Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

পঙ্কজ চক্রবর্তী

ইচ্ছাপত্র

কীই বা চেয়েছি এমন
দু- একজন সামান্য অবুঝ পাঠক
অথবা নিরক্ষর শ্রোতা
রেলপথে হাওয়া ছোটে দূরত্বের কাছের মানুষ

যে জটিল, সহজ চোখে দৃষ্টিপাত করে
মধ্যদুপুরে উনোনে স্নানের অবসর

অনাবৃষ্টির দিনে দু’চোখে যে বিরহ ঝরে

নকল মানুষের মেধা
আমার কবিতা যেন স্পর্শ না করে

বৈধব্য

যে নেই তার ভঙ্গিমাটুকু নিয়ে বাজার সেরে এলে
বলছ : দেখো তো রঙটা কেমন?
মানাবে এই বয়সে !

আয়নার গল্প ছড়িয়ে পড়ছে দুই দিকে

কে দেখছে ? দুপুর ?
এলোমেলো বিছানায়
মিথ্যে সাঁকোর ছায়া পেরোচ্ছে জোয়ারের জল

ঝড়ের ভুল

সুন্দর, আমি গিয়েছিলাম

তুমি তো বলনি : বাজাও আমারে বাজাও
তাই ফিরে আসা
বিষণ্ণ আমিষ ছায়া দরোজা স্পর্শ করেনি

তোমারও সংসার আছে
আছে জল, প্রিয় মুদ্রাদোষ, অন্তিম সাঁকোর চরিত্র

অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা নিয়ে
পৃথিবীর  সব গান ঘি ও আগুন মেপে
বিবাহরেখায় শেষ হবে ?
ধান ও যবের শিষে সূর্যাস্তের গান

সন্তান উৎপাদন জটিল হয়েছে

মিথের ওপারে

মহৎ তাঁর দুঃখ নিয়ে কিছুদিন সম্ভাবনা খোঁজে

চুল্লির ভিতর তাঁরও পয়তাল্লিশ মিনিট
উত্তরীয় ডানা ঝাপটায়
বেজে ওঠে স্মারকের টিনের পরাণ

সামান্য দূরত্বে পরামর্শ সেরে নিচ্ছে দুধওলা
দেবতা ও পাইলট কার
বদ্ধ ডোবার পাশে কিংবদন্তী উবু হয়ে বসে
দু-একজন নিরীহ মানুষ কারণে অকারণে বোঝে

মহৎ তাঁর দুঃখ নিয়ে প্রতিদিন সম্ভাবনা খোঁজে

বয়ন

জানালা বেয়ে নামছে কাঠবেড়ালির মৃত ছায়া
পুরনো ক্লার্কের ঘুম ভেঙে যায়

মাঠ থেকে উঠে এল একজন
দাঁড়িয়ে রইল  নিজের তৈরি করা মেঠো বাসস্টপে
তার নাভির কাছে তামার পয়সা টলোমলো

সমস্ত দূরত্ব আলোকবর্ষব্যাপী এক শ্বাপদ ভঙ্গিমা

দুজন মানুষ আলাদা অসুখে পড়ে আছে খড়ের গাদায়
যেন সব অস্থিরতায় গ্রহণ লেগেছে

যেন সূঁচই প্রকৃত বিদ্যা উন্মাদ ঘাসের জঙ্গলে

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

তন্ময় ভট্টাচার্য

তোতাপাখি

ঘুরিয়ে কিন্তু লেখাই যেত—
‘অনন্ত সৌন্দর্য ফুঁড়ে উঠেছ, কাঁকই,
পালকে জলের দাগ, হাত মোছো আঁচলে যেমন’

অথচ জল খেতে গিয়ে এইমাত্র নদী হল
গলা-বুক, হাত কাঁপছে থরথর করে

কবিতা নয়
সহজ কিছু পথ্যের প্রয়োজন আজ

জ্বরের পর জ্বর আসছে
গান বাজছে নির্মলা মিশ্রের

গাইডবুক

একটা বাসরুটের শুরু ও শেষ জুড়ে দিত আমাদের
অথচ বাসে চেপে কোনোদিন যাইনি তোমার কাছে
নিঃসঙ্গ কবর থেকে, ভিখারির প্রত্যাখ্যান থেকে
বেছে-বেছে জেনে নিতাম নামকরণের অপূর্ব স্টপেজ

বাসেরা অপেক্ষা করত, ফিরে আসতে চাইনি যেহেতু
সাবধান করেছিল, একদিন জলে পড়তে হবে

ওদের

এ-বাড়িতে কোনো বিড়াল বাঁচে না
এমন এক সত্যের বিপরীতে
দাঁড় করিয়ে দিলাম এই কবিতা

বহুদূর কোনো ধাপার মাঠে
ওরা বেঁচে উঠছে
একে একে অস্থি-চর্ম-প্রাণ

ফিরে এসে যদি জিজ্ঞেস করে
ফেলে এসেছিলাম কেন
আমাকেও ওভাবে বিদায় জানাতে চায়

তরুণ সেই কবিদের কী পরামর্শ দেব!

