Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

রাজর্ষি দে

ওবিচুয়ারি

আমি শুধু মুছে গেছি জলে
অমেয় বালি দানা ঝরে গেছে ঘড়ি থেকে
বালি পড়ে কিচকিচ দৃষ্টি ঝাপসা হল কার
তার হদিস তত্ত্বতালাশ আপাতত থাক
অযথা বোঝা ভারী করে কাঁধ

সমাহিত বিকেলের দিন ঢলে গেল কবে
কবে?
সে-হিসেব রাখিনি তো
হঠাৎ জানালায় চোখ গেলে
বুক খাঁ-খাঁ করে ওঠে
ফেরিওয়ালা ডেকে গেলে মনে পড়ে
কার কার ডাক ফাঁকি পড়ে গেল

বন্ধুরা ভালো আছে
আত্মীয়পরিজনও
নিশ্চয়ই
অবশ্য ডিসেম্বর হতে হতে কত স্বজন ঝরে গেছে
সে-হিসেব রাখেনি দশ-পাঁচের খাতা
আজ বটতলা একা
টর্চ ফেলে দেখি
শেষ পত্র যাই যাই করে

তবু
টেবিলে পেনটা পড়ে আছে
আলমারি ঝাড়লে
এখনো দু-তিনটে শখের জামা পাবে
সূদুর কাপ্তানির অবশেষ—
দু-সাইজ ছোটো জিন্স
এইভাবে জঞ্জাল পোষে কেউ?
ফেলে দাও, ফেলে দাও
সব দিক শান্তিকল্যাণ হোক

মারিজাতক পঙক্তিগুচ্ছ

এ অদ্ভুত অন্ধকারে একলা আলো দিচ্ছে চিতা
*
জলে যার লাশ ভেসে গেল তার ছিল সাঁতারে অনীহা
*
শ্বাসের মূল্য মিটিয়ে দিতে ভাতের ভাঁড়ারে চাবি
*
মুখোশ পরা নিষ্কলঙ্ক হল্
*
যে-কোনো স্পর্শ স্যানিটাইজ করে নাও
*
সন্তান মরে গেলেও বিড়ম্বনা বাড়ে

লিপ টু লিপ

শ্বাস না পেলে নীল লাগে
দৃষ্টি বিন্দু হয় নক্ষত্রের মতন
ধ্রুবতারা ফিশফিশ করেছে শ্বাপদের কানে
এইবারে সভ্যতা ঝরে যাবে প্লাস্টার হয়ে
স্যান্ড-পেপার ঘষা হাপরের ডাকে
ক্ষুৎপিপাসাও দূরে যায় (দারাপুত্র এ-ক্ষেত্রে অলীক)

একটু হাওয়া ছাড়ো প্লিস
অন্তত এই অজুহাতে, হয়ে যাক লিপ-টু-লিপ

দু-হাত রেখেছি মাটিতে

বিষ শুষে নিই কানা চোখে
বিশ-আঙুল শিকড় বুনি
চতুষ্পদ কুকুরের ধারা
জ্বর পেটে চাঁদ খেয়ে নিই

চব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়

হাড়মাস খেয়েছিস শালী
আমিও ছিঁড়েছি নাভিডোর
কে কাকে খেয়েছি আগে পিছে
মাংসের গুণ মাপা হোক

পোয়াতী ঘাসের দুধ

পোয়াতী ঘাসের বুক বেয়ে
শিশিরের দুধ ঝরে পড়ে
শুষে নিলে মা-হারা যুবক
প্রেমিকার নাভিমূল পড়ে

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

সায়ন

নাকছাবি ভাঙা দেশ!


জানালা খোলো, আলোপাহাড়ের দেশ
প্রিয়ার কাজল, জেলের মধ্যে নাতাশার হাত মুঠো
বিদুৎ লিখি অন্ধগলির ভাষায়

নিষ্ঠুর চাঁদ, পাখিনীর ঈর্ষা বিলাপ
আয়না দেখে গণতন্ত্রের হাড়-মাস

মেঘ আসে, চন্দনকাঠের আগুন
দেওয়ালে কি আছে জানো? বিরাট ছোবল—

যত রাত গেছে কেটে
কাচের ছায়া
মনের উপর ছেয়ে গেল
নাকছাবি ভাঙা দেশ


কে যাও ওই পথে, আশ্রয়
পাথর এঁকে দেয় তোমার রক্তাক্ত নূপুর
কত ঢেউ ঝাপিয়ে পড়ে ছাদের মাটি
গাছের হাতে বাঁধা মধুবনী আঁচল

হরিণের জেগে থাকা চোখে নামে বৃষ্টিভরা মেঘ
ওই দেখো— কী বিরাট চুলে ফাঁস লেগেছে সন্ধ্যামালতি চাঁদ,
পীতাভ নদীঘর, জলের নীচে জল
এই গর্ভ বৃন্দাবন, আমাদের ভারতবর্ষ প্রাণ
বাধ ভাঙনের আলিঙ্গন

সমুদ্রের ওপারে সুন্দরী গাছের ঘর
নগরের আকাশ গলা চাঁদ নিয়ে পুঁথিপাঠ
পাথরে বসে স্পর্শ করে অক্সিজেনহীন দেশ


মাজারের ভিতর লুকিয়ে আছে মানুষ,
ইট পাথরের দেহ। সাঁইজি তার সাধনানীলের গান ধরতেই, উঁচুতে লাফ দিল পিতার কলজের আগুন।

তমালতলা আর বেনুবনছায়ার জলে— লালনের কোলজে রঙের ছায়া। জ্যোৎস্নার আলোয় ডুবে যাচ্ছে অলীক মানুষের সংসার!


