আচ্ছন্ন দত্তের গুচ্ছকবিতা
জাদুবিশ্বাস
দেখা হয় না অনেকদিন
দেখা হয় না আমার দেওয়া চিহ্ন হিসাবে
ওর হাতে আমার হাতের ছাপ।
একদিন হাত ধরেছিলাম ওর,
খসখসে
বলেছিলাম এই তোর হাতে আমার হাতের ছাপ দিয়ে গেলাম।
***
আবদ্ধতা
টিনের ঘর ফুটো করে জানালা ঢুকেছে
ফুটো হয়েছে জানালা
ফুটোতে দরজা ছিল না
ছিল এই পাশ আর ওই পাশ
***
একাকিত্ব
নিজের আঁকা ছবিগুলি ছিড়ে ফেল, ছিড়েখুঁড়ে ফেলে দে।
ছিঁড়ে ফেল নিজের সব লেখা একাকীত্বের গভীর প্রতিফলন।
নিজের মানুষটিকে তাড়িয়ে দে, সরিয়ে দে সামনে থেকে দূরে কোথাও
এবার নিজেকে হাজার বার হত্যা কর, আত্মাকে তুলোধোনা কর, মুক্ত করে দে মুক্ত।
এইগুলো করার পর যখন বুঝবি নিজেকে তুই একা করতে পারিসনি, সেই মুহূর্তেই নিজের সামনে একটা শূন্য এঁকে নিস।
***
মুক্তি
মাঝরাতে ঘরের বিড়ালটা জানালা টপকানোর চেষ্টা করে
কাঠের ফ্রেমে বাড়ি খেয়ে ফিরে যায় অন্ধকারে।
অন্ধকারেরও একটা জানালা আছে খুললেই পাশের বাড়ির আলো চলে আসে।
ঘরের জানালা বন্ধ সব,
সব জানালার একটা ব্যক্তিগত খুলে থাকা আছে।
***
আদর
শব্দ কাছে টানে বাড়ির দুনিয়া
প্রতিশব্দ অনুকূলে
মরে যেতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে
কোনো এক রাতে ভয়াবহ নীল
শিশুর আকার ধারন করে,
আমি হাসি
শিশু দেখলে আমার ভয়াবহ হাসি পায়।
সপ্তাহ শেষে বাড়ি আমার কাছে আসে
ভয়াবহ শিশু গুলি কামরে ধরে গাল
আমি তোর গাল ভেবে চুমু দিয়ে দিই।
***
যন্ত্রণা
রাতে কালো নীল মিশে গিয়েছিল যখন
আকাশে তখন মাখন লাগিয়ে রেখেছিল কেউ।
আজ পুকুরপাড়ে গিয়েছিলাম আকাশ দেখতে।
চাঁদ উঠেছিল,—
পুকুরপাড়ের গাছটির পেছনে।
তার ঠিক নিচে আগুন ধরিয়ে রেখেছিল কেউ আমি শুধু পুড়ে চলে এসেছিলাম।
***
ধ্বংস
একটা ঘর ছিল শুকনো কলাপাতার তার ভিতরে একটা কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে রেখে আসতো কেউ।
হাওয়ায় কলাপাতা গুলি খস খস করত,
হঠাৎ একদিন বাতির আগুন লেগে পুড়ে যায় সব।
***
শুধু ব্যাঙের লাফালাফি
আমাদের ঘরের পিছন দিয়ে যে মাটির রাস্তাটা চলে গেছে পুকুর পাড়ের দিকে, তার মাঝ খানে রাতে কিছু ব্যাঙ বসে থাকে চুপ চাপ।
রোজ রাতে ডাকা ডাকি করে
মাঝে মধ্যে আমার পায়ের পাড়া খেয়ে
রাস্তায় মিশে যায়।
রাস্তা লাফ দেয়,
জঙ্গলের দিকে চলে যায়,
বুঝতেই পারি না।
বুঝতেই পারি না,—
রাতে রাস্তা আর জঙ্গল
শুধু ব্যাঙের লাফালাফি ছাড়া।