রি-শাফল

মায়ের এমন বয়সেই আমার জন্ম হয়েছিল
সেই বয়সে পৌঁছে, আজকাল ভাবার চেষ্টা করি
মায়ের সম্বন্ধ নিয়ে কেউ হাজির হলে
আমি কি রাজি হতাম বিয়েতে

পুরনো ছবির দিকে একেকটা দুপুর বয়ে যায়
জানলা দিয়ে উঁকি মারে বাম জমানার অবকাশ
মা হওয়ার আগে মা যে-তরুণী
তাকে কি আদৌ ভালোবাসতাম

বাবা হওয়ার আগে বাবা যে-যুবক
থই মেলে না
পুরনো ছবির মধ্যে হেসে ওঠে আমারই আদল

বহুদিন

একটি হাত যতদূর থেকে ডাকতে পারে, ততদূরই আলো
যত কাছে এসে নির্জীব হয়, ততটুকু আয়ু—

এইসব তত্ত্বে আমার বিশ্বাস ছিল না
হাতকে হাতের বাইরে চলে যেতে দেখেছি বহুবার

চাদরের বাইরে, এমনকী, চিতার বাইরেও

এত দূর—অথচ একটুও রাগ নেই
এসব ক্ষেত্রে আমার আঙুলগুলো নালিশ হয়ে ওঠে

বহুদিন সেই হাতে আঙুল বসেনি

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

মহিউদ্দিন সাইফ

রিমিল-পিয়ং কথা


পিয়ং-এর মতো অস্ট্রিক কন্যা রিমিল কখনো দেখেনি।
ওড্রো দেবীর সাথে সুমার সে রূপ প্রাঞ্চ অভিঘাতে। খেরোয়াল ভাষার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নামতে মুখোমুখি, মুলাকাত হল
আর সেই খ্যান নিরুপাখ্য মধুর ধারা
করমডাল থেকে টিপিটিপি ঝরে পড়ছে ফুল…
সেই দৃশ্য, পাগল জারহি, ছুটে বেরোচ্ছে
জলের ছাওয়াল খুশবু-হরিণ…

এসব মর্ম একা যখন একলা রিমিল,
ডাগর দুটি চোখ দিয়ে নির্মলা জল, দরিয়া নাজুক,
দেশ পেরিয়ে খজকামান আর হারাতা পাহাড়,
আরও দূরে জারপি-চায়চাম্পা ফেলে বয়ে যাচ্ছে
নদী, আরও দূর কোনো দেশে…


চিলেছাদে ভাতঘুমের অবসর,
আর দিদিবুড়ি গেছে বেনাকুচির বনে
ঘরপিছে আড়বাঁশি, রোদেভরা দিন
বাজিয়ে বাজিয়ে একঠার, দুলছে রিমিল
দেখে লেবাস শুকানোর ছলে পিয়ং এসেছে,
আর ‘সুই উড়… সুই উড়…’ বলে খিলে উঠল
বিমুগ্ধা রাধিকা…

আমের বোলের রীত মগ্না আকাশ হতে
দিব্য সাদম মস্ত এক, নেমে এল
প্রাচীন হৃদয়বারি পান করতে
আর যাবার খ্যানে ফেলে গেল মুখের ফেনাটি

সরিয়ে নাকাব, মধুর হাওয়ার স্রোত
নিরাময় স্রোত আর হাওয়ায়
ভেসে বেড়াচ্ছে রিমিল-পিয়ং, ফেনাটি মান্দাস
দুটি আদিঅন্তহীন পাখি
তেলেশমাতি ভেসে যাও পাখি, লিটার উঠান থেকে
ওই দূরে
মানুষ জন্মেছিল জেনে যেদিকে উদয় হচ্ছে
নরম সঘন দাড়ি মিহির দেবতা…


সারা রাতের নাচের ক্লান্তি পুষিয়ে নিচ্ছে ঘুম। আলগা জুড়াটি থেকে ফিরাক নিয়ে পড়ে আছে
বিছানায় গুলাব, চাম্পা আর সাদা তোয়া-বাহা।
পুন্নিমার রাতটুকু ওরা হাত ছুঁয়ে বসেছিল,
তারপর বিরহী জীবন এল, রেখে গেল দুইফোঁটা
সিপির উপরে অশ্রুজল…
মনে হল এই সেই জল যা কেবল ছিল সর্বপ্রথমে,
আপন হৃদয় চিরে বের করে এনেছিল
জনক-জননী, সেই হাঁস ও হাঁসিল…

পাশের মোড়াটিতে বসে রিমিল
নাবোঝা চোখ দেখছে গয়েবী, ঘুমন্ত পিয়ং
কেমন ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে শিরম-গাছের দিব্য শিকড়,
তার মোড়াটি এক বিশাল শিরমপাতা
নিচে অপরূপ অগাধ অথৈ জলরাশি…


বাস থেকে নামতেই টেনে ধরল হাত
অপেক্ষায় চুর দুই চোখ দেখল মর্ম
আর মর্মের ভেতরে মায়াবী পিয়ং