আমরা ফিরে এলাম বধ্যভূমির আখরায়
স্বচ্ছন্দ মৃত্যুছাপ, প্রাচীন ভূমিতাপ গন্ধ।
পাঁজরের ইতিহাস লিখতে লিখতে আঁকড়ে ধরি ভগবানের কবজি… বরাহমিহিরের খাতা
মেঘের কাছে দেখি— বৃষ্টির ভেজা চুলের আকাশ

এখন সকাল হয় শিশির আর সায়ানাইড বিন্দুর মাঝে।


ঝড়ে পোড়া হাজার চাষির চিৎকার, থালায় কান্নার গ্রাস
বন্ধ দরজায় ওলট-পালট হয়ে যায়
যাকে তুমি কোনো একদিন
ছায়ামানুষের দেহ ভেবে চেয়েছিলে ভোট।

লোকটা দৌড়ে এল বহু দেশ, নগর, গ্রাম, খাপ পঞ্চায়েত— তবুও ওর কোনো দেশ নেই

এখন শুধু হাত ভরা করোটির বোঝা,
ডান হাতে স্ট্র্যাপ ছেঁড়া চটি।

 

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়

স্বজনকথা


গাছবৃত্তে লেখা পদ্য। গাছশীর্ষে ন্যুব্জ মাতা-পিতা
উঠে দেখছে কামপ্রবাহ; কালো আকাশ উন্মুক্ত স্তন।
“আয়” ডাকছে, “আয়” ডাকছে, আমি সে-স্তন মুঠোয় রাখি যেই
ঝরে পড়ল ন্যুব্জ মাতা, ন্যুব্জ পিতা— হলুদ বিদ্যুৎ।
শ্মশানবঁধূ কাঠ সাজাল, কাঠ জ্বালাল, গাছবৃত্তে লেখা
পারিবারিক হাড় জ্বলছে; চিতাকাষ্ঠে ন্যুব্জ মাতা-পিতা
কুঁকড়ে গেল; অন্ধকার; আলো ফুটলে ন্যাড়ামুণ্ডি হই।
মুঠো শক্ত, স্তনমাংস আদরে নয় ব্যথায় কাতরায়।

ন্যুব্জ মাতা, ন্যুব্জ পিতা একসঙ্গে বৈতরণী পার।
আমি দেখছি প্রতি পর্বে পাতাবর্ণ বাদামি হয়ে যায়।
“আয়” ডাকছে, “আয়” ডাকছে গাছবৃত্তে জন্ম নেওয়া জরা।
তর্পণের সময়কাল। মায়াকুণ্ডে চংক্রমণ করি।
গাছবৃত্তে লেখা পদ্য শিকড় ভেঙে আছড়ে পড়ে মাঠে।
ন্যুব্জ মাতাপিতার মুখ আকাশস্তন চুষছে সারারাত…


অন্ধকারে নেমে আসছি। স্বপ্নে কার খুকির চিৎকার
খুনদৃশ্য দেখার মতো তীক্ষ্ণ ভয়ে হঠাৎ জ্বলে ওঠে?
হত্যা এত কঠিন, তবু কোথাও কোনো প্রশিক্ষণ নেই।
অন্ধকারে নেমে আসছি। গঙ্গাজল, আমায় ত্রাণ দাও।
এখন যাকে অনাত্মীয় ভেবেছি, তার আত্মীয়-শরীর
গলা বাড়ায়। ছাগের গলা। খাঁড়ার মতো আমার স্পৃহা নামে।
অন্ধকারে মাথা গড়ায়। স্বপ্নে কার খুকির চিৎকার
খুনশব্দ শোনার মতো মুগ্ধ শোকে হঠাৎ জ্বলে ওঠে?

এখন শোক অনপনেয়। অথচ খুকি বোধের মতো চুপ।
কার যে মেয়ে! আমার? তবে স্বপ্নে কেন মুখোশ-পরিহিতা?
দেখেছে তার বিশাল সখা হত্যা শেষে শিশুর মতো কাঁদে।
অন্ধকারে নেমে আসছি। স্বপ্নে তার মাটির মতো হাত
আমার হাত স্পর্শ করে; রক্ত ছুঁয়ে মোমের মতো জ্বলে।
অনেক হল! গঙ্গাজল, বাপ-বেটিকে এবার ত্রাণ দাও।


এই আমার ঘর-দুয়ার। হিংস্র থেকে হিংস্রতর রোজ।
পশুর মতো দু-তিনজন। ক্ষুব্ধ খুব। হাঁড়ির জল ফোটে।
ফুটতে থাকি সপরিবার। ধোঁয়ার মতো অলীক, নিরাকার
এই আমার ঘর-দুয়ার শূন্যে উঠে শূন্য পেড়ে আনে।
বৃত্তে বসি। শূন্য খাই। চিন্তামণি বঁটিতে আঁশ ঘষে।
হিংস্র থেকে হিংস্রতর। ভাতের থালা বিষের চোটে নীল।
সে-বিষ শেষে কথামৃত। শরীর থেকে মায়া-প্রপঞ্চর
আদিম বীজ বেরিয়ে যায়; ঘর-দুয়ার মৃতের মতো চুপ…

