Categories
প্রবন্ধ

রাহুল হালদারের প্রবন্ধ

ঈশ্বরচন্দ্রের শিক্ষক কালীকান্ত

বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ প্রথম ভাগে গোপাল নামে যে সুবোধ বালকের দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন বাঙালি ঘরে ঘরে সকলেই সেই সুবোধ বালকের প্রত্যাশা করেন। তার সঙ্গে তিনি তুলনা টেনেছিলেন রাখাল বালকের।

Categories
গদ্য ধারাবাহিক ফর্মায়েসি

পার্থজিৎ চন্দের ধারাবাহিক গদ্য: সোনালি, হরিণ-শস্য

দশম পর্ব 

শরতে, উপেন্দ্রকিশোর ও সুকুমার

পৃথিবীতে সব থেকে বেশি যে-কয়েকটি চিত্রকল্প আর উপমা ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে একটি অতি-অবশ্যই নির্জনে বনের মধ্যে সবার অগোচরে ফুলের ঝরে যাওয়া। একটি ফুলের ফুটে ওঠা আর ঝরে যাওয়া— বিষয়টির মধ্যেই এক বিয়োগাত্মক বিষয় ঝিম মেরে বসে থাকে।

Categories
ধারাবাহিক প্রবন্ধ ফর্মায়েসি

অনিন্দ্য রায়ের ধারাবাহিক: ফর্মায়েসি

দশম পর্ব

থান বাউক
(Than bauk)

মায়ানমারের একটি কবিতার ফর্ম ‘থান বাউক’।
এই বর্মীয় কবিতা তিন লাইনের। প্রতিটি লাইন চার সিলেবলের।

Categories
গল্প

দীপ্তেন্দু জানার গল্প

ইমলি টোটো

এই নিয়ে কম টিটকিরি তো শুনতে হয়নি! এমনকী পাড়া-প্রতিবেশীরা চরিত্র নিয়ে কথা বলতেও ছাড়েনি! আর বলবে না-ই-বা কেন? নিজের আত্মীয়-স্বজনরাই যখন বিষয়টাকে ভালো চোখে দ্যাখেনি, তখন বাইরের লোকেরা তো দু-পাঁচ কথা বলবেই।

Categories
কবিতা

মামনি সরকারের কবিতা

মায়া ফলক


প্রেমের কবিতা লিখতে বললে
মা-বাবাকে মেলাতে বসি।
কিছু কিছু রাতের বাতাস

Categories
কবিতা

কাজী ওয়ালী উল্লাহর কবিতা

জীবনভঙ্গি

আশ্চর্য জীবনভঙ্গি আমি রপ্ত করেছি
ঘুমাব না, ঘুমালে জাগবই না
কেবল রোদের পরাগায়নে ঝিমিয়ে দুপুর কাটিয়ে দিই,

Categories
চলচ্চিত্র

শুভদীপ ঘোষের প্রবন্ধ

পরজীবীর শৃঙ্খল: দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র

“Banjiha is a space with a peculiar connotation. …It’s undeniably underground, and yet you want to believe it’s above ground, there’s also the fear that if you sink any lower, you may go completely underground.”

Categories
গদ্য ধারাবাহিক সোনালি হরিণ-শস্য

পার্থজিৎ চন্দের ধারাবাহিক গদ্য: সোনালি, হরিণ-শস্য

নবম পর্ব

ব্যাবেলের লাইব্রেরি অথবা নাথিংনেস

‘অসংখ্য ষড়ভুজাকার গ্যালারি, প্রতিটির মাঝখানে নিচু-রেলিঙে ঘেরা এক একটা ঘুলঘুলি। যে কোনও ঘুলঘুলি থেকে নীচে ও উপরের ফ্লোরগুলি দেখা যায়।

Categories
কবিতা

বিক্রম ঘোষের কবিতা

ঠাকুমা ও মা


মা বলতো শেষের কয়েকটা দিন ঠাকুমা নাকি শৈশবে ফিরে যেতে চেয়েছিল,
বিকেল হলেই আয়নার সামনে বসে লাল ফিতে দিয়ে সাদা একমুঠো পটের চুলে বিনুনি বাঁধত,