শ্বেতপদ্দের পারা দুবরাজি বাজু
কাঁকালের ঝালর চটুলা মদির,
গায়… হাসে…
কানের লতির খানে করঞ্জার ফুল
ষোড়শী বাতাসে বাসে বিস্ময় সুবাস

এই অপলক দেখাটুকু দেখতে দেখতে
আসমানে আবের চাকা মেঘ নিচে জানুমধুন
ছেয়ে গেল আদিগন্ত মাঠ-ঘাট-পথ
পাশে ঘোঙার মতন টাঁড়, লসুৎ বুরুই
ওরা চেপে দেখল –
কে একজন মাথায় গামছা বেঁধে, প্রত্যুষ বদনে
বুনে চলেছে সাগাঘাস, সার্জম, মহুল, পিয়াল, বান্দলতা, কাশি আর আবহমান সময়ের বীজ
বুনে চলেছে আশ্চর্য জাহানে…


ভোরবেলা ঘুম ভাঙার আগেই এল সাবিলা পিয়ং

ঘরের মাঝারে সেই আদিম লোবানের ঘাণ
সেই শিল্পীত উন্মাদ সুবাস, প্রথম আশনাই
আর আলমের আনাচেকানাচে জাগা সুষমা আলপনা
যেন পায়ের নেউর হতে ছড়িয়ে পড়া মোতি
সামের শোলোক

এই স্বপনটুকুন দেখে
চোখ খুলতেই দেখল রিমিল ঝুঁকে আসা মুখ,
সটান গেল সরে –
এতদূরে, যে আর ছোঁয়া গেল না এ জনমে
এ জাহানে একবারও

তিরিল ডালের থেকে ঝরে গেল চাঁদ
নিচে আতশগুঁড়োর পারা ছড়ানো লিয়র
যতনে বেছে রাখা হলুদ
অমলতাস, হরিদ্রা, চাম্পার থেকে,
সব কালো হয়ে মিশে গেল রাতে –
যে রাত প্রথম জাগা আম পাতার পারা
যে রাত শুকিয়ে যাওয়া আম পাতার পারা…

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

সুমন সাধু

গুপ্ত পাখিবিদ্যা আর বেড়াল যাবতীয়

জীবনের যত গুপ্ত পাখিবিদ্যা আর বেড়াল যাবতীয়
ঠিকানা মজবুত সর্বস্ব পথে ক্লান্তির কুহক
যেন পাতার আড়ালে মুচকি হাসা আকন্দ ফুল
ঝরে পড়ে স্বজনহারানো এ বরষা মরশুমে
আর যত আকুল দীর্ঘশ্বাসের কাছে এসে বসে পড়ছে
না ফোটা ডিম্বপ্রণালী
এই রূপে হতশ্রী হই
যত পাপতাপ বিদ্ধ হোক কামিনী নাভিকুণ্ডে
জ্বালাটি জুড়োবার নয়, তবু রোজ আপনার
সঙ্গে কথা ফুরোয় না
কথার পিঠের ধুলো ঝেড়ে এ বরষায়
আপনি ঘুমাতে পারেন না
শরীরের সমস্ত জলে সুউচ্চ মেঘ জমে
বাষ্পলোকে যেন প্রসূতির কুয়াশাকঙ্কাল

একা এক ব্রহ্মাণ্ড

হাজার হাজার সূর্যের পাশে প্রকাণ্ড সব আলো
ভিড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছায়া
কী হিমশীতল সেইসব শরীর, কী নিদারুণ লোভ
একা হয়ে আসা ঘর ক্রমশ বৃহৎ হয়
স্বভাবের জলতেষ্টা পায় হঠাৎ

এই বোকা ব্রহ্মাণ্ডের মাঝে চিৎ হয়ে শুয়ে আছি
চারপাশে উড়ন্ত সব ছাড়পোকা

ঘরের কথা

একটা বেডরুম
শতবর্ষ পুরনো খাটে লাল চাদর পেতে রাখা হয়েছে
দুটো চেয়ার ঘরের দৈর্ঘ্য প্রস্থকে দুইভাগ করেছে
হাওয়ায় উড়ছে সদ্য ভেজা তোয়ালে
ঘরের তিনদিকে পেরেক বিদ্ধ ফটোফ্রেম
মেঝেতে লুটানো তোমার টুপি, চায়ের কাপ
একটা ঘরে যা যা থাকার সব আছে
এমনকি তোমার ছায়া
শুধু এই ঘরে অত্যাচারিত হওয়ার প্রতিটি দাগ
আমার শরীর থেকে উধাও
তারপর থেকে আমি অলৌকিকে বিশ্বাস করি