এই আমার দুয়ার-ঘর। মন্দিরের সাপের মতো রোজ
দৈব কোনো লিঙ্গ ভেবে আমার আয়ু জড়িয়ে জেগে থাকে।
চিন্তামণি বঁটি জাগায়। আমার আঁশ সিঁটিয়ে যায় ভয়ে।
মাছের মতো দু-তিনজন। বেকুব খুব। কড়ায় তেল ফোটে।
আঁশের মায়া তলিয়ে গেছে। সবার দেহ নুন-হলুদে মাখা।
এই আমার ঘর-দুয়ার। চিন্তামণি, জমিয়ে রাঁধো। খাই…


রোগ বিদ্যা। রোগ বন্ধু। উড়ে মরছে আরোগ্যের ছাই।
ঘোর চিনছি। জড় চিনছি। বাস্তবিক জড় কিচ্ছু নেই।
প্রাণবাষ্প ঘিরে ধরছে। দূরে মৃত্যু একা। অপেক্ষায়…
ঘোর কিন্তু যুবতী আয়া। রাত বাড়লে পথ্য কাছে রাখে।
খাদ্য গেল ভিতরে আর তখন থেকে প্রবল বমিভাব।
রোগবন্ধু শিয়রে বসে; কানের পাশে ঠান্ডা মুড়ো নামে—
“এখন থেকে লেখার হাত দাসানুদাস, বশংবদ নয়।”
রোগ বিদ্যা। রোগ বন্ধু। উড়ে যাচ্ছে পঙ্গু স্থিতিকাল।

স্বজন ছিল লিখনকাম। এখন হাত আমার আওতায়
থাকে না আর; পৃষ্ঠা বোঝে রমণগতি বদলে গেছে খুব।
সে স্বৈরিণী, তবুও তার শরীর কাঁপে। গর্ভপথ জড়।
কিন্তু, দ্যাখো, জড় চিনেছি। বাস্তবিক জড় কিচ্ছু নেই।
প্রাণবাষ্প ফিকে হচ্ছে। মরণ কাছে। রভস উবে যায়…
রোগ বিদ্যা। রোগ বন্ধু। ক্রমান্বয়ে আমার মাথা চাটে।


ক্ষণজন্মা আমি একটি সুলক্ষণা মেয়ে পয়দা করে
স্ত্রী-র গর্ভ খুশি করেছি। আঁতুর ম-ম করেছে তার ওমে।
আমার ঘাড়ে তিন-চারটে ফুটোর মতো জন্মদাগ দেখে
গুরু আমায় বলেছিলেন, “গতজন্মে সদ্যোজাত মৃগ
ছিলিস, তোর ঘাড় কামড়ে এক বাঘিনী আরামে খেয়েছিল…”
আমার স্ত্রী বা মেয়ের জ্ঞানে এ-সব কিছু রাখিনি। তবু রাতে
খেলাচ্ছলে মেয়ে আমার ঘাড়ে নরম থাবা বোলায়, বলে—
“এগুলো ছুঁলে ব্যথা লাগছে? এ-দাগগুলো কোথায় পেলে, বাবা?”

স্বপ্নে দেখি মেয়ে আমার সেই বাঘিনী; চক্ষু জ্বেলে ঘোরে।
এই আমায় দেখল। ছুট। ছিটকে যায় অরণ্যের মাটি।
আর্তনাদ। দু-একবার। ঘাড়ের পেশী কামড় মেখে স্থির।
আদরমুখো তিন শাবক কিছুটা খেল… বাকিটা মেয়ে খায়…
“এ-দাগগুলো কোথায় পেলে? এ-গুলো ছুঁলে ব্যথা লাগছে, বাবা?”
ঘুমপুতুল মেয়ের গায়ে খুঁজে মরছি কালো ডোরার শোক…


মন্ত্রখাকী ঘর আমার। চিবিয়ে খায় মারণ-উচাটন।
বশবর্তী রাখতে চাই। কিন্তু ঘর এমন চঞ্চলা,
মধ্যরাতে উলটে দেয় লক্ষ্মীভাঁড়। পয়সা ছড়াছড়ি।
পয়সা যে-ই গড়িয়ে পড়ে, সারা উঠোন প্রবল বেঁকে যায়।
মন্ত্রখাকী ঘর আমার। যাগ-যজ্ঞে নরমুণ্ড ছোঁড়ে।
নরকরোটি অগ্নি ছোঁয়। সত্ত্বগুণ সিঁটিয়ে যায় ভয়ে।
ভয়? না মোহ? চিলেকোঠায় চুল বিছিয়ে দুর্বিপাক বসে।
যজ্ঞাহুতি কিচ্ছু নেই। সমিধ ডোবে মারণী বন্যায়…

শুধুমাত্র একতারার পরাৎপর ধুন জাগালে কেউ,
ঘর-দুয়ার ঘুমায়। সুখ। খোকার মুখে চাঁদের দুধ নামে।
বাপ-পিতেমো যে-শাপ পেয়ে অন্ধপ্রাণ, দৃশ্য থেকে দূর,
সে-শাপ নেভে; দৃশ্যাতীত স্বপ্নঘোরে দৃশ্য হয়ে যায়।
অলপ্পেয়ে ঘর আমার অলখ্ সাঁই দেখার লোভে-লোভে
আমায় ফের বাউল করে ভাসিয়ে দিল ত্রিনদী সঙ্গমে।

