গল্প
শমীক ষাণ্ণিগ্রাহী
সবাই মিথ্যে বলে
আমার লেখা এটা প্রথম গল্প। গল্পটা লিখে আমার নিজেরই খুব ভালো লেগেছে।
আমার লেখা এটা প্রথম গল্প। তাই অনেক ভাবনাচিন্তা করে, সময় নিয়ে, দু-দিন অফিস কামাই করে লেখাটা শেষ করেছি।
প্রথমে গল্পটা আমি রিয়াকে পড়তে দিলাম।
রিয়া পড়ল। একবার দু-বার তিনবার। শেষে বলল, ভালো লেগেছে।
শুনে আমি খুশি হলাম। কথাটা বলতে রিয়া গতকাল রাত্রের রান্না বন্ধ রেখেছিল। এই কথাটা শুনতে আমাকে গতকাল রাত্রের খাবার রেস্টুরেন্ট থেকে আনতে হয়েছে। যাইহোক গল্পটা রিয়ার ভালো লেগেছে।
গল্পটা বাবাকেও একদিন পড়তে বললাম।
পরদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কেমন লাগল?
বাবা ছোট্ট উত্তর দিয়ে বললেন, পড়ছি। তারপর হাঁটতে বেরিয়ে গেলেন।
তার পরদিন আবার জিজ্ঞেস করতে বাবা, পড়ছি। বলেই হাঁটতে বেরিয়ে গেলেন।
এভাবে একদিন দু-দিন তিনদিন করে করে পুরো সপ্তাহ কেটে গেল।
রোববার সকালের দ্বিতীয় দফা চা খেতে খেতে বাবা জানালেন গল্পটা তিনি পড়েছেন। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন লাগল? বাবা সেই আগের মতো ছোট্ট উত্তর দিলেন, ভালো। বলে খবরের কাগজে মন দিলেন।
গল্পটা বউয়ের ভালো লাগল
গল্পটা বাবার ভালো লাগল
গল্পটা লিখে আমার নিজেরই খুব ভালো লেগেছে।
কয়েকদিন পর গল্পটা পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরে পাঠালাম।
আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম গল্পটা মনোনীত হবার জন্য।
অপেক্ষা করতে করতে একমাস কেটে গেল।
প্রায় ভুলেই গেছিলাম যে, আমি কোনো গল্প লিখেছি। ভুলেই গেছি যে, আমার লেখা প্রথম গল্পটা আমি কোনো পত্রিকার দপ্তরে পাঠিয়েছিলাম।
রিয়া ভুলে গেছে আমার গল্পটা কখনো পড়েছে কিনা।
বাবা ভুলেই গেছেন আমি একটা গল্প লিখেছি বলে।
বাড়িতে একদিন চিঠি এল আমার নামে। আমার নামে চিঠি প্রায় আসে না বললেই চলে। যা আসে সব বাবার নামেই। যাইহোক চিঠিতে পত্রিকার সহকারী সম্পাদক জানিয়েছেন যে, গল্পটা তাদের মনোনীত হয়েছে। এবং সেটা জুলাই সংখ্যায় ছাপা হবে। পত্রিকা প্রকাশিত হলে যথা সময়ে লেখক কপি আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
গল্পটা ছাপা হবে জেনে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। সঙ্গে আরও একটা নতুন খবর।
গল্পটার জন্য আমাকে সাম্মানিক দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে মিশিয়ে আমি খুব খুশি। আমার লেখা প্রথম গল্পটা শহরের সেরা পত্রিকায় প্রকাশিত হবে।
রিয়া হাসি হাসি মুখে বলল, খুব ভালো খবর। টাকাটা পেলে আমাকে একদিন খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে।
বাবা শুনে বললেন, ভালো খবর। সামনের মাস থেকে তুমি তাহলে নতুন গল্প লিখতে শুরু করে দাও।
প্রথম গল্পটা লিখে আমি খুব মজা পেয়েছি।
গল্পটা লিখে আমার নিজেরই খুব ভালো লেগেছে।
আমি অপেক্ষা করছিলাম আমার দ্বিতীয় গল্পটার জন্য।
জুলাই এল। শহরে গরম বাড়ল। লোডশেডিংও বাড়ল। মিউনিসিপ্যালিটির সাপ্লাই জলের টানাটানি বাড়ল। হিসেব করে জল খরচ করার কথা বাবা বার বার মনে করিয়ে দিতে লাগলেন।
পত্রিকা প্রকাশিত হল। অতি উৎসাহে আমি বইয়ের দোকানে গিয়ে এক কপি কিনেই আনলাম।
সূচিপত্রে আমার নামটা জ্বলজ্বল করছে।
সামনের মাস থেকে আমাকে আরও নতুন গল্প লিখতে হবে।
আমি অপেক্ষা করছিলাম আমার দ্বিতীয় গল্পটার জন্য।

শমীক ষাণ্ণিগ্রাহী
জন্ম: ১৯৮২, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পেশা: সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। প্রকাশিত বই: ‘নষ্ট ছবি’ (২০০৬), ‘আনজান আদর’ (২০১০), ‘বোতামের কারুকাজ’ (২০১৬), ‘জামা’ (২০১৬), ‘আমি এবং আমি’ (গল্প সংকলন, ২০১৮)। লেখালেখি শুরু ২০০২ সাল থেকে।