অনন্ত

জুন মাসের দেওয়াল বেয়ে নামছে নীল ফুলের ক্যালেন্ডার
সিনেমার আবহে তখন গর্ভবতী বেড়ালের কান্না
এমন বরষার দুপুরে অনন্ত গতিতে ধেয়ে আসছে
শুদ্ধচারী মন্ত্রগুচ্ছ
তোমায় সেলাম ঠুকি
আর ওস্তাদের শেষ রাতে হুবহু পড়ে ফেলি ময়মনসিংহ-গীতিকা
তোমাকে তোমার নামে ডাকার মিথ শেষ হয়
আমার নধর শরীরের সেবা লাগে না আর
শুধু চোখের নীলমণি দিয়ে ঢেউ খেলে যায়
এ রোগের মেয়াদ বারোমাস
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলেই মেপে নিই নাগরের শিশ্ন
শরীরের যুদ্ধ থামে

স্বাধীনতা

সমূহ সন্ধের মাঝে ভাবি আমাদের চিল-চিৎকার
রঙের হলদে থেকে গলে পড়ে ভিতরের কমলা
চারপাশে ভিড় করে মহীরুহরা
আমাদের কদমছাঁট চুলে আজ দৃশ্যমান কাঁচি
মরমে পরিপাটি ছোঁয়া
যেন কাঁটার আড়ালে আমাদের মা

কাল দেশ স্বাধীন হবে
মায়ের মধ্য গগনে ঘুরবে রেডিওর চাকা
তরঙ্গ পাড়ে ধাক্কা খাবে, ফিরে আসবে
একা এ দেশের প্রান্তরে এলোচুল, বিনুনি, সোমত্ত সিঁথি
চিল চিৎকারে ফেটে যাবে দেশপ্রেমের গান

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

দেবজ্যোতি রায়

বাড়ি

দীর্ঘ ভ্রমণের পর রক্ত গড়াচ্ছে পা ফেটে
শরীরে বাতাস ঢুকে উড়ে গেল চৌহদ্দি, ঠিকানা।

এ পাড়ায় সব নেমপ্লেটই ঝাপসা
বাড়ির দরোজাগুলো একই ছুতোরের তৈরি!
সূর্যাস্ত রঙের বাড়ি শনাক্ত হলো না

বিস্মরণের ভেতর গৃহচেতনার আভাস পেয়েছি
খুঁজেছি যুবকবেলা, হারানো চোখের মৌতাতে
বাড়ির গঠন নিয়ে অলীক ধারণা।
সংসার ক্রমশ অশরীরী হয়ে উঠছে

রান্না হচ্ছে ফুলের পাপড়ি,
থালায় থালায় নীহারিকা আলো।
চলো, কুয়োর ভেতর খোঁজ করি
গৃহচ্যুত জীবনের ছেঁড়া অ্যালবাম

চালকবিহীন সাইকেল ছুটেছে দিগন্তপথে
তাকে জিজ্ঞাসা করি বাড়ির ঠিকানা!

চুল দাড়ি পাকছে, চোয়াল শিথিল হচ্ছে
সন্দেহ আরও তীব্র
একসময় নিজেই ঢুকে পড়ি সন্দেহ তালিকায়।
একখণ্ড আমি অন্য খন্ডকে সন্দেহ করে
এক টুকরো সাদা মেঘ সন্দেহ করে কালো টুকরোকে।

বাড়ির আপেক্ষিকতায় ভাসছে বাড়ি
ঘুঙুরের এক লহমা ধ্বনির মতো কম্পিত বর্তমান,
অতীত, সমুদ্রের জোয়ারভাটা
ভবিষ্যৎ, অন্তহীন চিৎসাঁতার।

মরণোত্তর

বুনোফল ফুটো ক’রে ঢুকেছে পোকা ও শূন্যতা

ফলের শরীর নিঃশেষ করতে চায় পোকা
শূন্যতা নিশ্বাস ফেলে
সারসের ঠোঁটে ভেসে আসে তিলক কামোদ

তুমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, প্রেমে, রূপান্তরে।
প্রতিশ্রুতি ঘুরতে থাকে অ্যান্টিক্লকওয়াইজ
দূরে অরুন্ধতী আরও ম্লান

হারানো পথের রেখা রাত্রির আকাশে
আরেকটু উদাস হোক মন

টের পাওয়া যায় প্রতিশ্রুতির মধ্যে
বসে আছে পুরোনো ঘাতক
আত্মপক্ষ, মাংস, শোণিত ও ত্বক।

আশমানে ভাসছে বাকি কথাগুলো
কবে তোমাকে শোনাতে পারব?
আমার সব অবয়ব ভেঙে পড়ছে
দুই কানে শববাহকের পদধ্বনি

পান ও সুপুরি মুখে নিয়ে কথাগুলি
জেগে উঠতে চায় মরণোত্তর!