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

শানু চৌধুরী

বোধের চিরায়ত দাগ


প্রকোপ থেকে উঠে আসে
ভিক্ষুণীদের প্রাতিমোক্ষ লোকোত্তরবাদ
বেলাশেষের তন্ত্র সংগীত,
আমাদের স্বরচিত গুম্ফায় কোনোদিন আসেনি
ডাকার্ণবের বিধিত অনুক্ষণ।
আমি জানি সাধনার ভিতর ছড়িয়ে থাকে কথা
অথচ বর্ণময়ী মায়ায় ভেদ হল না আমাদের সন্ধ্যাভাষা
তবু প্রকাশ হয়, মুদ্রা ও যন্ত্রের প্রহেলী
যেখানে অভিনিবেশ করেছিল যৌবন যোগিনীর সঞ্চয়।


শাদা শালুর ওপর শান্ত মুদ্রাটি
ছড়িয়ে আছে অর্হৎ-এর অপেক্ষায়
তবু রসায়ন থেকে চুঁইয়ে পড়ে আকাঙ্ক্ষার বস্তুসকল
আনাজ শরীরে।
বোধিচিত্ত ও নিরাত্মা দেবী উন্মত্ত হও, বিহারে যাও
কারণ, আমাদের শবরে জ্ঞান-চৈতন্য বলে কিছু নেই আর
শুধুই মিছিমিছি ফাঁকা হল
মানুষের কঙ্গুরমোচিত জোৎস্নাবাড়ি


শুঁড়িনীর মদ বেচার উপমায়
ভিজেছিল বিবর্ণ চীবরের রশ্মিগুলি
অথচ দেখা হল না ধর্মের দ্রোহিতা দিয়ে
শিষ্যের কপ্পতি!
হে ভিক্ষু কোন ভুলে তুমি শিঙের পাত্রে রেখেছিল নুন?
যেখানে সঞ্চয়ের অপরাধ কট্টর হতে হতে
জন্ম দিল, সিঙ্গিলোণ কপ্পোর ধারা?


নিসীদন, তোমার কুয়াশায় কাটে
ঘনঘোর তেনজিন।
অথচ উপোষথ-শালায় আজ্ঞা ভেঙে গেলে
জেগে ওঠে চৈতন্য রত্নের কাহন।
আমি বলি শিথিল হও।
সোনারূপা ছুঁয়ে দেখে নাও দশবুত্থর
ধর্মবিরুদ্ধতা!


পাটা সিন্দুকের ভিতর ছিল গণিতের ভুল
যেখানে ভিক্ষুদের দানশীল ফোঁটা গুণে নেয় বছরের হিসেব
জেনে রাখো, পাটলিপুত্রের সংগীত
স্বীকার করেনি মহাসাংঘিকের দল
তবু বিনয় বলতে গেলে কর্মকে মানতে হয়।

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

শুভম চক্রবর্তী

নিষ্ঠুরতা এ-প্রকার দোলে

নিষ্ঠুর পেরেকে ঝুলছে চায়ের সসপ্যান। হাওয়ায় হাওয়ায় দুলছে চায়ের সসপ্যান। নিষ্ঠুরতা এ-প্রকার দোলে। ঝড় ও বাদলে তার গুপ্তছাপ লেগে থাকে মোহরের গায়ে। কিন্তু সে মোহর কার এই প্রশ্ন কেউ-ই করে না। জিজ্ঞাসাশূন্য এক স্থিতকল্প অবস্থান নেয়, বিড়ি টানে, ঠুনকো কপর্দক বাতাসে উড়িয়ে, ডাকে— আয় তোরা আমার পুরোনো। আজ রাতে নাকাবন্দি খেলি। আজ রাতে ঘুমের তুলোট খাঁজে মুখ দিয়ে ওম নিতে নিতে পরম্পরাচ্যুত এক মাংসের খাটালে গিয়ে বসি।গবাদিপশুর খোপে নিজেদের ঢেলে ঢেলে দেখি। জাবর ও চঞ্চুর দাগ কঠিন মোহরে লাগে কি-না।

চাঁদ ক্ষণিকের পালা

আকাশে যায় চাঁদের নাও। জলেও যায় চাঁদের নাও। এই দু-কূল টানাটানির মজঝঝিমে কে ডিঙা বাও। মজঝঝিমের তেমন রাত অন্ধকার আলোর সার। আলোর সার সারাৎসার তেমন রাত অন্ধকার। আকাশে যায় চাঁদের নাও। আঁকা হাতের বাঁকা পথে। জলেও যায় চাঁদের নাও। পাল টাঙাও মনোরথে। তারপরের হদিশ আর। নেই কোথাও নেই কোথাও। তারপরের সব সাঁকোয়। ঘোড়া ছোটায় অন্ধকার।

কী এক নিপুণ কাম

কী এক নিপুণ কাম আজ আমায় জড়িয়ে ধরেছে। তোমাকেও ধরেনি কী কামবশায়িতা? আগুনের পাশ দিয়ে শাড়ির আঁচল তুলে ভাঁজ মেলে দূরে চলে যাওয়া। বিলক্ষণ ফিরে আসা ততোধিক তড়িৎ গতিতে। তারা চোখ গোল করে। বাতাসে শূন্যের গূঢ় মঞ্জরী পাকায়। থোম্বা চোখে চেয়ে থাকে থুতনি নেড়ে দেওয়া কোনো বাঘ। আমি সাদাসিধা লোক। তবু কী এক নিপুণ কাম আজ আমায় জড়িয়ে ধরেছে। পাকিয়ে পাকিয়ে একটি যজ্ঞডুমুরের গাছে তুলে দিয়ে মঁই টেনে নিল। আমি কি সটান জোরে ঝাঁপ মারব তীব্র অন্ধকারে।