Categories
প্রবন্ধ

সুমনা রহমান চৌধূরীর প্রবন্ধ

মিঞা কবিতা: স্ফুলিঙ্গ যখন মশাল

পাঁচটি মিঞা কবিতার অনুবাদ:

 লিখে নাও আমি একজন মিঞা
কবি: ড. হাফিজ আহমেদ
(মূল কবিতা ইংরেজিতে লেখা)

লিখো
লিখে নাও
আমি একজন মিঞা
এন আর সি-তে সিরিয়াল নং ২০০৫৪৩।
দুই সন্তানের বাবা আমি
সামনের গ্রীষ্মে জন্ম নেবে আরও একজন
তাকেও তুমি ঘৃণা করবে কি
যেভাবে ঘৃণা করো আমায়?

লিখো
আমি একজন মিঞা
সেই জলা জমিকে
আমি সবুজ ক্ষেত বানিয়েছি
তোমাকে খাওয়াতে,
ইটের পর ইট বয়ে এনেছি
তোমার বাড়ি বানাতে,
তোমার গাড়ি চালিয়েছি
তোমার আরামের জন্য,
খাল নালা পরিষ্কার করেছি
তোমার স্বাস্থ্যের জন্য,
তোমার খাটুনি খাটার জন্য
আমি হাজির যে-কোনো সময়ে।
তবু যদি মন না ভরে
লিখে নাও
আমি একজন মিঞা।

এই গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষ, প্রজাতন্ত্রের
অধিকারের জন্য অধিকার ছাড়া এক নাগরিক।
আমার মা-কে ডি ভোটার বানানো হল,
তার মা-বাপ যদিও ছিল ভারতীয়।
ইচ্ছে হলেই প্রাণে মেরে দিতে পারো আমায়, লাথ মেরে
তাড়িয়ে দিতে পারো আমার গ্রাম থেকে,
আমার সবুজ ক্ষেত কেড়ে নিতে পারো,
রোলার দিয়ে পিষে দিতে পারো আমাকে,
তোমার গুলি
আমার বুক ফুঁড়ে দিতে পারে,
জানি, তোমার কোনো শাস্তি হবে না।

লিখো
আমি একজন মিঞা
ব্রহ্মপুত্রে বেঁচে আছি
তোমার নির্যাতন সইতে সইতে,
আমার শরীর কালো হয়ে গেছে
চোখ আগুনে লাল।
দাঁড়াও!
রাগ ছাড়া ভাড়ারে কিছু নেই।
দূর হটো!
না হলে
ছাই হয়ে যাও।

যদি আৰ কোনো ভাষা না থাকে দুনীয়ায়
কবি: কাজী নীল
(মূল কবিতা মিঞা দোয়ানে লেখা)

যদি আর কোনো ভাষা থাকে না পৃথিবীতে
যদি হারিয়ে যায় সব অক্ষরমালা
যদি ভেসে যায় খাতা কলম, কবিতার উপমা

যদি কোনো সাংকেতিক ভাষায় আর না বলতে পারি
তোমাকে আমার এই নীরব দুঃখ

এই মরে যাওয়া মন যদি
আর খুঁজে না পায় গানের ঠিকানা
যদি না লিখতে পারি চিঠি এই আগুন জ্বলা বসন্তে

যদি বোবা হয়ে যাই, যদি আমাদের চোখ
আর না বলে কোনো কথা

যদি নদী থাকে নদীর মতন, ঢেউয়ের কোনো শব্দ নাই
যদি পাখি থাকে গাছের ডালে, ঠোঁটে কোনো বাঁশি নাই

যদি আমরা ছটফট করি সারা রাত
না বলা কথাগুলি উড়ে বেড়ায় শিমুল তুলার মতন
আর আমরা বুঝতে না পারি বুকফাটা মেঘের বিষাদ

যদি সব ভাষা হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে
যদি থেমে যায় এই কলম

ভালোবাসার কথা কি আমি বলব না, বলো?
আমি কি বলব না এই নীরব দুঃখের কথা

অন্য কোনো আদিম ভাষায়?

 সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না
কবি: কাজি নীল
(মূল কবিতা মিঞা ‘দোয়ানে’ লেখা)

যে-দেশ আমার বাবাকে বিদেশি বানায়
যে-দেশ আমার ভাইকে গুলি করে মারে
যে-দেশে আমার বোন মরে গণধর্ষণে
যে-দেশে আমার মা বুকে আগুন চেপে রাখে
সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না।

যে-দেশে লুঙ্গি পরার অধিকার নাই
যে-দেশে কান্না শুনার মানুষ নাই
যে-দেশে সত্য বললে ভূত কিলায়
যে-দেশ আমার আজীবন দাসত্ব চায়
সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না।

যে-দেশে টুপি মানেই মৌলবাদী
যে-দেশে মিঞা মানে নীচজাতি
যে-দেশে ‘চরুয়ারা’ সব বাংলাদেশি
যে-দেশ টাটা বিড়লা আম্বানীর হাতে বিক্রি হয়ে যায়
সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না।

যে-দেশে আমাদের লাশের পর লাশ কুপিয়ে কেটে
নদীতে ভাসিয়ে দেয়
যে-দেশে ৮৩তে মানুষ মেরে শালার বেটারা জল্লাদের
মতো উল্লাস নৃত্য নাচে
সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না।

যে-দেশে আমার ভিটা বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়
যে-দেশে আমার অস্তিত্বকে বাতিল করা হয়
যে-দেশ আমাকে অন্ধকারে রাখার ষড়যন্ত্র চালায়
যে-দেশ আমার থালাতে পান্তার বদলে পাথর ঢালতে চায়
সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না।

যে-দেশে আমি গলা ছিঁড়ে চিৎকার করলেও কেউ শুনে না
যে-দেশে আমার খুনের জন্য কেউ দায়ী না
যে-দেশে আমার ছেলের কফিন নিয়ে রাজনীতি চলে
যে-দেশ আমার বোনের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলায়
যে-দেশে আমি জানোয়ারের মতো বেঁচে থাকি
সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না।

ওই জেলে আমার মা থাকে
কবি: গাজি রহমান
(মূল কবিতা মিঞা ‘দোয়ানে’ লেখা)

আমার মা আমাকে খুব ভালোবাসে
এখন বাসে না
কীভাবেই-বা বাসবে
আমার মা তো বাড়িতেই নেই…
ওই জেলে আমার মা থাকে!

আমার মা নাকি বিদেশি
ওই দেশ থেকে এসেছে
আমার খালা, আমার মামা
এখানেই থাকে
আমার নানি তো নেই
নানা মারা গেছেন অনেক বছর হল
আমি দেখিনি
নানার নামে কাগজ আছে
ওরা বিদেশি না
শুধু আমার মা…
আমার মাকে কেউ ইশকুলে দেয়নি
ছোটোবেলাতেই বিয়ে দিয়েছিল
বাড়িতে খুব অভাব!

আমি জানি আমার মা কাঁদে
আমার জন্যে
আমিও কাঁদি মা-র জন্যে
আমি আগে জলদি ঘুমাতাম রাতে
এখন ঘুম আসে না
আমার মা নেই যে..!
মাথায় হাত বুলিয়ে
আমার মা গুনগুনিয়ে গান গাইত
আমি কখন ঘুমিয়ে পড়তাম
বুঝতেই পারতাম না

এপাশ ওপাশ করি
আমার মা নেই!
কীভাবেই-বা থাকবে
আমার মা যে ওই জেলে থাকে
আমি জানি আমার মা-র অনেক দুঃখ
আগেও ছিল
গরিব মানুষ আমরা
আমার বাবা মানুষের বাড়িতে কামলা খাটে
ভালো মন্দ খেতে পারি না
আমার মাকে সেই ঈদের সময়
একটা দেড়শো টাকা দামের শাড়ি দেয়
এখন তাও দিতে পারে না
কীভাবেই-বা দেবে
আমার মা যে বাড়িতেই নেই
ওই যে একটা জেল
ওই জেলে আমার মা থাকে!