তুমিই পারদ, অধরাও তুমি

স্টেশন, বাজার, জনপদ ঘুরে দিনশেষে
বোবা ভিক্ষাপাত্র ঘুমিয়ে পড়েছে।
অর্থনীতির প্রশ্নে বাটিটি সূচকমাত্র
চারপাশে বাজারের জলস্রোত, কলকোলাহল
উড়ালপুলের শীর্ষে, মন্দির চাতালে বাটি
বৃদ্ধ, পঙ্গু, জরাগ্রস্ত ভিখিরির হাতে হাতে ওড়ে।

চাল ও কাঁকর ছাড়া আর কোনো সঞ্চয়মাহাত্ম্য নেই
কয়েনের তালে তালে গাছে ফুল, ডালে পাখি
জলে মাছ, খেতে শস্যের হাওয়া।

বাটপাড় উৎসাহ হারায় চোরের ওপর
নিঃস্বতায় কোনো ফাঁকি নেই
এখন সমস্ত গান অরাজনৈতিক।

সৎকার সমিতির গাড়ি চড়ে আমরা বেড়াতে যাব
পকেটে রয়েছে মৃত্যুর সার্টিফিকেট।

স্বপ্নের ফাতনা কাঁপে। স্থির চোখ, আশ্রম আঙিনা।
অন্ধ দোহার মনে মনে দেখে—
জ্যোৎস্নায় স্নান করে বোবা হরিমতি

যুগলমূর্তির পরা ও অপরা
বাজারদরের মতো ওঠানামা করে
এক পাশে হরিমতি, জ্যোৎস্না, চরণমঞ্জীর
অন্যদিকে রাশি রাশি শূন্য থালা বাটি।

ফ্রেম

ফিরে এলাম স্টেশন থেকে বাড়ি
রেল-টিকিট উড়িয়ে দিয়ে হাওয়ায়
কোথায় যেন যাওয়ার কথা ছিল?
দরজা জুড়ে ঘুণের স্মৃতি আঁকা

ক্রুশকাঠের মরচে পড়া পেরেক
শরীরে গেঁথে দাঁড়িয়ে আছো, একা
চাবির গায়ে রক্তছাপগুলি….
কিছু শকুন পাক খাচ্ছে দূরে।

আমাকে ডাকে বেদনাহত শেকড়,
ছয়টি নদী, পদ্মফুলে ভ্রমর,
মনে পড়ছে? মহানিমের ছায়া
শিশিরভেজা ঘাসের আপ্যায়ন।

আকারহীন বাড়ির কার্নিশে
বালি, পাথর, ইটের শূন্যতা।
তোমার গানের দৈব স্বরলিপি
ভেসে যাচ্ছি, রোগা পাতার মতো

শালিক হাঁটে উঠোন জুড়ে পা
পেরিয়ে যায় ত্রিমাত্রিক ফ্রেম
ফিরে এলাম, বোবা দেয়াল বাড়ির
বিন্দু বিন্দু পিপাসা জমে আছে।

কীটাণুকীট

কুণ্ডলী পাকিয়ে আছ স্বপ্নে, আধখাওয়া ফলে :
সনাতন কীট ঢুকছি গরুর কানে, মৃতের শরীরে

দূর থেকে লক্ষ রাখে রাত্রিবর্ণ কাক—
কাকের ঐতিহ্য আমি কপালে ঠেকাই
আমার তিনকুল কাকের জঠরে বসে
অন্নজল গ্রহণ করেছে।

বায়ুভূত পরিচয় নিয়ে বন্ধুরাও আসে

যা চেয়েছি সবই কুণ্ডলিত,
সাপ ও কেঁচোর মধ্যে শরীর বদল হয়
বদলায় আধার, আধেয়।
সময়ের হতবাক প্রান্তে বসে ঝিমোয় গরুর গাড়ি,
কালিমাখা লন্ঠনের আলো।

বুঝতে পারিনা, তক্ষকের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল
নাকি, তোমাকে জড়িয়ে ধরছি রাক্ষসের হাতে!
তুমি সেই নিরাকার, অপরিবর্তিত
আকাশের রঙে ভাসমান

আমার বিভ্রম, রক্তের স্বাদ খোঁজে শেয়ালের জিভে,
দাবার চৌষট্টি খোপে বোড়ের ভূমিকা
থেকে সরে এসে
ষাঁড়ের অন্ডকোষে কান পেতে শোনে
আদি স্তব, ব্রহ্মকমলের।

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

ধুলোবালি

এক
মাঝে মাঝে মনে হয় শ্বাস নেওয়ার মতো ভারি পৃথিবীতে কিছু নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় অপেক্ষা শব্দের গায়ে যদি একটা চারা গাছ পুঁতে দিতে পারতাম। মাঝে মাঝে মনে হয় একবার চলে গেলে আর কারো সঙ্গেই দেখা হবে না? এ সমস্ত দিনে এও মনে হয় বড়ো বেশি ক্ষমাপ্রবণতা লঘু করে দেয়।

আজকাল প্রায়ই মনে হয়
কারণ ছাড়াও পৃথিবীতে কত কিছুই তো ঘটে…

দুই
সবুজ ল্যান্ডস্কেপ, মসে ঢাকা লোমশ গাছেরা, এসব পেরিয়ে অনেকটা দূর চলে গেলে পথ আর পা পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করে ঠিকানা। কেউই কিছু বলতে পারে না কাউকে।
একটা খরগোশ আর একটা শেয়াল পরস্পর বিপরীত দিকে দৌড়ে যাচ্ছে দেখি।
কার পায়ের চিহ্ন ধরে যাবে তুমি, তুমি ঠিক করো।
সোজা হাঁটতে গেলে মস্ত সরীসৃপ রাস্তা জুড়ে শুয়ে
কে কার বন্ধু এরা, শত্রু বা কার? জঙ্গল জঙ্গল বিস্তৃত সবুজ সমস্তটা গিলে ফেলে। আমাকেও।