ডায়েরির পাতা

আমার পূর্বজন্মের মায়ের সঙ্গে আমার এই জন্মের মায়ের দেখা হয় যদি, সে দেখা কি বলো শুধু কল্পনার হবে। মেঘঢাকা নরম বিকেলে মাঠ থেকে ফিরে আমি গাছতলে কলহতে-রত আমার দু-জন মাকে দেখতে পাব পথের নিয়মে। আমার পূর্বজন্মের প্রেমিকার সঙ্গে আমার এই জন্মের প্রেমিকার দেখা হয় যদি, সে-দেখা কি শুধুমাত্র কল্পনার হবে। রোদে পোড়া নিভাঁজ বিকেলে পথশ্রান্ত আমি যদি ঘরে ফিরে আসি। কে দেবে এগিয়ে কাছে পেতলের ঘটি ভরা সুশীতল জল। কার মুখ দেখে আমি সেই পোড়া দাহর ভেতরে, পত্রালি বিছিয়ে শোবো, শরৎ ভোরের প্রত্যাশায়। স্বপ্নের ভেতর দিয়ে জন্মগুলি, জন্মান্তরগুলি কৃষ্ণচূড়ায় ভরা এক একটা স্টেশন ফেলে দূরে চলে যায়।

রক্ত ক্লট বেঁধে ছিল

তোমার নিতম্ব খুবই ভালোবাসি। এত নরম আঁধার। একবার দেখিয়েছিলে ছড়ে যাওয়া নিতম্বে যখন রক্ত ক্লট বেঁধে ছিল, সে-দেখাকে আজও ভুলিনি। তবে কি নিতম্ব নয়, নরম আঁধারে আমি আমার দেখাকে শুধু দেখতে চেয়েছি। বনের ভেতরে দিয়ে চলে যাওয়া পথটির মতো। কামনার সমাপ্তি নেই, একেবারে নরম, মাসুম। চোখে জল৷ তোমার নিতম্ব খুবই ভালোবাসি এবং বাসি না। মাঝেমধ্যে নদীর অনেক কাছে চলে যাই রোমশ বিকেলে, যত কাছে গেলে আর ফিরবার উপায় থাকে না।

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

মনোজ দে

অদ্ভুত বাড়ি


হয়তো মনে মনে খুব খুশি তুমি
এই যে এত ঝামেলা, ছোটাছুটি
সবই ছেড়ে যাওয়ার বাহানা, এতদিনে নিশ্চয় বুঝেছ

তবে কেন, গভীর রাত্রেও চুপ থাকো
অভিমান?
চলে গেলে বুঝি ভালো লাগবে?

কতদিন এভাবে পাথর হয়ে থাকবে

বলো, মুখ ফুটে বলো, “মনিব, ছেড়ে যেয়ো না”


সত্যি বলতে, বড্ড বেমানান তুমি
কাচের জানালা, ফল্স সিলিং, মার্বেল
কিচ্ছু নেই। শুধু ঝরে পড়ে চুন-সুরকি, ধুলো

ধোঁয়ার ভেতর
লাল হয়ে যাওয়া চোখ সামলে নিয়ে দেখি
উনুনের পাশে বসে হাতপাখার বাতাসে
জেঠিমা শেখায় আমাদের, গৃহস্থালী, ধোঁয়ার উপকারিতা


“বাড়িতে সন্ন্যাসী ঠাকুর আছেন”
তাই মুরগি মাংস হত না বাড়িতে
এই বিশ্বাস খাওয়ার উপর খানিক
বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল

ধীরে ধীরে যুক্তি এল
ঈশ্বর এমনই আলগা, তর্ক এগোয়নি তেমন
কেবল দেখেছিলাম,
সন্ন্যাসীর অনুপস্থিতি বাড়িকে দু-টুকরো করেছিল


একটা গ্যারেজঘর। মাচার বদলে ডিমান্ড খাট
বইগুলো সব পাশাপাশি থাকবে
ইচ্ছেমতো তাক থেকে পেড়ে নেওয়া

খোঁজার সময়টুকু সাশ্রয়। ক্যান্ডির জারে আর
পিঁপড়ে লাগবে না অবশিষ্ট চিনির জন্য
একটা একক রান্নাঘর

এ-সব দীর্ঘদিনের ইচ্ছে বলতে পারো
একটা সামান্য ইনভার্টার। শুধু আলো নিভে গেলে
আমাদের আগামী প্রজন্ম সিঁড়ির তলায় লুকোতে পারবে না

 

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

কৌশিক দাস

সংক্রমণ

মধ্যদুপুরে গলির ভেতরে একটা বাড়ির দিকে
চোখ পড়ল—

পুরোনো কাঠের ফ্রেম, জানালায় নীল রঙের পর্দা ঝুলছে

হাওয়ার সেপ্টিপিন তাকে নাড়িয়ে দিল?

ঘেমে-নেয়ে ওঠা ভিজে চুলের মতো
মনে হল সময়টা। কে জানে ওই নীল পর্দা থেকেই বাতাসে আরও একটা নীল ছড়িয়ে পড়বে কিনা!

