লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

অনির্বাণ মজুমদার

ডিসেম্বরের স্মৃতি


তাই শিরোধার্য তোমার মমত্ববোধ
নরম আস্তানা ছেড়ে বহুকাল অনিদ্রায়, বিষাদবন্দরে—

বিরোধিতা আমার কম্ম নয়,
লিখে রাখি অলক্ষ্যে, সবটুকু, অভিমান বাদে
মাঝপথে প্রস্থান ভালো কিনা, সে-বিষয়ে ভাবি
ভাবনার প্রয়োজন ফুরিয়েছে জনসৈকতে।

ফুটপাথ-শ্বাস পাতার শিকলে মেশে
ঝড় নেই, ঝড়ের সময় ঠিক হয়নি এখনও

সূর্যোদয়ের ভয়ে
পাউরুটির ফাঁকে লুকোয় মাখন
স্নেহ কি ভেজেনি গর্ভজাত আলোর প্রপাতে?
অপচয় হল তবে শত্রুতার, ঠিক-ভুল জ্ঞানে

সহসা গ্রহণ লাগে
চাকা বদলাতে নামি জনশূন্য বিষাদবন্দরে।


কাঁঠালবাগানে আয়ুকারকের স্থূল মাছিগুলো
সরল বিপথগামী খরগোশ কোণে জড়সড়,
চা-কাপে ভাসে প্রজাপতির আদুরে ডানা
দেশলাই জ্বলে ওঠে, হাওয়া এল নীরব উঠোনে—

সাইকেলে ফিরে আসে আহত ভাবুকদের শিখা
অনেক বছর ধরে একাকী পাগল থাকে ঘরে…
প্রাচীন সংকেত চিনেছিল পশুরাও, অগোচরে
বাকি সব হারিয়েছে ঘড়ির অসম ব্যবহারে।

এখানে কিচ্ছু নেই, ফলের অলস শাঁস
জানে তার পরিণতি, তবু
নিজেকে মেলেছে ধরে ইভের সরল অভিনয়ে

আয়ুপথ ধরে ওরা আগুনের দিকে ভেসে চলে।


অবিরাম কথকতা, সহৃদয় নিমের জঙ্গল
অতিপরিচিত বাতাসের দোলা— তুলনারহিত
কুঠার ও শাবলের পেশাদার কথোপকথন;
নৈঋত— নীচে, কয়েক প্রজন্মের অব্যবহৃত জাঁতি,
নাড়ির অমোঘ টান— নিয়তিও হেরে সংযত
রাতপাহারায় পরশ্রীকাতর চাঁদের
অসংখ্য প্রহরী,
তাদের অন্তর্ঘাত সমাচারে
মুচলেকা দিয়েছে বাঁদর— নিছক কৌতূহলে…

সাজানো বাসর শেষে অগত্যা হেসেছে নাগর!

পাতা খসে অপমান-খলপ্রত্যাশে,
যেভাবে ক্ষমতা বুঝে নীরবে আঘাত করে ওরা
একমনে রুপোর জাঁতি: ঝাঁপ দেয় কাছে পেলে
কোমল সুপুরি।

খয়েরি ঘোড়ার দঙ্গল চলে প্রমোদবিহারে।


মৌনব্রত অবসর নিয়েছিল পাহাড়ের কাঁধে
অন্ধকার সমতলে নিশ্চিন্ত হৃদয়ের বাস—
স্মৃতির নেশায় শেরপার দৃঢ় আরোহণ,
আকাশের কাছাকাছি, দুঃখ যত মিথ্যে হয়ে যায়…

অভিমানে হারায় গাছের ফাঁকে আহত শিকার
বুনোফুল, রোমকূপে সম্মোহনের নির্যাস,

নেকড়ের অভিজাত সাহচর্যের ছোঁয়ায়
বোবা মেয়ে নেচে ওঠে, ঐশ্বরিক ইঙ্গিতে।
পায়নি, পায়নি টের— শব্দের প্রত্যাখ্যানে
অনাহূত ছায়ার আগমন!

শেখেনি ক্ষমার পরিষেবা, এই কথা স্বজনবিদিত
সতর্ক শ্বাস আর রক্তের শর্ত বিমূঢ়
নেকড়ে অদৃশ্য হয় নরকের নিঃশব্দ নীলে।


আর্সেনিকের দিন শেষ হয়ে এল কি তবে?
অভ্যেস অহেতুক কাগজ কুড়োনো কবেকার
রাত্রের কুকুরেরা সূত্রের সন্ধানে ব্রতী
ভিজে খঞ্জনি, শীতের বিহ্বল কীর্তন,
মোজাইকে মিলিয়েছে ইঁদুরের ছোট্ট তীক্ষ্ণ লাফ…

বন্দির চোখে সূর্যের নিষ্ঠুর আলো
দৃষ্টি ফেরালো?

পোকাদের উৎসবে কখনো নিমন্ত্রণ পেলে
সম্মতি জানিয়ে উপহার তল্লাশে মাছি!

ঘরের বাইরে যেন না যায় ভালোবাসাবাসি…

অযথা ভয়ের জামা পরে কেন এই মানুষেরা?
আতঙ্ক চিরকাল বহুদুর্ঘটনাবিলাসী।

অগ্রাহ্য করে তাই বহুরূপী ভক্তির টানে
মুক্তির অগ্রাধিকার চায় নিজের আসনে,
হায়নার লালারসে ধুয়ে গেছে সূক্ষ্ম প্রমাণ—

সময় ধাক্কা মারে আর্সেনিকের বোকা হাওয়ায়…


হুজুর
আবার বলছি এ-রণক্লান্ত দেহে
নির্বাসন মকুব হল না?

আগুনের থেকে আরও পাওয়া বাকি ছিল,
মাংসের থেকে আরও চাওয়া বাকি ছিল
গত ক্রিসমাসে আমি গুনেছি মাশুল—
সবিনয়ে,

চিরকাল কেউ ভালো না…

 

Facebook Comments

পছন্দের বই