কখন উগড়ে তুলে ফেলে দেয়, অপেক্ষায় থাকি।

তিন
ছোট ছোট গঞ্জের হাট ধুলো ও কাদামাটি মেখে ঘর ছাড়ার স্পৃহা কিরকম মায়া করে তোলে সব।
হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় না।
তবু হাত প্রসারিত থাকে।
তবু দৃশ্যগুলো সরে সরে যায়।
অপ্রাকৃত শব্দের কাছাকাছি এত আলো জমে থাকে, খুব অলক্ষ্যে

ঘরে ফেরার পথ রূপকথা হয়ে যায়!

চার
ছবি আঁকতে বসেছ
রেখায় রঙে আলো আঁকতে গিয়ে ফুটিয়ে তুলেছো অন্ধকার—
যাকে ঘিরে ঘিরে
ওই কিছু না থাকাটুকুই আলো।
তাকে জায়গা দিয়েছ খেলাধুলো মেখে নিতে
কিছু নেই বোঝাতেও তো কিছু আছে বলতেই হল!
হাওয়াকে আঁকতে গিয়ে ঝরাপাতা কেঁপে ওঠা জল
উড়ো চুল যেভাবে এঁকেছ

আর হাওয়া তার পাশ দিয়ে চোখ মটকিয়ে দূরে সরে গেছে!

পাঁচ
অপরাজিতার নীলে হলুদ প্রজাপতি উড়ে উড়ে ঘোরে।পুরনো নদীর মতো তাপ তাদের ডানায়। হঠাৎ মনে হয় হুল নেই কান্না নেই ভাষা নেই। তবে কী ভাবে ফুলের কাছে রেখে যায় হয়ে ওঠবার ব্যথা? কুৎসিত কীট থেকে এমন ডানার আলো কতটা যন্ত্রণা সাঁতরে এসে এনেছিল সে, ফুল জানে, গাছ জানে, পাতাগুলো জানে?
যে খোলস ফাটিয়ে সে উড়ে এলো সেখানে সুতোয় কিছু বাঁধা রয়ে গেল— ছেঁড়া সুতো, জানো তুমি, তুমি জানো?

সমস্তই জানতে হবে, একথা কে কবে জেনেছে!

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

অনুপম মুখোপাধ্যায়

কমেডি অপেরা

এক কমেডি থেকে আরেক কমেডি অবধি আমাদের
চাওয়া পাওয়া

যেমন অদ্ভুত শৃঙ্খলায় বাঁধা থাকে গরম হাওয়া
আর বৃক্ষের আপনজন শুকনো পাতাগুলো

আমরা পাহাড়ে গিয়ে দেখছি
সেখানে মনের মতো শীত নেই

আমরা সমুদ্রে গিয়ে দেখছি
যথেষ্ট জল পাওয়া যায় না

তোমার গলায় সেদিন শুনতে পেলাম
অবিকল আমারই আওয়াজ

আমাদের মধ্যকার বাতাসকে ভেঙে
ডিগবাজি খাচ্ছে কিছু গম্ভীর ক্লাউন

ভ্রমণ

জলের কিনারায় স্বচ্ছ হয়ে আছে বরফ
তাহলে আমরা সম্পর্কের কঠিনতার কথা বলি

যে কবিতায় চোখের জল থাকে
সেই কবিতাই স্পষ্ট পড়া যায়

বেড়াতে যাওয়ার চেয়েও বেড়াতে যাওয়া নিয়ে
কথা বলতে বেশি ভাল লাগে

অশ্রুপারের কুয়াশা নিয়ে যা বলবে
কবিতার মতোই শোনাবে

ভৌতিক

ভূত কখনো পরিষ্কার ঘর পছন্দ করে না
ভূত চায় বিছানায় তোমার পা ঠান্ডাই থাক

বাতাস যতটা নিঃসঙ্গ হয় জীবন তার চেয়ে
অনেক বেশি ফাঁকা হতে পারে

রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ফেরার পথে
তুমি একটা টিভি কিনে আনলে

