লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বৈশাখী রায়চৌধুরীর কবিতা

অ্যাসাইলামের বারান্দা থেকে


একটা ব্রিজ ঝাঁপ দিয়েছিল শহর চিনবে বলে
আলো ঝাঁপ দিয়েছিল অন্ধকারে সূর্যোদয় দেখবে বলে

সুর ঝাঁপ দিয়েছিল গাছে
বাঁশি শুনবে বলে

আর এসবের মাঝে
বড়শি হাতে এগিয়ে চলেছে আমার চোখ

মাছধরা শিখবে বলে


সমস্ত আকাশ আর ঘুড়ির সম্পর্কের মাঝে থাকে
কিছু লাল নীল সুতোর দোহাই


সমস্ত অসুখের পাশে রাখা থাকে
ঢাকনা দেওয়া কাঁচের গ্লাস

অনেক নীচে থাকে জল
ভেসে আসে

‘এবার পুজোয় আমরা পাহাড়ে যাবো মা?’

আমার অসুখের ভেতর গড়ে ওঠে
ছোটো বড়ো অলঙ্ঘ সব পাহাড়


আস্তাবল ফাঁকা
পক্ষীরাজ হয়ে গেছে সব ঘোড়া

এমন একটা দৃশ্য দেখার পর বাড়ি ফিরে আসি

দেখি আমার নীল আলমারি থেকে ফের উঠে আসছে সমগ্র নাটক


একদিন সবাই মরে যাব আমরা
এ চরম অপবাদের পাড়ে বসেই

সূচে সুতো পরাই মেয়েটা
সবুজ কাঁথা স্টিচে বোনে

সাদা টেবিল ক্লথ


যে বাক্সে ঘুড়ি কেনার জন্য টাকা জমাতো ছেলেটা
একদিন সেটা খালি হয়ে গেলে বুঝেছিল

আকাশ আসলে কত বড়ো


উড়ে যাওয়া সব গল্পেরই হুইল চেয়ার থাকে না
কিন্তু সব হুইল চেয়ারই লুকানো দুটো ডানা থাকে।


কাঠ থেকে বাঁশি
বাঁশি থেকে সুর

সুরের ভেতর পাতার শোক

এই পরম্পরার নাম লিখে দাও গাছ


আমাদের প্রত্যেকের স্বপ্নে একজন প্রেমিক থাকে
থাকে স্বপ্নের প্রেমিকের বসতবাড়ি

পর্দাআঁটা দোতলা
বাঁধানো উঠোন
তুলসীমঞ্চ

শিউলিতলা

আর একটা লম্বা বারান্দা
যেখানে বসে গল্প করে আমাদের অন্ধ ভবিষ্যৎ

১০
অ্যাসাইলামের বারান্দায় বসে আজও ঘুড়ি আঁকছে যারা
গোটা পৃথিবীটাই তাদের কাছে বিশ্বকর্মার আকাশ।

পরিচিতি:
বৈশাখী রায় চৌধুরীর জন্ম ১৯৯১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান শহরে। পড়াশুনো বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে। প্রফেসর সৈয়দ নুরুল হাসান কলেজ থেকে স্নাতক ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তীর্ণ। বর্তমানে একটি কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত। লেখালেখির জগতে প্রবেশ ‘অপর্দাথের আদ্যাক্ষর’ পত্রিকার হাত ধরে। প্রথম বই ‘নৈঃশব্দ্যের চেকপোস্ট’ প্রকাশিত ২০১৭ কলকাতা বইমেলায়। এছাড়াও বহু পত্র পত্রিকার দীর্ঘ দিন ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত।

Facebook Comments

পছন্দের বই