লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সুমন ঘোষের কবিতা

খনন

এখন ছেড়ে রেখেছি
আধ-কপাটে, ঢুকছি বেরোচ্ছি
সবাই স্বাভাবিক নিয়েছে আমার হাঁটাচলা
বাতাসের আসা যাওয়ায় ঘরের স্বাস্থ্য বজায় থাকে।

লক্ষ করেছি চোখ টানতে দরকার নিষিদ্ধ পরিত্যক্ত কোনো বাড়ি
যেখানে ঘুম থেকে উঠে দাঁড়ায় আদিম প্রকৃতি
যেখানে রসনা তৃপ্ত হয়
যেখানে খননকার্য চলে ইচ্ছেমতো
যেখানে আচ্ছাদিত আছে কোনো গহ্বর
যেখানে আগ্রহ অমৃত পায় রোজ
খোলা উন্মুক্ত এঁটো জিনিস, স্বাদ মেটে না আর।

তাই, ঠিক করেছি
যেকোনো সময় দরজা বন্ধ করে দেব
সবাইকে ভুলিয়ে দিয়ে খুলে দেব কয়েকযুগ পর
আরেকবার নতুনকরে খননের স্বাদ এনে দেবে শরীরে।

সভ্যতা

পথ দেখায় পথ
ঘাট জলে পা ভিজিয়ে দুদন্ড বসতে দেয়
গাছের ছায়াটুকু শুষে নিয়ে বসি।
নদীর প্রবাহ দ্যাখে জীবন
পশু-পাখিরা খাবার থালায় সেজে বসে আমার
সব দখলের পর স্নান করি আমি
তোমাকেও ধুয়ে দিই পা থেকে মাথা।

স্নানের পর আমাকে সভ্য দেখায় বেশ
এসো সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে আমরা সভ্যতা বাঁচিয়ে রাখি।

জীবন

জীবন অনেকটা ওই জমিটির মতো
যার গর্ভ থেকে খাদ্যারস শুষে নিয়ে ফসল ফলে
তারপর আস্তে আস্তে অলক্ষে
উর্বরতা হারিয়ে পড়ে থাকা
রিক্ত নিঃস্ব অনাহুত অনাদৃত ন্যাড়া।

জীবন অনেকটা ওই ফাঁকা মঞ্চটির মতো
তাঁবু খুলে নেওয়া হয়েছে, শিথিল দড়ির বাঁধন
বাঁশ খুলে নেওয়া হয়েছে
পড়ে আছে এখানে ওখানে খোলা পাটাতন
অথচ কালই কত লোক অভিনয়ে ছিল।

জীবন ওই বৃদ্ধ বটগাছটির মতোই
কালও কত কত লোক এসে বসত ওর ছায়ায়
আজ নিঃসঙ্গ মৃতপ্রায়।

জীবন আসলে এরকমই।
একটা বদ্ধ পুকুর
একবার মজে গেলে আর ভাসে না কোনো হাঁস।
শুধুই অপেক্ষা করা তখন।
ততদিন
ব্যাকটেরিয়ার পূর্ণগ্রাস সম্পন্ন হয় ধীরে,
অবিচল।

প্রস্তুতি

মৃত্যুর গান ভেসে আসে কোথা থেকে
চিতা, সাদা থান, ছেঁড়া লেপ-কাঁথা
খড়ের চালে দাপট এঁকেছে বৃষ্টির ঝড়
জীর্ণ পাঁজরের দাগ, ফুটে আছে।
আমি উল্কার মৃত্যু দেখি প্রত্যাশার ঝুলি পেতে রেখে।

মানুষেরা মৃত্যু ভালবাসে
সুন্দর রজনীগন্ধা, গাঁদা
নেয়াল দড়ির বন্ধনে বাঁশের চৌদল ওঠে সেজে।
মুখাগ্নির পরই জমে ওঠে আসর
বাঁশের এক-একটা আঘাতে হাড়-গোড় স্বর্গের সিঁড়ি চড়ে।
মানুষের নেশা হয় এ শোকে
একছিলিম গাঁজা, দু’পেগ মদ একটা বিড়িতে
জেগে ওঠে জরা-জীর্ণ বুকের পাঁজর।

আমার বরাবরের প্রিয় মৃত্যুর গান ভেসে আসে কানে
উল্কা দেখতে দেখতে একটু জিরিয়ে নিই
নেশাতুর হৃৎপিন্ড আমার প্রস্তুত হয় বাঁশের আঘাতের জন্য।

সুমন ঘোষের কবিতা

পছন্দের বই