ধপধপে সাদা একটা ঘরে উলঙ্গ এক মহিলা
চামচে ঢেলে কাফ সিরাপ খাচ্ছেন

টকটকে লাল কাফ সিরাপ

যেমন মৃত্যু নিয়ে ভাবতে ভাবতে কোনো লেখক
জীবন নিয়ে উপন্যাস লেখেন

জলের জাহাজ

ঘুমের মধ্যে বৃষ্টি হল তুমি জানতে পারলে না
একটা বিকেল তুমি এভাবেই কাটিয়ে দিলে

অথচ জলের জাহাজ তোমার ঘুমের মধ্যে ঢুকেছিল

স্বচ্ছ জাহাজভর্তি লবণাক্ত জল
চোখ আর মেঘের মধ্যে আকার নিচ্ছিল

রক্তে মিশে আছে নৌচালনা বিষয়ক সতর্কতা
রক্তে মিশে আছে জাহাজডুবির রাসায়নিক ধারণা

সমুদ্রকে এভাবে মোটেই হারানো যায় না

তোমার প্রিয় পুরুষকে তুমি কাগজের মতো
ভাঁজ করে রেখেছ

তার লাল টালির বাড়ি থেমে যাওয়া বৃষ্টিতে
কমলালেবুর খোসার মতো তেতো হয়ে আছে

মেঘের নীচের পৃথিবী

পথকে শক্ত করে ধরে রাখো যেন হারিয়ে না যায়
পাখিরাও ওড়ে কারণ তারা আকাশ ছাড়া বাঁচতে চায়

কালো মেঘের তলায় জলজমা ক্ষেতগুলো চকচক করছে

জল দিয়ে ঘেরা পৃথিবীতেই তোমাকে একটা
জীবন কাটাতে হবে

জল ভেঙে উঠে আসছে জন্মের আগের শূন্যতা
জল ভেঙে কেটে যাচ্ছে জন্মের পরের ফাঁকা স্বভাব

দিগন্ত থেকে হুহু করে ছুটে আসছে দমকা জোলো হাওয়া
তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে আরো বাঁচার জন্য

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

বাপি গাইন

গুচ্ছকবিতা


কিছু একটা হয়েছে এই পশ্চিম আকাশের
দেখো – তোমার মাথার ছায়া ছিটকে পড়ছে বালির ভেতর
এই কাঁধ তবে বিশ্রামের উপযোগী না।
এই ভিজে ওঠা আকাশও তবে আর নক্ষত্রের না।

দূরে পাথরের শহরে জ্বলে উঠছে নর্তকীর পা
হিসেবের খাতার ভেতর হাঁটতে গিয়ে শব্দ হচ্ছে খুব
এই শব্দ আমি চাইনি, যদিও
জীবনের দিকে হেঁটে যেতে
এতো অন্ধ মানুষ আমি চাইনি কখনও।


যেমন বীজের ভেতর ধ্যানস্হ থাকে গাছ
তোমার ভেতর তেমনই প্রোথিত আছি আমি।

যতক্ষণ না তোমার খিদে আমাকে ছিঁড়ে ফেলছে
যতক্ষণ না আমি তোমার প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছি।


একার ভেতর কী এক পাগল কথা বলছে
এই মৃতদেহ বিষণ্ন সেতু ভেবে তুমি ভেঙে ফেলতে পারো।

খুব সকালে একটা প্রজাপতি তোমার ক্ষত চাটতে আসে
আজ ওকে না করে দাও। আজ ওকে শিক্ষা নিতে বলো।

ফেলে দেওয়া মাংসের আলোয় সাদা হয়ে উঠছে এলোপাথারি কুকুর
আর কুকুরের গানে ফিরে আসছে আবার হত্যার প্রকরণগুলি।


যে খিদে মাংসের ঘুম ভাঙাতে পারে না তা কোনো খিদেই না।
যে জাগরণ কেবলমাত্র ঘুমের দিকে ঝুঁকে – তাকে প্রশ্ন করা উচিত।
প্রলাপ কি তবে বিপদসীমার উপর এক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুধু?
সম্ভাবনা নয় কোনো গুপ্ত জন্মের?

অথচ খাদ্যের সংস্পর্শে এসে সব প্রানী আঘাতের তাৎপর্য ভুলে যায়
সব আঘাত খাদ্যকেই আবার গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
এভাবেই সমাজ রচিত হয়, বোঝাপড়া রচিত হয়ে থাকে।


ফুলের ঘ্রাণ দিয়ে ফুলকে শনাক্ত করা যায়।
অথচ হাওয়া ব্যতীত ঘ্রাণের কোনো অস্তিত্বই থাকে না।
ফলে ফুল আর ততোধিক ফুলও থাকে না।
এরকম পরিস্থিতিতে তোমাকে অনুভব করি
শ্বাসে ও বিশ্বাসে হাওয়াকেও সমর্থন করি তাই।
হাওয়ার ভূমিকা পালন করি
সর্বহারার ভূমিকা পালন করে যাই।

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

প্রীতম বসাক

মাটির কবিতা


সুস্থির হও
একটা কৃষি জীবন— ফসলের রূপ
আলো

মাটির প্রতি
আজন্ম বিশ্বাস রাখো
প্রযত্নে তার নাম লিখ মায়া


অদূরে ছড়িয়ে আছে নিমফল

অই মাটিতেই চাঁদ নামে

মাই জুড়িয়া তখন
অঢেল বৈষ্ণব

লিখিত হয় পদ
লিখিত হয় পঞ্চব্যঞ্জন


কালো-মাটি রঙের দুঃখ

কাপাস গাছের থেকে
ঝুলে আছে
অতি সুস্বাদু বেদনা

কৃষাণী আসিয়া দাঁড়ালো
উহার চোখে তুমি
মধু ও মেঘ লিখে দিও


মাটি আর অগ্নি
এ-ও সেই আদিম পালাগান
পয়ারে রচিত

যত গাই—
দুঃখের নিকট আমাদের
ঋণ বেড়ে যায়


ধান হল—
এর চেয়ে সত্য
তুমি ছুঁয়েছ কখনো?

