বাংলাভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
Author: Editor Editor
তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপ্রকাশিত চিঠি
বিনয় মজুমদারের অপ্রকাশিত গাণিতিক ভাবনা
তৃষ্ণা বসাকের গল্প
বার্তা
অনন্তর নিতান্ত চিন্তাপরায়ণ ও দগ্ধহৃদয় হয়ে সে এক মহাবনে প্রবেশ করল। সে-স্থানে মনুষ্যের শব্দ নেই, কেবল রু-রু, বরাহ ও পক্ষীগণ বিচরণ করছে। ইতস্তত ভ্রমণ করতে করতে অকস্মাৎ কেতক, করবী, পিপ্পল প্রভৃতি পাদপশ্রেণিতে সুসংবৃত এক সরোবর তার সম্মুখে দৃশ্যমান হল। সে বিস্মিত হয়ে দেখল সেই সরোবর পার্শ্বে চারজন ইন্দ্রপ্রতিম পুরুষ যুগান্তকালীন লোকপালের ন্যায় নিশ্চেষ্ট হয়ে নিপাতিত হয়েছেন।
বিধান সাহার গদ্য
বাদামি বায়স্কোপ
সিমি আর চৈতি সেদিন সকাল সকালই চলে এসেছিল। ‘আঙ্কেল আঙ্কেল চলেন ঘুইরবার যাই।’ আমারও ভোর দেখার বাতিক। মেয়ে দু’টির মুখের ওপর ভোরের পবিত্র আভা পড়ে ওদের আরও স্নিগ্ধ আর কোমল দেখাচ্ছে। হালকা-পাতলা গড়নের শ্যামবর্ণের মেয়ে দুটোর চোখে অপার বিস্ময় আর কৌতূহল। কোনো এক শহুরে আঙ্কেলকে দেখার। আঙ্কেলের কাছে তাদের পারাগুলোকে জানাবার এক তীব্র ইচ্ছা ওদের আচরণে।
হাসান রোবায়েতের গদ্য
ধরমপুর
অনন্ত শূন্যতার ভেতর যেতে যেতে একদিন হঠাৎ করেই শিশুরা দেখতে পায়— পৃথিবীর ঘাসের উপর ছোটো ছোটো ফুল। মাটিতে রোদের গন্ধ। নক্ষত্রের থেকে যে-আভা হাজার হাজার ছায়াপথ পার হয়ে লেগে আছে পেয়ারা-পাতায়, কুণ্ডুলি পাকিয়ে ধাতব খেলনার গায়ে আছড়ে পড়ছে রাতে, একটা কি দুইটা দাঁতে সে তারার আলোও কামড়ে ধরে শিশুরা। সে তখন ধীরে ধীরে টের পায় মায়ের অশ্রুত ঘ্রাণ।
সুপ্রিয় মিত্রের গদ্য
অমুকের গৃহদর্শন
বৃষ্টি যে হয়েছিল একটানা, ছেদরানো কাদা লেপটানো পাতাদের শবদেহ ছাড়া কে বুঝবে। শেডের তলায় যে গুল্মটি ছিল গার্হস্থ্য স্পর্ধার টবে, একদলা মাটির ওপর একখান পাতা মূর্ছা গিয়েছে কাল রাতে; শেষ হাওয়ার ট্রিগারে খামোখা। সে পাতা পাথরকুচি, শেকড়ের সুরক্ষা তাকে বাঁচাবে— আশঙ্কা নেই, জল ঘোষণা করেছে। স্প্রিংকল মগ থেকে সহায়তা ঝরে পড়বে, বেলা হওয়ার অপেক্ষা।
প্রবঞ্চকর
আমি প্রবঞ্চক, এ কথাই বলছিলাম নিজেকে। গভীর রাতে প্রশ্ন করি, আমি কে? বলি ও! তুমি প্রবঞ্চক মাত্র। মাদাগাস্কার জঙ্গল এ কথাই তো শেখায় প্রতিদিন। একটি নীল লেমুর তন্দ্রাচ্ছন্ন কুয়াশার ভিতর আড়াআড়ি ছুটে যায় যখন, চেরি ফলের চেয়ে লাল টকটকে ক্যামিলিয়ন দু’টি বাওয়াবের নিদ্রাকাতর শাখায় ক্ষণকাল সঙ্গমরত, এই পৃথিবী সুন্দর লাগে।
জগন্নাথদেব মণ্ডলের গদ্য
নিঃসঙ্গ কথকের নিজস্ব পালা
আজকাল সকালের দিকে বাঁকানো খুরপি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিই, বেড়ালকে ভাত খাওয়াই, গাভিন হওয়ার পর ছাগলের শিংয়ে তেলসিঁদুর লাগাই।
দেওয়ানগঞ্জে প্রথম আষাঢ়ে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা দেখতে যাই, ছোটোবয়সে শ্বশুরঘরে চলে যাওয়া দিদি কাঁঠালবীজ পুড়িয়ে চালভাজা মেখে দেয় খাঁটি সর্ষে তেলে দিয়ে, কাঁচলঙ্কা দেয়, ভুট্টা পোড়ায়, আদারস দেওয়া চা করে।
শতানীক রায়ের গদ্য
আরও বেশি জীবন্ত
আমি জানি। দীর্ঘ সময় পেরোনোর পর তোমরা ঠিক আমাকে অক্ষরে অক্ষরে খুঁজে পাবে। এখন নয়। অনেকটা সময় না পেরোলে সমকালের কুয়াশা কাটে না। একে আমি দ্বন্দ্ব বলি। আবার কুহকও বলা চলে। জীবনানন্দের হাজার বছরের পথ চলা এরকমই। ভেতরে ভেতরে চলেছি কিংবা পাহাড়ের হিমশৈলর মতো সারা শীত সারা গ্রীষ্ম সারা বছর এতটাই স্তব্ধ হয়ে আছি যে, কেউ তার মর্ম বুঝতে পারছে না।