লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

অনিকেশ দাশগুপ্ত

পরিহার

একটি বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতার জন্য শত অব্দের এই ধীর মৃত্যু
মেষপালিকার নীল চক্ষু থেকে পাহাড়ি ঝোরার দিকে
চাপা গোঙানির মতো অনুশীলনের ত্রিকোণ বর্ণমালা বয়ে গেছে
এই-ই সেই রাত্রিকালীন প্যারেডের অগভীর কণ্ঠস্বর,
ঝিলাম খেত—
বজ্রভরতি উপত্যকার একটি সেলোফেন ফুলের প্রদোষে আমাদের
চিহ্নিত মুখ অবনমিত হতে হতে রেখাঙ্কিত চৌরাস্তার ড্রিলগুলি
এখনও ছিনিয়ে নেয় বহু কাঙ্ক্ষিত অস্ত্র, উচ্ছ্বল পাত্রের ভেতর তারই ছায়া
একক সত্তার দাগে দ্যাখো অবরুদ্ধ যত আকাশ-নীল এরোড্রোমে
দীর্ঘ রোবোটিক প্রস্রাবের স্ব-হুঙ্কার, সিজদার অমলিন কড়িকাঠজুড়ে
সন্দিগ্ধ আগুনের ভাষান্তর কেবলই উন্মত্ত
ক্রেতা-বিক্রেতার বিগত স্বর্ণালী, ধুলো-কোটের ভেতর উবু হয়ে বসে
সূর্যের নশ্বর স্বাদ খাদানে গড়ে তোলে মনোহর উপনিবেশ

পসরা

দুঃসহ এই অ্যাম্ফিথিয়েটারে সুদূর বাতাসের
বুদ্বুদ একদিন হাজির হয়েছিল
আমাদের প্রস্তাবসমূহ নিয়ে—
স্বপাতুর আগুনে দ্যাখো, আমি পুড়ে যাচ্ছি না
ছিঁড়ে যাচ্ছে না আমার তন্তুময় উপাদান

ধ্বংস শৃঙ্খলের ওই যে বাঁশিটি
অণু মুক্ত, যেভাবে বাঁক নেয় প্রগাঢ় অন্ধকারের দিকে
ধীর গতিময়তা, ধরাচক্র, এক নিমেষের যত আলোয়
জোনাকি সদৃশ তুমিও কি দেখোনি মৃত গর্ভের আনোখা ঊর্ণা
এক পাক্ষিক অমরতা এমনও তো আছে খানিক
স্নেহ গ্রন্থিজুড়ে যত ব্যবচ্ছেদকাম

আপামর ভগ্নাবশেষের ভেতর জনাকীর্ণ ছায়াগুলির মতো
অচঞ্চল, নিবিড় ছড়ে ওঠে মেলোডি,
কাঠুরের লন্ঠন চিড়ে ফেলে অরণ্য অনুষঙ্গ
এখানে উচ্চারণের মতন নিঃসঙ্গ
পড়ে থাকে চন্দ্রারোপিত চাতাল
পাশবালিশের ছিদ্র বেয়ে মিথুন অশ্বেরা গ্রহান্তরের সেই
অকল্পে, নিয়ত ব্যঞ্জনায় নিজেদের বিনিময় করে

কৃষিভঙ্গিমা

আধ শতাব্দীর পুরোনো নোঙর থেকে মৃত বুদ্বুদ ওঠে
সমবায় ছায়ার পাশ দিয়ে তির্যক বেরিয়ে পড়েছি আমি
যৌনপরবশ দোয়াবে চমৎকার গাঁথা হয়েছে বর্শাবিদ্ধ সেই আঙ্গিক
সমুদ্রের নোনা চুম্বনে ধূসর মমির মতন
উষ্ণতম ঊর্ণার দিকে উড়ে গিয়েছিল যে-পাথরখণ্ড
সময়ের ত্রিকোণ ভেঙে বেরিয়ে এসেছে সে বিভ্রান্ত ফার্নেসে
নীল অবগাহনে চিত্রল হয়ে ওঠে নগরশেষের জ্ঞানলোক
অপ্রাকৃত গোধূলি পারে আর্চের মতো তার অধিষ্ঠান

দর্শক

কাঠগড়ার নীলিমা এভাবেই গল্পে-গল্পে ফুরিয়ে আসে
ক্ষমার্হ অন্ধকারের দিকে
একভাবে চেয়ে আছি যারা
গিলোটিন-অনুরক্ত প্রতিটি ভোরে সময়ের নিঃসঙ্গতা টের পাই

আত্ম-বিহ্বল দর্শকের গা থেকে ঝরে পড়া নির্ভার পালকটিকে
স্থাপন করেছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো অন্য কোনো ইতিহাসে
স্তম্ভিত জানলার মুখে ঘুরে যাচ্ছে মুগ্ধ বাতি

সামুদ্রিক পঙ্‌ক্তি আর সোঁদা গন্ধের পৃষ্ঠার ফিকে আলো নিয়ে
ঠিক এভাবেই অপ্রিয় দূরত্বের অযুত কৃষ্ণরথ
পেরিয়ে যাব অমোঘ ভোরে

যন্ত্রণা

অন্ধকারে দাউদাউ জ্বলে ওঠা বাড়িটির জন্য
একটি বিস্মিত চাহনির গৈরিক টুকরোগুলো জড়ো করছি আশৈশব
মৃত ঘাসফুলের ওপর দিয়ে হেলেদুলে চলে গেছে সরীসৃপ
সর্বৈব অযৌন লাল ফুলের কৌটায় আকাঙ্ক্ষিত প্রসবের জন্য

ধোঁয়ার মতো চারপাশের দৃশ্যে একটি বালখিল্যতার মরু
সাদা ফ্রকের দহন, আর বিকেলের টিলার কদর্য আঙুলেরা
কীভাবে অপ্রস্তাবে ফিরে আসে আগুনে, একইরকম দগ্ধ

মৃদু স্বরের কুয়োপারে কেউ
এমন বিচ্ছিন্ন দৃশ্যগুলিকে বুঝে নিতে চাইছে
চাবিঘরের ত্রস্ত প্রসন্নতা অন্তত একটিবার
ঝলমল করে উঠছিল তখন, অনুনয়ের সুরে

Facebook Comments

পছন্দের বই