এই যে হাঁ হয়ে আছ
ক্ষুধায় আর জলে

আগে স্তব করো
মাটি হও…

Categories
2023-Sharodiyo-Kobita

কৌশিক জোয়ারদার

পশুখামার-১

শকুন


মনের অর্ধেকটা নিয়েছে শেয়াল অর্ধেকটা শকুন
এখন আর সে মেয়ে নয়, মানুষও নয় আর
আপাদমস্তক মাংস পড়ে আছে প্লেটে
কাদের কুলের শেয়াল তুমি
লিঙ্গে শান দিচ্ছো কখন থেকে
ওদিকে অন্য দেশে অন্য শকুন বুঝি জিতে গেল
স্কোরবোর্ডে লেখা হলো তিন-দুই


বেশকিছু মানুষকে আপনি
শকুন হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবেন
মানুষেরা অনেকেই শেয়াল।
আসলে শকুন একটা ধারণামাত্র
যেমন এক নয় সব শেয়ালের রা
ফলে, শকুনের দলে হঠাৎ একজন
মানুষের দেখা পেয়ে গেলে
অবাক হবার কিছুই নেই

মুরগি

সকালবেলা দুটো ডিমসেদ্ধ খেয়েছি
মুরগির সম্ভাবনাও কী সুস্বাদু — আমি ভাবছিলাম
‘মুরগি’ শব্দটির দ্বারা আমরা মোরগকেও বুঝিয়ে থাকি
মোরগ ভোরবেলায় ডাকে
বাড়ির মালিক অথবা দিনকর, কে যে আগে
ঘুম থেকে ওঠে — আমি জানি না
পাশের বাড়ির ভাড়াটে অবশ্য জানে—
দিনের মধ্যে যখন তখন ডেকে উঠতে পারে মোরগ
দুপুরে ঘুমের ব্যাঘাত হলে
মোরগকে মুরগি করে ফেলতে ইচ্ছে করে—
মানে খেয়ে ফেলতে
মোরগের মাংসও আমরা খাই
কিন্তু মানুষ খেয়ে ফেললে আমরা বলি:
অমুককে মুরগি করা গেছে

গাধা

সব মাস্টারমশাইকেই আমার ধোপা মনে হতো
তারপর একদিন গাধাকে দেখেই বুঝেছি—
এ কিছুতেই ঘোড়া নয় জেব্রা নয় জিরাফ নয়
ইনিই হলেন সকাল বিকেল উচ্চারিত সেই পশু।
গাধাও জানে গাধাকে দেখাও অসহ্য ভার
তাই তারা পরস্পরের দিকে সরাসরি তাকায় না
তথাপি যতক্ষণ না আপনি বাড়ি ফিরে
আরেকজনের কানে চিৎকার ক’রে সঞ্চারিত করছেন—
“গাধা”, আপনার মুক্তি নেই
পৃথিবীর সকল মানুষ তাই দেখার আগেই
শুনে ফেলে — গাধা
গাধার জন্ম হয় তারপর ধোপার বাড়িতে

জেব্রা

পৃথিবীতে জেব্রার কোনো প্রভাব নেই
চিড়িয়াখানায় যে-দুয়েকবার তাকে দেখেছি—
দেহটি সুঠাম, স্মার্ট
সাদা-কালোয় চমৎকার রঙিন দেখতে সে
অথচ ঘোড়ার মতো রূপকথার গল্প হয়ে উঠতে পারেনি।
গাধা বলেও তাকে হেয় করে না অবশ্য কেউ
আজীবন ত্বকের গরাদের ভেতর বন্দী
অভুত এক ছায়াহীন নিরপেক্ষ প্রাণী।
তবে আমার কথা যদি বলো,
ব্যস্ত রাস্তার ওপারে তোমাকে দেখতে পেলে
সত্যি্ বলছি আমার ইচ্ছে করে
জেব্রা হয়ে শুয়ে পড়ি পথের উপর

গোরু

গোরু থাকে গোয়ালে
এখন তাকে যদি আপনি বনের রাজা হতে বলেন,
তাহলে সে কী করবে?
ল্যাজ তুলে কিছুটা গোবর ধপাস করে মাটিতে।
গোবর থেকে ঘুঁটে হয়, ঘুঁটে থেকে জ্বালানি
গোরু দুধ দেয় গাড়ি টানে জমি চষে
সব ঠিক আছে, কিন্তু হলে কী হবে
গোরু তো আর বনের বাঘ নয় যে রাজা হবে
এক সকালের জলখাবারেই সে সাবার
কিন্তু এটাও ঠিক যে, বাঘের গায়ে এতটাই জোর
সেও হতে পারেনি ততটা বিতর্কিত