লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সেলিম মল্লিক

তোমার মানিব্যাগ খুলে

আমার পড়ার টেবিলে লাল রঙের পার্স ফেলে গেছ, তার ভেতর থেকে
কয়েকটি কাগজি মুদ্রা বার হয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে
বাইরে উড়ে গেল— বুঝলাম, তোমার সঙ্গে
টাকাপয়সার সম্পর্ক নয় আমার। ঘুমের সময়
তোমার ঠোঁটের বর্ণনাতীত গাঢ়তার দিকে
তাকিয়ে থাকতে পারছিলাম না, ভাবছিলাম
দুপুর গড়িয়ে গেছে, ঘুম ভাঙিয়ে
তোমাকে আরও রঙিন ফল খেতে দেব।

আর এখন, তোমার মানিব্যাগ খুলে
আনমনে খেয়ে ফেলেছি ঘন খয়েরি লিপস্টিকের শাঁস।

তারার চেয়ে দূরে

হোম কোয়ারান্টিনের সন্ধ্যে বেলা শিশি খুলে
তোমার নেলপালিশের গন্ধ শুঁকছি, এইরকম
তাজা গন্ধের হালকা পিঙ্ক গোলাপ-ফোটা সময়ে
তোমাকে হাওয়াদের সহচরী মনে হয়, যে কিনা
আমার শ্বাসপ্রশ্বাসের কাছে এসে
খুব ঠান্ডা অতি সূক্ষ্ম পালক দিয়ে নাকের ডগা স্পর্শ করে।
আজ আমি পাকা ফল ভেবে
তোমার লিপস্টিকের মাংস খেয়ে ফেলেছি।

আবার জ্বর আসছে, চোখের পাতা ভরে
ঈষৎ উষ্ণ জল ছলছল করে।

পাশের ঘর তারার চেয়েও দূরে, তুমি
অনেক কিছু অনুমান করতে করতে
নিজের জন্য বিছানা প্রস্তুত করছ, নীল প্রেক্ষাপটে
পড়ে রয়েছে একটি অপ্রতিভ সাদা বালিশ।

একটা গ্রাম আছে

ধোঁয়া দিয়ে তৈরি অনেকগুলো পাহাড় পেরিয়ে
আমাদের একটা গ্রাম আছে— কোনোদিন
যাইনি, কেবল যাওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করি।
গোটা কয়েক গান তুলে রেখেছি, ওখানে গিয়ে
গাইব আর নীল জলে ভাসাব লাল ফুল।
নিশ্চয় বিসংবাদ হবে না, যা বহুবার
আমাদের কথোপকথনের ভেতরে ঘটে যেতে দেখেছি— গাঁয়ের লোকেরা
পোশাক ছাড়াই এগিয়ে আসছে আমাদের দেখে এবং
তাদের সঙ্গে আমরাও ন্যাংটো হয়ে চাঁদ লুটিয়ে পড়া
শস্যখেতের দিকে দৌড়ে চলেছি, পেছনে পেছনে
নিরীহ পশুরা ছুটছে উৎফুল্ল জ্যোৎস্না।

দেশের কথা

ঘুমের আগে আমার হাত
স্বাধীনভাবে ছুঁয়ে আছে তোমাকে, কিন্তু তোমার নিশ্বাস
নিরুত্তাপ ঠাকুমার গল্পের মতো— নিদ্রাকালেও
রাষ্ট্রহীন মানুষেরা মুঠো শক্ত করে ধরে রাখে! যদিও
অনেক আগেই তাদের খোয়াতে হয়েছে
ফুল-ফোটা রুমাল, কাকচক্ষু আয়না, পূর্বপুরুষের সইসাবুদ,
নাম-লেখা তৈজসপত্র, অন্তরঙ্গ মুহূর্তের শিস।
শুঁড়-তোলা হাতির নকশা-করা কাঠের বাক্সটা
আমরা কোথায় রেখেছি? ওর মধ্যেই তো রয়েছে
কালো পোকা সাদা ফুলের অসংখ্য দাগযুক্ত আমাদের যৌবনের চিরকুট।

Facebook Comments

পছন্দের বই