Categories
2021, January, Kobita কবিতা

মনিশংকর বিশ্বাস

ফল

রোদের জটা থেকে ছিটকে ওঠে কয়েকটি শালিখ
‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ কিশোরীর মতো ধানক্ষেত একা শিস দেয়
গোলাপ ফুলটি আসলে ততটা বড়ো, যতদূর তার সুগন্ধ
বহুদূর হ’তে আকাশে জীবন্ত কোনো গ্রহ তাকে প্রেম নিবেদন করে।
এইসব মিলেমিশে থাকে আমার ভিতর—
বাইরে থেকে বোঝাই যায় না এই মিলমিশ—
একটি বৃহৎ সংখ্যা যে-রকম দুই বা দুইয়ের অধিক সংখ্যার যোগফল।

মেঘ, বৃষ্টির প্রতি

যেদিন তুমি দুঃখ দাও না কোনো—
সেদিনও কেন এত কষ্ট পাই?

শৈশব

এক হাঁটু জল
জলে বাবার ছবি— শুধু একটি মাত্র তারা
কেঁপে কেঁপে দূরে সরে যায়

পারভার্ট- ১

ধর্মাবতার, মিথ্যে বলব না, ঘুম থেকে উঠবার পর থেকেই
শুরু হয় যৌনচিন্তা— মাইল-মাইল লম্বা আর প্যাঁচালো পথ—

চড়ুই পাখি, যারা সারাদিন খুঁটে খায় আর যৌনতা করে
ওদের তো তবু চিন্তাটা করতে হয় না—
এদিকে আমি হাড়হাভাতে
সারাদিন এই পাপের পথে হাঁটি
চটির ফিতে ছিঁড়ে যায়, পায়ে এটা ওটা বিঁধে যায়
এত হিউমিডিটি, যে দম খিঁচে আসে
তবু দরজা খোলে না কোনো…

সন্ধ্যাবেলায় আত্মহত্যার পরে
কখনো-সখনো একপশলা বৃষ্টি নামে—

আরও রাতের দিকে
এঁটো-হাতে ছেঁড়া জবাফুল নিয়ে বসে থাকি
রুগ্নবউ ঘেন্নায় পাশ ফিরে শোয়…

অতর্কিতে

তাজা বরবটির মতো ট্রেন—
এসো, তাকে শীত বলে ডাকি

ব্যক্তিগত ঈশ্বর বা পথের কুকুর—
কাউকে নিয়ো না সঙ্গে

গত তিনদিন ধরে চোখে লেগে থাকা মেয়েটি
পালসের ভিতর হেসে ফ্যালে।

চাঁদের নিজস্ব আলো আছে

চাঁদপানা মেয়েটি আজ হাওয়াইয়ান ব্রিজ ও ল্যাভেন্ডারের মিশ্র সুবাস পরে এসেছে।
এই সুবাস তৈরি হয়েছে বহুদূরের এক সমুদ্রশহরে—
কোরাল প্রাচীর ঘেরা ছোট্ট এক শহর
সেখানে সব পুরুষেরা মৎস্যজীবী, সমুদ্রনির্ভর—
তবে মেয়েরা মূলত সুগন্ধি-কারখানায় কাজ করে
আজ মেয়েটির সঙ্গে সেই সমুদ্রললনাদের এক ঝাঁক এখানে এসে পড়েছে
তাদের রোদ্দুর আর তলপেটের ব্যথা-সমেত।


আর আমি সারাক্ষণ ভাবছি, এই সুগন্ধে
ঠিক কতটুকু
চাঁদের নিজস্ব আলো

Categories
অন্যান্য

সেলিম মন্ডল

অদৃষ্ট

হাওয়ায় পুড়ে গেল ঈশ্বরের ছায়া, এখন নীল রঙের রোদ হাতে নিয়ে
ঈশ্বর ঘুরে বেড়ান মাঠে ঘাটে, ধুলোর আলপনা জমে তাঁর গায়ে,
নব্য প্রেমিক প্রেমিকারা তাঁকে পাথর মনে করে নিজেদের নাম
যত্ন করে লিখে রাখে— ঈশ্বর সব দেখেন আর মুচকি হাসেন,
নতুন অলংকার পেয়ে, আহ্লাদে, আবার পুড়ে যান ঈশ্বর…

বধূবরণ

সেদিন চৌকাঠ ডিঙিয়ে রোদ্দুর এলো, এলো আলো বাতাস জল—
একটা আস্ত সমুদ্র এসে ভাসিয়ে দিল খাট, আলমারি, ঘরের সমস্ত আসবাব…
এখন খোলা জানলার পাশে ভ্যান গখের হলুদ গম ক্ষেত,
আর রাতের বেলায় ছাদ জুড়ে মুনলাইট সোনাটা…
তোমার অর্ধেক আকাশ ‘এই শুনছ…’ বলে আলতো টোকা দিল আমার অর্ধেককে,
দু-চারটে তারা খসে পড়ার পর—

সেদিন তোমার সঙ্গে চৌকাঠ ডিঙিয়ে গোটা পৃথিবী এলো আমার ঘরে
আর আস্ত একটা সূর্য এসে আটকে রইল আমাদের বাড়ির আশমানে