বাজার

রবারের মতো একটা চিন্তা
কতদূর টানা যেতে পারে

বেশি টানলে সে ছিঁড়ে যাবে; অথচ ঘরে
একটাই রাবার।

ছিঁড়ে গেলে আবার কিনে নিয়ে এসো

এ-সব ভাবলে আমার ঘাম হয়;
কেন-না কেনার জন্য আবার সেই বাজারে যেতে হবে।

আমি আর কুকুর

আমি একটা কুকুরকে নিয়ে কবিতা
লিখতেই পারি যেমনটা লেখে এখনকার
কবিরা কুকুরের লেজ নিয়ে

কিন্তু আমি লিখছি না তার কারণ ওই
কুকুরটা নিজেই

চার রাস্তার মোড়ে রোদের মধ্যে সে শুয়ে
আছে। গায়ের অনেকটা জুড়ে পচন ছড়িয়েছে— এই কথাগুলো নিয়েই তো আস্ত একটা কবিতা লেখা যায়

কিন্তু আমি লিখছি না কারণ আমার যেন
মনে হচ্ছে করুণ চোখ নিয়ে আমিই চার রাস্তার মোড়ে পচতে থাকা শরীরটা নিয়ে কুকুরের দিকে তাকিয়ে আছি।

নিদান

কাটা শসার উপরে বিটনুনের ছিঁটে পড়লে
কেমন গন্ধ ওঠে

এই গন্ধ ধরেই আমাদের আনাগোনা;
শসাখেতের পাশে চালকের ভ্যান আসার কথা
সন্তর্পণে, সেলাই করা রাতে

আল পাশ ফেরে, হাই তোলে, এসব চালান সে তার প্রপিতামহদের থেকে জেনেছে,তাই তার নাভি-ঘাস বিচলিত হয় না

কিন্তু কে বিচলিত হয়? বিচলিত একটি শব্দ;
তার ঠিক পাশেই গ্রামের হাট বসে, পঞ্চায়েত বলেছে, নিদান দিয়েছে : গ্রামের বাইরে যেন কিছু না যায়।

নিউটন

গুলির কোনো ধর্ম নেই,
সে চোখ বুজে মালিকের ট্রিগার শোনে

মালিকের কোনো ধর্ম নেই,
সে শোনে উপরওয়ালার কথা

উপরওয়ালারও কোনো ধর্ম নেই
সে শুধু বোঝে চারপায়ার ওই চেয়ারটাকে

চেয়ারের অবশ্য একটি ধর্ম আছে,
সে কেবল প্রতিটি বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের
দিকে আকর্ষণ করে।

মৌসুমি ফলের বাজার

কীভাবে যেতে পারি তোমার কাছে সেই নিয়েই আজ তেরো দিনের ব্যক্তিগত সফর।

তেরো দিন, তেরো সপ্তাহ নাকি তেরোটা বছর;
তেরো লক্ষ কোটিও হতে পারে

এ-সব সংখ্যার গায়ে হাওয়া দিয়ে চলতে চলতে জীবাশ্ম পায়ে এসে পড়ে, জানি এগুলো তোমার দিকচিহ্ন অথবা ঠিকানা হবে না

তাহলে কীভাবে যেতে পারি তোমার কাছে?
তোমার মায়ের বয়স বেড়েছে, তাকে মৌসুমি ফল এনে দেবার কথা ছিল, জামরুল বনের ছায়ায় নিয়ে গিয়ে পুরোনো কথোপকথন;
কীভাবে একটা ওষুধ দু-টুকরো করে ভেঙে খেতে হয়

সে-সব হল কই! বনগাঁর হাটে ফলওয়ালাদের সঙ্গে তোমার ঠিকানা নিয়ে ঝগড়াঝাটি হয়

ওরা আমায় হরিদ্রা বর্ণের খোসা দিল, বলল হাটেবাজারে ফলের ব্যাবসা খুব একটা ভালো নয়।

 

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

জয়শ্রী ঘোষ

অসুখ


তবু কাঁটা দেয় গায়ে। শীত, সে তো বহুদূরে! ধুলো নেই, মাটি নেই, স্পর্শ নেই, ভেসে যায় তরল ধারা। মেঘ ছুঁয়ে সবুজলতা, স্মৃতি ফিরে এলে পাখি ডানা মেলে। লাল পালক, হলদে পালক ঝরে পড়ে নদীর কিনারায়। জলটুকু কথা বলে, এ-কবিতা কাকে দেব উপহার! তরঙ্গ খেলে যায় পাকস্থলীর জটায়। রামধনু রঙে বিষাদ মাখানো, জড়িয়েছে দ্বীপের গায়ে—


একটা আস্ত শহর জলে থৈথৈ, টাচ করেছি যেই লিফটে নিমেষে এগারো তলা। চাবি খুলি এ কি অবস্থা! ঘরের ভিতরে ঘর ডুবে আছে, বৃষ্টি ভিতরেও। শাওয়ারের জল খোলা, শব্দ রিমঝিম! দু-কান দু-হাতে চেপে ধরি…! পশ্চিমের জানালায় শুকনো গোলাপ কুঁড়ি, স্ট্রবেরি টুকরো করা। ওদিকে গোছানো ব্যাগে তোয়ালে জড়ানো বোতল, ভিজে গেছে সব কিন্তু সবটাই ঠিকঠাক পরিপাটি। মুখোমুখি ঘরে রোদ্দুর, বেবিফ্রক দড়িতে ঝুলছে বারান্দায়। তবুও এ-বাড়িতে বৃষ্টিপাত! কে যেন বলছে, ভিজে গেলে?


