কবিতা
অর্ঘ্য চক্রবর্তী
ভীষণ পূর্ণিমা রাত
জলে ডুবে চাঁদ মরে পড়ে আছে।
ছুঁয়ো না;
খানা তল্লাশি হোক,
পুলিশে মারুক আঠারো ঘা—
পরে না হয় “হরি বোল” বলে
কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যেয়ো দ্বিরাগমনে।
কাল রাতেও দেখেছি তাকে—
কলসী হাতে মুখ-গোমড়া করে বসে আছে,
ঘাটের কাছে।
প্রেম
থেমে যাক সময়!
থেমে যাক সর্পিনী হাওয়া;
এমন সময় আলো নিভে যাক,
থেমে যাক মানুষের কণ্ঠস্বর—
আর রাত্রির নিস্তব্ধতা খান-খান করুক—
রবীন্দ্রসংগীত।
তখন তুমি, হে প্রেম—
আমার পাশে এসে বসো চুপচাপ
ঘুমন্ত নিরীহ বেড়ালছানার মতো।
মৃত্যুভয়
মাঝে মাঝে মনে হয়, মৃত্যু এসে টেনে নিয়ে যাবে। তাই আপোস করে বন্ধুত্ব পাতাচ্ছি তার সাথে। এমনকী চালাকির ছলে দিচ্ছি ঘুষও! আর এই শরীর, তুলোর মতো নরম শরীর বিছানায় কুঁকড়ে শিথিল হয়ে পড়ে আছে— তাকে দিচ্ছি ভাত, ডাল, আলুসেদ্ধ, মাছ। জল খাওয়াচ্ছি সময়ে সময়ে; পড়াচ্ছি জামা, ঢেকে রাখছি শাল-চাদরে। যাতে ওই শয়তান মৃত্যু এসে টেনে না নিয়ে যায়।
উল্কাপিণ্ড
তুমি যেন লুব্ধক,
উজ্জ্বল হয়ে আছ পুব আকাশে।
দ্রুত ছুটে চলেছ শুক্রাণু-বেগে।
তুমি নিশ্ছেদ্র অতল;
অবলা মহাজাগতিক স্তনপিণ্ড এক।
ক্রমশ দূরতর, নিভু-নিভু—
আমারই নক্ষত্রবিলাপ নিহত দিনের পাশে।
উদ্বৃত্ত সময়
কিছুটা সময় আমি জমিয়ে রেখেছি
ফাটা, চ্যাপ্টা টিনের কৌটোয়।
সময়মতো বাগানে নিয়ে যাই,
উঁচু করে ধরি টিনের কৌটোর হাতল—
চারাগাছেদের গায়ে ঝরে ঝরে পড়ে,
ঝিরিঝিরি সময়।
ধুলোয় মলিন গাছের পাতার মাঝে
ছোট্ট বিন্দু, আমার সময়।

অর্ঘ্য চক্রবর্তী
জন্ম – ১৪ ই ভাদ্র, ১৪০৪ (৩১শে আগস্ট, ১৯৯৭) দক্ষিণ ২৪ পরগণার চম্পাহটিতে।নিবাস আজন্ম গড়িয়ায়। সর্বোচ্চ শিক্ষা: ২০২০ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. পাশ রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক মহাবিদ্যালয়, নরেন্দ্রপুর থেকে। সাহিত্যের সঙ্গে যোগ মূলত সাহিত্য নিয়ে পড়ার সুবাদেই কবিতা-সহ সাহিত্যের অন্যান্য ধারার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং সাহিত্য রচনার অনুপ্রেরণা পাওয়া।