কবিতা
অনুপম মুখোপাধ্যায়
সেন্ট পিটার্সবার্গ
আমারই ভিতরে আছে সাবেক শহর
পুরাতন ইমারত প্রাচীন পাঁজর
ধাতুময় ইতিহাস এই শহরের
আমার সম্ভ্রম চায় অন্ধকার রাতে
এখানে কান্তার নেই মেয়েমানুষের
বুকের বোঁটায় নেই খয়েরি জোছনা
প্রেম আছে ঘৃণা আছে তার চেয়ে বেশি
প্রেম আর ঘৃণা নিয়ে অভিনয় আছে
ভাঙা উৎসবের দাঁত লেগেছে বাতাসে
কালো নদী বয়ে গেছে শহর দু-ভাগ
দস্তয়েভ্স্কির লেখা কাহিনি যেমন
এপারে দাঁড়িয়ে শুনি ওপারে চিৎকার
পাললিক
টেথিস সমুদ্রে তুমি ডুবে থেকেছিলে
অনুপম তুমিও তো পলির পাহাড়
বাতাস তোমার বুকে ডাকাতি করেছে
ছিঁড়ে রেখে গেছে সব জীবন কাহিনি
পাহাড়েরও সীমা থাকে উচ্চতাবিশেষ
কিছু পাখি উড়ে যায় পাহাড় পেরিয়ে
পর্বত হলে না কেন হতে পারলে না
হালকা হাতের চাপে গড়ে উঠেছিলে
টেবিলে কে রেখে গেছে দুধের গেলাস
খেয়ে নাও দিঘা যাও হাওয়া পালটাও
নিরো
অন্ধ লোক হেসে ওঠে তুষার পতনে
তুমি আরও দেওয়াল ঘেঁষে যাও
সরু গলি
পিঠে বোঝা
বৃদ্ধ ঘোড়া আসছে
শহরের যে-বাড়িতে আগুন লেগেছিল
তুমি আজও যাবে কি সেখানে
আধপোড়া পাণ্ডুলিপি
টিপে দেখবে কি
মনে কি পড়বে সেই ভুলে যাওয়া মুখ
মিশকালো বেহালার বাঁকে
জাহাজ ২
ভাঙা ১ জাহাজের অবয়ব থেকে সমুদ্রের ফেনা মুছে
নতুন জাহাজ আজ প্রকাশিত হল
ক্ষুধার্ত লোক কি বোঝে রেস্তোরাঁর ভিতরে বসা
অন্য ১ ক্ষুধার্তের জীবন কেমন
হাওয়া যত ছুটে যায় ধুলোভরা রাস্তা দিয়ে
অনেক দূরের কোনো কুটিরের দিকে
দুঃখ তত সোজা নয় বৃষ্টিতে ভাসিয়ে
পরিচ্ছন্ন বন্দরের অনুমতি পাবে
নতুন আষাঢ়ে মেঘ কোথায় গর্জন করে
কোথায় ভাসিয়ে দ্যায় নোঙরের ফুল
তার দেহ তার সে-শরীর আরও বহুকাল
তারই নিজের হাতে ব্যবহৃত হোক

অনুপম মুখোপাধ্যায়
জন্ম ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯। কবি হিসেবে যাত্রারম্ভ নতুন শতকের সূচনায়। সচেতনভাবেই কলকাতাকেন্দ্রিক পরিচিতি নির্মাণ না করেও মহানগরের সাহিত্যমহলে যে আলোচিত হওয়া সম্ভব তার অন্যতম সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত। কবিতা থেকে প্রবন্ধ, ছোটোগল্প থেকে উপন্যাস— লেখালিখি সারা বাংলার অজস্র পত্র-পত্রিকায়। বিশ্বসাহিত্যের সাম্প্রতিক ধারার এক মনোযোগী পাঠক। বোধহয় তাই বাণিজ্যিক পত্রিকায় লিখেও পরবর্তীতে সচেতনভাবে সরে আসা ‘বাণিজ্যিক পত্রিকার কবি/লেখক’ পরিচিতি নির্মাণের পথ থেকে। পরিবর্তে সচেতনভাবে নিজস্ব ‘পুনরাধুনিক’ শৈলীনির্মাণে মনোনিবেশ। বিশ্বাস করেন, অজান্তে বা অবচেতনে এই পথেই হাঁটছেন সাম্প্রতিকের আরও বহুতর সিরিয়াস কবি-কথাকার। ‘পুনরাধুনিক’ শৈলী বিষয়ে সিরিয়াস প্রবন্ধগ্রন্থেরও প্রণেতা। সমকালীন সমান্তরাল ধারার বাংলা কবিতার প্রকাশনার স্বার্থে ২০০৯ থেকে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ‘বাক্’ ব্লগজিনের সম্পাদনা। এক দশক অতিক্রম করা হয়ে গেল সেই ব্লগজিনেরও। ইতিমধ্যে প্রকাশিত বারোটি কাব্যগ্রন্থ, একটি করে কাব্যনাটক, প্রবন্ধ, গল্প সংকলন ও তিনটি উপন্যাস।