নিশ্বাস নিইনি বহুদিন, হাওয়া ভরে রেখেছি কাচের বোতলে, উলটেপালটে দেখে সাজিয়ে রাখি সামনের টেবিলে। বোঝাই হাওয়ার প্রকার ভেদ… দূষিত হাওয়া, বিশুদ্ধ হাওয়া, এয়ার পিউরিফায়ার সিস্টেম। আমি গাছ নিয়ে পড়াশোনা করি রীতিমতো, হাওয়া চুরি করি আর বোতলে ভরি তারপর সাজাই টেবিলে সারিসারি। হঠাৎ আহ্লাদে অজান্তে ঘাড়ের আঁচিলে হাত চলে যায়, আমি খেলি আনমনে। বোতলে নিশ্বাস চিৎকার করে বলে, সাতজন্ম হয় না সাতসমুদ্র, তুমি মিথ্যাবাদী, তুমি কিচ্ছু জানো না


বাতাসে ফুলের রেণু, তারা কথা বলে। আকাশে ঘুড়ি, তারাও কথা বলে। ঘূর্ণি হাওয়ায় শরীরে ন্যুডিটি ওড়ে। এতদিন যেখানে ধারাপাত লেখা ছিল, সেখানে মেঘ ঢোকে। ঘুড়ি যত ওপরে ওঠে, ততই গভীরে যায়। ঘনীভূত হতে হতে স্নান হল চোখের। মস্তিষ্ক নিশ্বাস নেবে না বললে মেঘেরা ঘিরে ধরে। বাতাস ভরে দেয় নীল বেলুনে, তবুও বাঁশি বাজল না আর


ছিঁড়ে যায় ক্রিয়াপদ, চেতনার ঘোর বরষা। শুকনো গলা, পাশে জল রাখা আছে গ্লাসে। গোপন অঙ্গে স্পর্শেরা খেলেছে! আমি স্নান দিই পরতে পরতে। প্রশ্নের বোঝা এত পিঠ ঝুঁকে গেছে, সোহাগী দুপুর তবু ঘুম নেই চোখে তৃষ্ণা। বুকময় জমে থাকা বৃষ্টি কোন উঠোনে দেবে ধরা?


সাঁকোর দু-পাশে মাছেরা খেলা করে। আঁশটে সাঁকো মাছরাঙা খুঁটেখুঁটে খায়। এ-শতকের পাখিরা জন্ম ছিঁড়ে জড়ো করে গাছের কোটরে। দীর্ঘ সাঁকোটি এক টুকরো আলো চায়, কোটর ছুঁয়ে দেয় সূর্য। বৃদ্ধ সাঁকো মাঝে মাঝে তাপ নেয়, কতটা সরল হলে চাইতে পারে! কঙ্কাল ফেলা আছে নদীর এপারে ওপার, নতুন প্রেমিকেরা শ্বাস ফেলে দেয় পথের ওপরে। কারো রয়ে গেছে চুম্বনের ছোঁয়া। প্রবীণ প্রেমিক ফেলে যায় পুরোনো কয়েন। সাঁকোরও কান্না আছে! নদী টলমল—


ব্যাধির জমাট রক্ত দু-হাতে, লাল রঙে রাঙিয়েছে পোশাক। হেমন্তের পাখিরা দল বাঁধে আকাশে, মেঘ উড়িয়ে নিয়ে যায় কোথায় কে জানে! বৃষ্টির নৃত্য সর্বনাশা, নূপুরের শব্দ চরম। যুদ্ধ ভেঙে চুরমার! ছাতা হাতে এসেছে চাঁদ, সাজিয়ে নিই খেলার ঘুঁটি। স্বপ্নগুলো মুঠোয় ভরে পালঙ্ক ভেবে নিই। যত বড়ো পালঙ্ক ততটাই খিদে, এসো ভাগ করে খাই। নীরবতা খানখান, একটু নস্টালজিক হও মাঝে +মাঝে। ব্যাকরণে চোখ রেখে দেখি রোদ কমে আসে, কালো সর্বনাম অন্ধকার ঢেলেছে, আকাশে একটা-দুটো তারা মিটিমিটি হাসে, যাবতীয় কথায় আলোর প্রলেপ… এত অসুখ এত ঔষধ তবুও ফেটে পড়ছে কুসুম—

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

ফিরোজ শাহ

ডাম্পিং স্টেশন

ডাম্পিং স্টেশনে

জমে আছে
রংবেরঙের কথার স্তুপ

পঁচাগলা থেকে
বের হচ্ছে লাল আন্ডারওয়্যার ও কালো ব্রা-র

গোপন কথোপকথন।

গমখেত

দু-টি ডিম

একটি ভাঙলে ছড়িয়ে পড়ে উত্তাপ

অন্যটি
জোছনার বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখে গমখেত।

চেকশার্ট

চেকশার্ট পরলে

ঝরনা নামে শরীরে
খালের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্রে

বোতাম ছিঁড়ে

চেকগুলো নেমে যাচ্ছে জলে।

লাইটার

একটা গ্যাসের খনি

পকেটে
নিয়ে হাঁটে মানুষ

আগুনের কান্নায়
রাত হলে

কেঁপে ওঠে লাইটার।

জাক্কুম

পেসার কুকারে

সেদ্ধ হচ্ছে এক কেজি বেদনা
আদা পেয়াজ রসুন জিরা মিশিয়ে

রান্না হচ্ছে

আমার পরজন্মের সুস্বাদু খাবার।

 

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

তনুজ

শবখুন


দীর্ঘ রোজ কিছু (কিছুই) না লেখার পর
আজ, হিজরি সন ১৪৪২-এর গুমশুদা গর্ভ
মহিনা শাওয়ালের উনিশতম রোশনদানের
শ্রেষ্ঠ নূরে আলোকিত সমস্ত জিজ্ঞাসার উদ্দেশ্যে
আল-ফতিহা পড়ার প্রাকে
ইত্তেফাকন ফুনুন-ই-শের মীর আব্দুল হাইয়ের
স্বচ্ছল রেকাবি থেকে একটি স্পষ্ট আখরোট
মুখে ইজহার করতেই

আমার অলিখিত স্বপ্নের দাঁত ভেঙে গেল

এই দেখুন, হাঁ।


কেমন বন্ধু চাও তুমি?

