হাহাকার
একটা গোটা জীবন
স্লাইস্ড পাউরুটির মতোই একসঙ্গে থেকে গেল
কোনো শব্দ হল না
তারপর একদিন ছন্নছাড়ার মতো
টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সে
আসলে
তুমি হঠাৎ রাক্ষসী হয়ে উঠেছিলে
আর আমি
রাক্ষস
আমরা রাক্ষস-রাক্ষসী পরস্পরকে গিলে নিয়ে
উগড়ে দিয়ে
হাহাকার করি
যে-ট্রেনগুলো নেই
দূরপাল্লার ট্রেনগুলো সব
আমার চোখের সামনে দিয়ে পেরিয়ে গেল
স্পষ্ট দেখতে পেলাম
তাদের ঝমঝম শব্দ
কিন্তু ট্রেনগুলো একটাও নেই
ট্রেনগুলো আছেও,
তাদের দেহ, যাত্রীসাধারণ, ড্রাইভার, গার্ড, হকার
সব আমার চোখ নির্মাণ করে নিল
সমুদ্রের তলা থেকে মাটি ধরাতে ধরাতে দূর থেকে
দেখতে পেলাম
গোটা ঘটনাপুঞ্জ
ট্রেনগুলো নেই
অথবা আছে
মাপ
আমার আকাঙ্ক্ষার একটা মাপ আছে
আমি তার মধ্যেই থাকি
আমি তার ছাদে উঠি
তার সিঁড়ি দিয়ে নেমে
উঠোনে পায়চারি করি
তার মধ্যেই আমার
প্রেম, লুকোচুরি, আনন্দ, বিষাদ
তার মধ্যেই
আমি মৃত্যুপিয়াসি
তার বাইরে যেতে চাইও না কোথাও
হিমালয়ের চূড়ায় ওঠা
হাত-পা ভাঙা কতজনকেই তো দেখলাম
আজও
আটাচাকির গমেরা
আজও অপেক্ষা করছে
তাদের বিষয়ে
ভবিষৎ পর্যালোচনার মিটিং চলেছিল
কয়েক শতাব্দী
আরও কয়েক শতাব্দী
চা-বিস্কুট
আজও আটাচাকির হলারে গম ঢালা হয়
আজও সাদা আটা দেখে
রাক্ষসেরা হেসে ওঠে
আজও গম
রোদে শুকিয়ে
ঝাড়াই-বাছাই করা হয়
এই সবকিছুর ভেতরে
গোলাবারুদ অপেক্ষা করে আছে
এই টাইম বোমাটিকেই
আজও আমরা দেখতে পাইনি
হত্যা
কী আর বলি
প্রশ্ন অনেক
এই যে পিছমোড়া করে
গাছের সঙ্গে বাঁধলেন
চড়-থাপ্পড় মারলেন
তারপর আরও
লম্বা চওড়া গোল
কতরকম অপমান
হয়তো খালি চোখে দেখা যায় না
কিন্তু একে আপনারা হত্যা বলবেন না?
মুনিষ বিদেয়
কুমোরপাড়ায় মূর্তি গড়া হচ্ছে
মূর্তিগুলো ধাপে ধাপে
মানবমানবী এবং প্রাণী হয়ে যাচ্ছে
উদ্যোক্তা এবং দর্শকমণ্ডলীর হাততালিতে
ফেটে পড়ছে পুজোমণ্ডপ
কেউ ভুলেও জিজ্ঞেস করে না
মূর্তির ভেতরে যারা রক্তমাংস ভরে দেয়
তারা শ্রমিক না শিল্পী
মণ্ডপের পেছনে কিছুটা দূরে
কেউ অন্ধকার চাদর জড়িয়ে নেয় গায়ে
উৎসব শেষে আলো নিভে গেলে
মুনিষ বিদেয় হবে
পেশিশক্তি
হাত থেকে
কলম পড়ে যেতে দেখেছি
প্রায়শই
পড়ে যেতে দেখেছি
থালাবাসন, চায়ের কাপ
অথবা তরকারির বাটি
সব থাক জমা দিয়ে রেখে ভেবেছি
এ-সব নেহাতই দুর্ঘটনা
ভবিষ্যৎকালের কথা
স্বপ্নেও ভেবে দেখিনি কখনো
পঁয়ষট্টিতে এসে
একজন বুঝতে পারলেন
শিথিল মাস্ল পাওয়ারের
আসল রহস্য কী
একমাত্র ব্যতিক্রম
রাজা বৃদ্ধ হলেও
শেষপর্যন্ত তাঁর পেশিশক্তি অটুটই থাকে
এবাদত
নামাজ পড়তে গিয়ে
জান্নাতের প্রসঙ্গটুকু বাদ দিলে
আমাদের যাবতীয় চাওয়া-পাওয়া বলতে
পার্থিব সুখস্বাচ্ছন্দ্য
আমার ছেলে যেন
জয়েন্টে ভালো র্যাঙ্ক করে আমার মেয়েও যেন মাধ্যমিকে স্ট্যান্ড করতে পারে
এগুলোই চাওয়া;
দীন ও দুনিয়া
দুটোকেই কীভাবে কবজা করব
তার ছক কষতে কষতে
আমি কতটা কাফের হয়ে গেলাম
খেয়ালই নেই সেদিকে;
এবাদতের নামে
গোটা একটা সমাজকে বেঁটে করে রেখে
আমিই একমাত্র তালগাছ হয়ে উঠতে চাইছি;
ধুলোয় মিশে থাকা আল্লা স্বয়ংক্রিয় সিসি ক্যামেরায়
সব খেয়াল রাখছেন