।
একটা রিভার্শাল টার্ন।
ষাঁড়কে দেখা যাচ্ছে ওই প্রস্ফুটিত
ফুলের মতো, আলোর মতো।

জিলিপির বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।
পাত্র ময়রার দোকানের এক নম্বর
কারিগর, ঈষৎ চুতিয়াও সে, সে একদিন
মিষ্টিকে তেতো বানাবেই।

বুল ভার্সেস বিয়ার ফাইট ইজ
কন্টিনিউড।

আরও নীচে থেকে, খাদের গভীর থেকে
একদিন হঠাৎ আমাদের লালায়িত ষাঁড়
উঠে আসবেই, সঙ্গে চাঁদের ক্ষতবিক্ষত
মায়া ও ভালোবাসা।

জিলিপির বিয়েতে একটু বেশি খাওয়া
হয়েছিল, আমাদের সবার।

আমরা বেশি বেশি খাব বলে ষাঁড়কেই
ভাইজান ভেবেছি চিরকাল…


ভাইমাডা পঞ্চাশ
ইস্টামেট পঞ্চাশ/পাঁচশো
অ্যাটোরভা দশ
কঙ্কর কর দুই দশমিক পাঁচ
ডক্সোলিন চারশো
ডুওলিন দুইশো
বুদামেট দুইশো

জাপিজ দশমিক পাঁচ
Telekast L
কোয়াশ
পটল
ঝিঙে
লঙ্কা এঁচোড়ে পাকা কদুলি

আটান্ন প্লাস
দিবানিদ্রা
ভোরের দুঃস্বপ্ন
মনখারাপ
মা নেই
বাবা নেই
আজ শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি লাভ
আজ মাতুলালয়ের শোকলাভ

একটা সাইকেল
কেরিয়ারে চৈতালি হাওয়া
চাকায় পাম্প কম
সামনে বাম্পার

মেয়েটি সুন্দরী
কিন্তু তিতিরের বয়সি
যাক গে যাক
মুখে মাস্ক
রুমালে কফ ও সিকনি
আধার ও প্যান নম্বর মুখস্থ

তবু রাত আর শেষ হয় না
ভোরের ফার্স্ট ট্রেন ক-টায়?
শিয়ালদা থেকে মেডিকেল কলেজ

ক্লাস ফোরের দিনগুলো
মনে পড়ে


আচ্ছা ভালো কথা, বেগম আখতার তুমি
শুনেছ? আচ্ছা গীতা দত্ত? সায়গল? আসলে
ভ্রূণাবস্থায় আমরা ছিলাম সুরে ভেসে মায়ের
পেটে। আমরা সুর পান করতাম। গর্ভাবস্থায়
মা-ও খেত গীতা দত্ত মা খেত সায়গল—
ঝাল-মশলা ডক্টরের বারণ ছিল— মা
সে-বারণ শুনে শুধু সুর খেত, গলাগলা সুর। বাবা
নামিয়ে দিত তার খুশি খুশি শরীর থেকে— এই
যে শিক্ষিত জঙ্গল আমাদের; এই যে
উচ্চ-শিক্ষিত বন্যরা গীতা দত্ত-র সুর দাঁতে
ছিঁড়ে নিয়ে পালাল ভক্তিভরা জঙ্গলের ভিতর,
ঐ জঙ্গলেও সায়গলের সুর আছে প্রাচীন
দেবদারু গাছে।

তো এই সুর এই পথ— নাউন আর
অ্যাডজেক্টিভ আর ভার্ব আর প্রোনাউন দিয়ে তৈরি।
এখানে সাঁতার এখানে নিষ্কাম কর্ম, নিরাসক্তি।
এইসব সুরের ভিতর ঝমঝম করে ফার্নিচার
ঝরে-ঝরে সংসার, ঝরে ন্যাতানো ইউটিউব—
এইসব সংবাদ শুধু তোমার জন্য, এই বেসুরো গান শুধু
তোমার জন্য রইল।

আমাকে একটু চা দাও, আর দাও একটি পথ,
দীর্ঘ একটা পথ দাও, অনেক দিন পথের দেখা
পাইনি, পাইনিকে পেতে পেতে না-পাওয়ার
দিকে যেতে চাই…

Facebook Comments

পছন্দের বই