যেমন মনস্থ করেন জালালউদ্দিন রুমি
যখন কাঁদেন তিনি, তবরিজে শমস্-এ সাত রোদন।

এবং কীভাবে খুঁজে পেলে তাকে
ফহেশি মোরগের ঝুঁটি হবে লাল,
বাক্যভুক ছায়া
না-শব্দে হেঁটে চলে যাবে?

এইসব উত্তরে মিঞা, বিষয়ের চোখ পড়ে থাকে।

উন্মার্গসংগীত মেড ইজি


ঐশ্বর্যরহিত
বাজারের থলেতে
একটা মাছের মাথা

প্রতি কিলোমিটার
অন্তর

ঝিমঝিম করছে

তবু আমার হাত সরছে না
গোপনতায়, রোদে

আমি এই মাছের মাথা অর্জন করে খাব

আমি এই মাথার মাছ তর্পণ করে খাব।


জঙ্গলে বেড়াতে গেলে
এমন বৃষ্টির দিনে কোনো

এমনই বৃষ্টির দিনে
কোনো জঙ্গলে বেড়াতে গেলে

সহসা এমনই দুর্বল চাপে পায়ের,
জল ও অতসী টপকালো ব্যাঙ!

প্রায় তরলে সরল করা জল
প্রায় ঘচর-ঘোচর করা
অতসী টপকে গেল ব্যাঙ!

ঘাসের ছিটকিনি খুলে বসে আছ?
এখনও ঘাসের ছিটকিনি বসে আছো খুলে?


বিষণ্ণতার একমাত্র ভাষা আরবি শিখতে চাইলে
নওরোজ মাদ্রাসার পাক মৌলবি জিগাইলেন,
গ্রাম পঞ্চায়েতের তৎকালীন লালপতাকা রঙের চেয়ার জিগাইলেন,
ডুবগাঙের তস্কর জল পায়ে জমিয়ে রাখার বেশরা পদ্ধতি জানা
আশ্চর্য জরায়ুর মালকিন মেহেরুন্নেসা জিগাইলেন,
গাঁজাখেতের সুরঙ্গ আলো করা আশিক ওরাংয়ের
নতুন সাইকেলের ঘণ্টিটি জিগাইলেন,
ভেজা কারেন্টের তারে লটকানো
‘চড়ুই না? হ, হ, চড়ুই’-চেহারার
লোকাল কাউন্সিলার জিগাইলেন

ডাক্তার কি মুসল্লি হইবা?

এবং এই অনধিক প্রশ্নের উত্তরে
না মৌলবি সাহেব, না, ও গ্রাম পঞ্চায়েতের লালপতাকা
রঙের চেয়ার, না, না গো মেহেরুন্নেসা,
না রে ভাই আলো খাওয়া আশিক ওরাং, না,
শ্রীশ্রী ‘চড়ুই না? হ, হ, চড়ুই’ চেহারার লোকাল কাউন্সিলার,
(আপ্নেরেও কইতাসি) না, একে একে সমস্ত অস্তিকে
নিজের পূর্ণনাস্তি দিয়ে ভাগ করার পর
একদিন এক সীমান্তঘেঁষা ডাক্তার

দিনের হালাল হইতে হইতে রাতের ঝটকা হইয়া গেলেন।


যদি গ্যেটের পশ্চিম-উত্তর দিওয়ান
পড়া থাকলে শতাংশের এক
হাফেজ শোনা হয়ে যায়

তবে আমার লেখা পড়েও কেউ
কল্পনাপ্রবণ হতে পারে

ভাবতেই সকালের নিঃসঙ্গ মেদুরতা
পাট ভাঙল রাতের

কিন্তু এত এত অতীত,
এত এত ভবিষ্যতের ভিড়ে
আমাকে সে কোথায় খুঁজে পাবে?

বস্তুত, এত বেশি খরচ না হওয়া অতীত ও
এত বেশি জমতে থাকা ভবিষ্যৎ যে
আমার অনির্দিষ্ট পাঠকের সুবিধের জন্য
ধরে নিচ্ছি
x হচ্ছে সমগ্র অতীত
এবং y কক্ষে
নির্বাচিত প্রবণতার মতো বেজে চলেছে
ভবিষ্যৎ, বারোটা দুই,
বারোটা এক, বারোটা, আমার লেখার সময়।

অতএব পাঠকের কল্পনা, সমগ্র অতীত ও
নির্বাচিত ভবিষ্যতের ফুটেজ খেয়ে
লেখা হল তনুজের আর একটি কবিতা।

বস্তুত, আরও একটি বাংলা কবিতা লেখা হয়ে গেল

তালিয়াঁ!


মাটির দুটো সন্ত্রস্ত হাত

যদি ধুয়েও যায়
মুছেও যায়
মিশেও যায়
মাটির দুটো পরিযায়ী স্তনে

ইত্যবসরে

অনল হক
অনল হক

বলতে
বলতে

যদি-বা ক্লান্তি চলে আসে

তবুও
ভুলে যেয়ো না

এই জনমের
মুখ হবে
মুখোশমাত্র।