জানেন
আমার শরীরে এখন ময়লার আস্তরণ পড়ে গেছে
আমার মা ঘাটের মধ্যে বসিয়ে
শরীর ঘষে ঘষে
স্নান করিয়ে দিত
আমি এখন একা একাই স্নান করি…
শরীর ঘষতে পারি না
আমি অনেক সুন্দর ছিলাম
এখন কালো হয়ে গেছি
বাবার তো সময় নেই
কামলা খাটতে লাগে
না হলে খাব কী
আবার আমার জন্যে ভাত রাঁধে
আমার বাবারও অনেক দুঃখ
মাঝে মাঝে একা একাই কাঁদে
আমারও চোখ দিয়ে জল পড়ে…!

আমার মাকে কে এনে দেবে?
মাকে ছাড়া কেমন যেন লাগে আমার
আমার মা আমাকে ইশকুলে এগিয়ে দিতে যেত
অনেক দূরে আমাদের ইশকুল
রাস্তার মাঝখানে কয়েকটা কুকুর শুয়ে থাকে
আমি আবার কুকুর দেখলে ভয় পাই
আমি এখন ইশকুলে যাই না
আমার পড়তে অনেক ভালো লাগে
কিন্তু পারি না
কীভাবেই-বা যাব
আমার মা যে বাড়িতেই নেই
ওই যে একটা জেল
ওই জেলে আমার মা থাকে!

আমার মা শুকিয়ে গেছে অনেক
এখন মা-র শরীরে মাংস নেই
শুধু কয়েকটা হাড্ডি
তাও গোনা যায়!

আমি আমার মা-র কাছে যাব
আমিও জেলেই থাকব
আমি বলব যে আমি বিদেশি
হ্যাঁ আমিও বাংলাদেশি
কে নিয়ে যাবে আমাকে
আমার মা-র কাছে?
বাবাকে অনেকবার বলেছি
নিয়ে যায় না
বাবার বুঝি কান্না আসে
আসবেই তো
আমার বাবা আমার মাকে
অনেক ভালোবাসে, আমিও বাসি
আমার মাও বাসে, আদর করে
এখন করতে পারে না
কীভাবেই-বা করবে
আমার মা তো এখানে নেই
ওই যে একটা রাক্ষস জেল
ওই জেলে আমার মা থাকে!

একটা সন্দেহজনকেৰ পোলা
কবি: কাজী নীল
(মূল কবিতা মিঞা ‘দোয়ানে’ লেখা)

একটা সন্দেহজনকের ছেলে
খুব বেশি একটা কবিতাই লিখতে পারে
না হলে খুব দুঃখ রাগে বলে দিতে পারে
এই দেশ আমার আমি এই দেশের না

একটা সন্দেহজনকের ছেলে খুব বেশি হলে
মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলি খেতে পারে
বা প্রাণের মমতায় জুতা স্যান্ডেল ফেলে দৌড় দিতে পারে
তার চাইতে অল্প বেশি হলে
একটা সন্দেহজনকের ছেলে
জঙ্গলে যেতে পারে মুক্তির অন্ধ নেশায়
একটা সন্দেহজনকের ছেলে কিছুই করতে পারে না
রাজভবনের সামনে চিৎকার দিয়ে গলা ফাটানো ছাড়া
বা রাষ্ট্রের মুখে ছুঁড়ে ফেলা ছাড়া বৈধতার নথিপত্র
একটা সন্দেহজনকের ছেলে খুব বেশি একটা
কবিতাই লিখতে পারে
তার চাইতে ভালো পারে শহীদের বাচ্চারা
দেশটাকে দুই টুকরো করে বিলিয়ে দিতে পারে
যা কোনো সন্দেহজনকের ছেলে কোনোদিনই পারে না।

প্রথম পাতা